বেশ কিছুদিন ঝিমিয়ে থাকা ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজে গতি এসেছে। সেতুর দিঘলিয়া প্রাপ্তে কাজ চলছে পুরোদমে। সরেজমিনের ঘুরে দেখে তাই প্রতীয়মান হলো। রেলিগেট প্রান্তের জমি অধিগ্রহণ খুব দ্রুতই সম্পন্ন হবে বলে জেলা প্রশাসকের ভূমি অধিগ্রহণ এল এ (সাঃ) শাখা থেকে জানা যায়। কাজে গতি আসলেও খুলনা বাসীর দীর্ঘ প্রত্যাশিত এবং প্রতীক্ষিত ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ নির্ধারিত অতিরিক্ত সময় ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে সম্পন্ন হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।
ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় সেতুর প্রজেক্ট ম্যানেজার (পিএম) প্রকৌশলী এস এম নাজমুলের কাছে। তিনি খুলনা গেজেটকে বলেন, নির্দিষ্ট ভাবে কাজটি সম্পন্ন করার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে আমরা লোকবল বৃদ্ধি করেছি, ইকুপমেন্ট সরবরাহ করেছি, কাজের মালামাল ষ্টক করছি। সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তে ২৩ এবং ২৮ নং পিলারের পাইলিং কাজ চলমান আছে। ২১ নং পিলারে পাইল ক্যাপের কাজ চলমান। ২২ নং পিলারের লোড টেস্ট এর কাজ চলমান, এবাটমেন্ট -২ ‘র পাইল ক্যাপের কাজ চলমান, সেতুর রেলিগেট প্রান্তে নদীর তীরে ১৪ নং পিলারের কলামের কাজ চলমান রয়েছে। পিয়ার ১৮, পিয়ার ২৯ এবং পিয়ার ২৭ নং ‘র পাইল করার সকল প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। শুধু ঠিকাদার কর্তৃক ঘর বাড়ি ভাঙ্গার স্থাপনা গুলো অপসারিত হওয়া মাত্র আমরা কাজ শুরু করবো।
খুলনা সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) ‘র নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আনিসুজ্জামান মাসুদ খুলনা গেজেটকে বলেন, সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তে নির্মাণ কাজে গতি ফিরে এসেছে। রেলিগেট প্রান্তে ভূমি অধিকরণের জন্য জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের (ভূমি অধিগ্রহণ) এল.এ (সাঃ) শাখাকে) তাদের প্রাক্কলন অনুযায়ী আমরা টাকা দিয়েছি। এল.এ (সাঃ) থেকে ৮ ধারা নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। খুব দ্রুতই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এল. এ (সাঃ) শাখা থেকে সেতুর জন্য অধিগ্রহণকৃত কাগজপত্র আমাদেরকে বুঝিয়ে দিবে। এরপর নির্মাণ কাজে গতি বাড়বে সেতুর রেলিগেট প্রান্তে।
প্রকল্প কার্যালয় থেকে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর ভৈরব সেতু নামে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। এরপর ২০২০ সালের ২৭ জুলাই সওজ ‘র খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ভৈরব নদীর উপর সেতু নির্মাণ কাজের দরপত্র আহ্বান করেন। প্রক্রিয়া শেষে ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিঃ (করিম গ্রুপ) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সেতুর নির্মাণ কাজ দেওয়ার বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়। এর ১৩ দিন পর ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর জমি অধিগ্রহণ ছাড়াই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কার্যাদেশ পাওয়ার ৬ মাস পর ২০২১ সালের ২৪ মে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তে সরকারি খাস জমির উপর ২৪ নং পিলারের টেস্ট পাইলিং এর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করে ভৈরব সেতুর নির্মাণ কর্মযজ্ঞ।
ভৈরব সেতুর পিলার বসবে মোট ৩০ টি। এর মাধ্যমে সেতুর শহরাংশে কুলিবাগান হতে রেলিগেট ভৈরব নদীর তীর পর্যন্ত ১ থেকে ১৪ নং পিলার এবং সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তে ১৭ থেকে ২৮ নং পিলার বসবে। সেতুর রেলিগেট প্রান্তে নদীর পাড় থেকে ৪২ মিটার ভেতরে ১৫ নং এবং সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তে নদী পার হতে ১৮ মিটার ভেতরে ১৬ নং পিলার বসবে। এই দুই পিলারের উপর স্টিলের সেতু বসবে।
প্রসঙ্গত, ভৈরব সেতুর মোট দৈর্ঘ্য হবে ১ দশমিক ৩১৬ কিলোমিটার। সেতু নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১৭ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০৩ কোটি টাকা। জমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮১ কোটি টাকা। বাকী টাকা সেতু সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এনএম