টানা ২৬ দিন তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশ। কখনো তীব্র আবার কখনো অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। দুঃসহ গরমে ঘরে-বাইরে হাঁসফাঁস অবস্থা মানুষের। টানা এতদিনের তাপপ্রবাহ আগে কখনো দেখেনি বাংলাদেশ। এপ্রিল মাসের টানা তাপপ্রবাহের এ ব্যাপ্তিকালকে অস্বাভাবিক ও রেকর্ড হিসেবে দেখছেন আবহাওয়াবিদরা।
২৯ এপ্রিলের মধ্যে তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছানোর আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা। কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, আগামী ২৯ এপ্রিল বাংলাদেশের খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছাতে পারে। আগামী রবি, সোম ও মঙ্গলবার ঢাকা শহরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একটি শক্তিশালী পশ্চিমা লঘু চাপের প্রভাবে ৩ থেকে ৮ মে পর্যন্ত বাংলাদেশের বেশিরভাগ জেলার ওপর দিয়ে শক্তিশালী কালবৈশাখী, তীব্র বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টি হতে পারে। বর্তমানে লঘুচাপটি ইরানের ওপর অবস্থান করছে। আগামী ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত তাপপ্রবাহ (৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামবে না) বিরাজ করবে। ২৯ এপ্রিলের পর থেকে তাপমাত্রা কমে ৩ মে পশ্চিমা লঘুচাপটি বাংলাদেশ প্রবেশ করবে ভারত হয়ে।
তিনি বলেন, পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে ৩ থেকে ৮ মে পর্যন্ত সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী জেলাগুলো যথা মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জি ও আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে ৩০০ থেকে ৪০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। ফলে ৫ মে-র পর থেকে পাহাড়ি ঢলে সিলেট বিভাগ ও কিশোরগঞ্জের জেলার হাওর এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।
মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, একই সময়ে চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর ওপর দিয়ে ১০০-১৫০ মিলিমিটার এবং বরিশাল, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোর ওপরে ৫০-১০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে। ৩ থেকে ৮ মে পর্যন্ত খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জেলাগুলোতে সবচেয়ে কম পরিমাণে বৃষ্টি হবে।
আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, চলতি মাসের শুরু থেকেই তাপপ্রবাহ বইছে, তবে মাঝখানে কোথাও কোথাও কিছুটা কমে গিয়েছিল। এর আগে ২০১৯ সালে চুয়াডাঙ্গায় টানা ২৩ দিন মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে গিয়েছিল। এরপর এ বছরই সর্বোচ্চ ব্যাপ্তিকালের তাপপ্রবাহ চলছে। আলাদা করে এপ্রিল মাসে এত দীর্ঘ সময় ধরে তাপপ্রবাহ সচরাচর হয় না। অতীতে বাংলাদেশে এপ্রিল মাসে টানা এত ব্যাপ্তিকালের তাপপ্রবাহের রেকর্ড নেই।
আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম বলেন, আগামী তিন দিন তাপপ্রবাহ এমনটাই থাকতে পারে। এর পরও তাপপ্রবাহ কমবে এমন কথাও বলা যাচ্ছে না। তিন দিন পর আবার সতর্কবার্তা দিতে হতে পারে, সেরকম পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে। আসলে এ মাসজুড়েই তাপপ্রবাহ থাকতে পারে। মে মাসের শুরুর দিকে সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে বৃষ্টির প্রবণতা সামান্য বাড়তে পারে। দেশের পশ্চিমাংশে ভারি বৃষ্টি হয়, তাহলে আমরা আশা করতে পারি তাপপ্রবাহ সারা দেশে কমে আসতে পারে।
খুলনা গেজেট/এইচ