অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবারের মতো জিতেছে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে ৫ ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচে ২৩ রানের দারুণ জয় পেয়েছে টাইগাররা। বোলারদের বোলিং তোপে টিকতে পারেনি অজিরা। মাত্র ১৩১ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ১০৮ রানে গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। পরবর্তীতে জন্য বাধা হয়ে ছিলেন মার্শ। নিজের শেষ ওভারে এসে তাঁকে ফেরালেন নাসুম আহমেদ। ঝুলিয়ে দেওয়া বলটায় স্লগ সুইপ করতে গিয়েছিলেন মার্শ, তবে হয়েছেন টপ-এজড।
স্কয়ার লেগ থেকে বেশ খানিকটা ছুটে এসে দারুণ ক্যাচ নিয়েছেন শরীফুল। নাসুম পেয়েছেন চতুর্থ উইকেট, অস্ট্রেলিয়া হারিয়েছে ষষ্ঠটি। আর অর্ধশত রান পূরণের আক্ষেপ নিয়ে সাজঘরে ফিরেছেন মিচেল মার্শ। সপ্তম উইকেট তুলে নেন মোস্তাফিজুর রহমান। মোস্তাফিজকে যেন শেষের জন্যই জমিয়ে রেখেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। মোস্তাফিজ এলেন, কাটারে ধোঁকা দিলেন টার্নারকে। তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলেছেন টার্নার, অস্ট্রেলিয়া ডুবেছে আরেকটু। অস্ট্রেলিয়ার ১০২ রানে অষ্টম উইকেট তুলে নেন শরীফুল।
দুই ওভারে পরপর দুই উইকেটের পতন অজিদের। উইকেট শিকার করেছেন নাসুম আহমেদ ও মেহেদী হাসান। প্রথম ওভারে অ্যালেক্স ক্যারিকে ফেরানোর পর দ্বিতীয় ওভারে নাসুমের বলে স্ট্যাম্পিং হয়েছেন জশ ফিলিপ। তৃতীয় ওভারে এসে আরেকটি উইকেট তুলে নেন সাকিব। তিনি সাজঘরে ফিরিয়েছেন মাত্র এক রান করা ময়শিস হ্যানরিক্সকে। ১২ রানেই তিন উইকেট হারিয়েছে অজিরা। নিজের দ্বিতীয় উইকেটের দেখা পায় নাসুম। এরপর অস্ট্রেলিয়ার পঞ্চম উইকেটের পতন ঘটে। নাসুমের বল ঠেকিয়ে অপ্রত্যাশিতভাবে নিজের পায়ে স্ট্যাম্প ভেঙে সাজঘরে ফেরেন অ্যাস্টন অ্যাগার। নাসুমের চতুর্থ উইকেটের শিকার হন মিচেল মার্শ। এতে অস্ট্রেলিয়া হারায় ষষ্ঠ উইকেট।
এর আগে ৪ টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের সেরা বোলিং ছিল সাকিবের। ২০১৬ সালে বেঙ্গালুরুতে ২৭ রানে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব। আজ সে রেকর্ড ভাঙলেন নাসুম। ১৯ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন এই বাঁহাতি স্পিনার। সব মিলিয়ে দুই দলের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ডটি অবশ্য থেকে গেল অস্ট্রেলিয়ান পেসার ডার্ক ন্যানেসেরই। ১৮ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি, ২০১০ সালে ব্রিজটাউনে।
ইনিংসের প্রথম বলেই উইকেট তুলে নিলেন শেখ মেহেদী হাসান। ওপেনিংয়ে নামা অ্যালেক্স ক্যারিকে শূন্য রানে বোল্ড করেন ডানহাতি এই অফ স্পিনার। টার্ন করবে ভেবে খেলেছিলেন অ্যালেক্স ক্যারি, তবে রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে করা বলের লাইন মিস করে হয়েছেন বোল্ড।
এর আগে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে নির্ধারিত ২০ ওভার খেলে ৭ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ১৩১ রান। টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ওপেনিংয়ে দারুণ শুরু করে নাঈম। তাকে সঙ্গ দিচ্ছিল সৌম্য সরকার। কিন্তু ৯ বলে মাত্র ২ রান করে জস হ্যাজলউডের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন সৌম্য। হ্যাজলউডের বলে একটু সরে জায়গা করে নিয়ে কাট করতে গিয়েছিলেন সৌম্য। কিন্তু দক্ষ হ্যাজলউড বুঝতে পেরে জায়গা নিতে দেননি; থার্ডম্যান অঞ্চল দিয়ে বল পাঠাতে চাইলেও বল লাগে মিডল স্ট্যাম্পে। এরপর বোল্ড আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন নাঈমও।
দুর্দান্ত খেললেও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি মোহাম্মদ নাঈম। অ্যাডাম জাম্পার ঘূর্ণিতে ২৯ বলে ৩০ রান করে বোল্ড হয়ে ফেরেন সাজঘরে। তার ইনিংসে চারের মার ছিল ২টি, ছয়ের মারও ছিল ২টি। সপ্তম ওভারের শেষ বলে সুইপ করতে চেয়েছিলেন; কিন্তু বল নাঈমের ব্যাট মিস করে নীচ দিয়ে আঘাত হানে সরাসরি মিডল স্ট্যাম্পে।
ইনিংসের ১৩তম ওভারের প্রথম বলে ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, পরের বলেই আউট হয়ে ফিরলেন ড্রেসিং রুমে। তার ব্যাট থেকে আসে ২০ রান।
অ্যান্ড্রু টাইয়ের বলে পয়েন্ট খেলতে যেয়ে ব্যাটে-বলে ঠিকমতো লাগাতে পারেননি নুরুল হাসান সোহান; মিচেল মার্শের অসাধারণ ক্যাচে ফেরেন সাজঘরে। তার ব্যাট থেকে আসে ৪ বলে ৩ রান। এরপর বোল্ড আউট হয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরতে হয় সাকিবকে। বাংলাদেশের ইনিংসের সর্বোচ্চ ৩৬ রান করে আউট হন সাকিব সাল হাসান। হ্যাজলউডের বলে বোল্ড হন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। সাকিবের পর বোল্ড আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন শামীম। শেষ বলে বোল্ড আউট হন আফিফ হোসেন।
সিরিজের আগে থেকেই জানিয়ে দেওয়া ছিল, ছক্কা গ্যালারিতে গিয়ে পড়লে মাঠে আনা হবে নতুন বল। সে ঘোষণা বাস্তবায়নই হলো মোহাম্মদ নাঈমের দ্বিতীয় ছক্কায়।
ইনিংসের প্রথম ছক্কাটা এসেছিল মিচেল স্টার্কের বলে। সেবার বলটা গিয়ে আছড়ে পড়ে মাঠের পাশে বিজ্ঞাপন বোর্ডে। সে যাত্রায় তাই ডাক পড়েনি চতুর্থ আম্পায়ারের। তবে খুব বেশি অপেক্ষা অবশ্য করতে হয়নি। সেই স্টার্কের বলেই নাঈমের দ্বিতীয় ছক্কা গিয়ে পড়ল গ্যালারিতে। নতুন বলের ডাক পড়ল তাতেই, মাঠে আসতে হলো চতুর্থ আম্পায়ারকে।