ম্যাচের শেষ বাশি তখন বাজল বলে। বাংলাদেশি ভক্তদেরও মন ভার। কিন্তু হারের দুয়ারে থাকা বাংলাদেশ তখনও হাল ছাড়েনি। ম্যাচের শেষ বাশি বাজার আগেই ভারত শিবিরকে স্তব্ধ করে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান সাগরিকা। এরপর জমজমাট টাইব্রেকারে গিয়েও মেলেনি সমাধান। দুদলের ১১জন খেলোয়াড় টাইব্রেকারে এনে দিতে পারেননি সমাধান। শেষ পর্যন্ত মেগা ফাইনালের রেজাল্ট নির্ধারণ হয় টসের মাধ্যমে। টস ভাগ্যে জিতে বাংলাদেশের স্বপ্নভঙ্গ করে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত অনূর্ধ্ব-১৯।
অনূর্ধ্ব-১৯ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ম্যাচের নির্ধারিত সময় দুদলের স্কোরলাইন ছিল ১-১ গোল। এরপর ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারের নাটক শেষে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। এই ফল নিয়ে অবশ্য নাখোশ ছিলেন বাংলাদেশের মেয়েরা। দীর্ঘ ৯০ মিনিটের লড়াই শেষে কয়েন টসের মাধ্যমে ফল দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তোলে বাংলাদেশ।
টুর্নামেন্টের শুরুর থেকে দুদলের পারফরম্যান্সই ছিল চোখ ধাঁধানো। ফাইনালে ওঠার পথে দুদল হজম করে সমান একটি গোল। মজার ব্যাপার হলো ভারত গোল হজম করে বাংলাদেশের বিপক্ষেই। তাতে ফাইনালে ভারতের চেয়ে বাংলাদেশকেই ফেভারিটের চোখে দেখা হয়। কিন্তু, মূল লড়াইয়ে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র।
ঢাকার কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরুতেই গোল খেয়ে বসে বাংলাদেশ। ম্যাচের বয়স তখন ৮ মিনিট। বাংলাদেশের রক্ষণভাগের সুযোগ নিয়ে এগিয়ে যায় অতিথিরা।ভারতীয় মিডফিল্ডার নিতু লিন্ডার বাড়ানো বল বাংলাদেশের দুই ডিফেন্ডারকে পেছনে ফেলে পেয়ে যান শিবানী দেবী৷ বাংলাদেশের গোলরক্ষক স্বর্ণা রানী বক্সের সামনে এগিয়ে এসেও নাগাল পাননি। ঠিক এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে বুদ্ধিদীপ্তভাবে প্লেসিংয়ে ভারতকে লিড এনে দেন শিবানী।
এর দুই মিনিট পর সমতায় ফেরার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে ভারতীয় গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি মুনকি আক্তার। উল্টো এগিয়ে যাওয়ার পর রক্ষণে জোর দেয় ভারত। বারবার চেষ্টায় সেই রক্ষণ ভাঙতে ব্যর্থ লাল-সবুজের দল।
ম্যাচের ২৮তম মিনিটে ডানপ্রান্ত দিয়ে আরও একটি জোরাল আক্রমণ করে ভারত। এবার অবশ্য শিবানীর বুলেট গতির শট দক্ষতার সঙ্গে ফিরিয়ে দেন বাংলাদেশ গোলরক্ষক। ম্যাচের ৩৪তম মিনিটে ডি বক্সের বেশ খানিকটা দূর থেকে স্বপ্নার দূরপাল্লার শট গোলপোস্টের ওপর দিয়ে চলে গেলে হতাশ হতে হয় বাংলাদেশকে। এর এক মিনিট পরই ফের স্বপ্নার বুলেট গতির শট ঠেকিয়ে দলকে ফের রক্ষা করেন ভারতীয় গোলরক্ষক আনিকা দেবী। এ ছাড়া প্রথমার্ধে উল্লেখযোগ্য সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেনি বাংলাদেশ। ফলে প্রথমার্ধ পিছিয়ে থেকেই শেষ করে বাংলাদেশ।
বিরতির পরও গোলের ছন্দে ফিরতে পারেনি বাংলাদেশ। প্রথমার্ধের চেয়ে দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণ বাড়ায় বাংলাদেশ। তাতে মেলেনি সমাধান। ম্যাচের ৮২তম মিনিটে দারুণ সুযোগ আসে বাংলাদেশের সামনে। কিন্তু দূর্বল শর্টে সেটাও ভেস্তে যায়। তিন মিনিট বাদে আরেকটি শটও ভারতের বারে লেগে ফিরে আসে। একের পর এক আক্রমণে ব্যর্থ হয়ে ম্যাচ হারের দুয়ারে ছিল বাংলাদেশ। ওমন মুহূর্তেই চমক দেখা সাগরিকা। আফিদা খন্দকারের থ্রো ইন থেকে বাংলাদেশের সাগরিকা বক্সের আগে জটলায় বলের নিয়ন্ত্রণ নেন৷ নিজ প্রচেষ্টায় বক্সে বল নিয়ে কোনাকুনি শটে গোল করেন সাগরিকা। যাতে আনন্দে ফেটে পড়ে পুরো স্টেডিয়াম।
খুলনা গেজেট/ এএজে