খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ পৌষ, ১৪৩১ | ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  খুলনা-ঢাকা রুটে নতুন ট্রেন ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’ চলাচল শুরু
নিহতের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা প্রদানের ঘোষণা

ঝিনাইদহে বাস-ট্রাক সংঘর্ষ : নিহত ১২ জনের পাঁচজনই শিক্ষার্থী

গেজেট ডেস্ক

ঝিনাইদহে সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে যশোর সদর হাসপাতালে আরো একজন মারা গেছেন। তার বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামে। এ নিয়ে ওই দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১২ জনে দাঁড়িয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে কালীগঞ্জ থানার ওসি মাহফুজুর রহমান জানান, সর্বশেষ নড়াইলের আব্দুর রশিদ মোড়লের মৃত্যুর খবর আমরা পেয়েছি। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা ১২ জনে দাঁড়িয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচজন শিক্ষার্থী রয়েছেন। তারা মাস্টার্সের শেষ পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনায় নিহত হন।

এ দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন কালীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরপুর গ্রামের ইসাহাক আলীর ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান (২২), ভাটপাড়া গ্রামের রণজিৎ দাসের ছেলে সনাতন দাশ (২৫), চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ গ্রামের আব্দুর রশিদের মেয়ে রেশমা (২৬), আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদাহ গ্রামের জান্নাতুল বিশ্বাসের ছেলে ওয়ালিউল আলম শুভ (২৫), শৈলকুপা উপজেলার বগুড়া গ্রামের মৃত মহরম বিশ্বাসের ছেলে আব্দুল আজিজ (৭৫), সদর উপজেলার নাথকুণ্ডু গ্রামের আব্দুল ওয়াহেদের ছেলে ইউনুস আলী (৩২), বাসচালক মাগুরা জেলার উজ্জ্বল হোসেন (৩৫), কোটচাঁদপুর উপজেলার হরিণদিয়া গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে হারুনুর রশিদ সোহাগ (২৪), কালীগঞ্জ উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ (২৬), যশোরের মনিরামপুর এলাকার শিলা খাতুন (২৮), তার ভাসুরের মেয়ে খাদিজা খাতুন (৭) ও নড়াইলের আব্দুর রশিদ মোড়ল।

ওসি মাহফুজুর রহমান জানান, নিহতদের মধ্যে ১২ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হবে।

জানা যায়, দুদিন আগে ছুটি নিয়ে কর্মস্থল সাতক্ষীরা থেকে এসেছিলেন মাস্টার্সের পরীক্ষা দিতে। বৃহস্পতিবার ফেরার কথা ছিল কর্মস্থলে। কিন্তু মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়ে লাশ হয়ে ফিরতে হলো মোস্তাফিজুর রহমান কল্লোলকে। তিনি কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের সুন্দরপুর গ্রামের ইসাহাক মণ্ডলের ছেলে। তিনি যশোর সরকারি এমএম কলেজ কেন্দ্রে মার্স্টাসের পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন।

নিহত ছাত্র মোস্তাফিজুর রহমান কল্লোলের ফুফাতো ভাই মিশন আলী বলেন, কল্লোল সাতক্ষীরা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে সিপাহি পদে চাকরি করতেন। মাস্টার্স পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বাড়িতে ছুটি নিয়ে এসেছিলেন। পরীক্ষা শেষ করে বাড়িতে ফেরার পথে বারোবাজার এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন।

নিহত রেশমার ভাই সোহেল রানা বলেন, তার বোন অনার্স শেষ বর্ষের পরীক্ষা দিয়ে ফিরছিল। হঠাৎ ফোন আসে যে বোন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। ঘটনাস্থলে এসে বোনের লাশ শনাক্ত করেছি। শেষ পরীক্ষা দিয়ে তার বোন আর বাড়ি ফিরল না। শেষ পরীক্ষা দিয়ে বোনের ও শেষ বিদায় হয়ে গেল।

এদিকে নিহত কালীগঞ্জ উপজেলার বড় ভাটপাড়া গ্রামের সনাতন দাশের মৃত্যুতে পরিবারে চলছে শোকের মাতম। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকে কাতর বাবা-মা। রাজমিস্ত্রির কাজ করে ছেলেকে পড়ালেখা করিয়েছিলেন বাবা রণজিৎ দাস। রণজিৎ দাস বলেন, খুব কষ্ট করে ছেলের পড়ালেখার খরচ চালিয়েছি। খেয়ে না খেয়ে তার খরচ দিচ্ছিলাম। একদিন সে চাকরি করে অভাব ঘুচাবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেছে।

জানা গেছে, নিহত কোটচাঁদপুর উপজেলার হারুনুর রশিদ সোহাগও মাস্টার্সের পরীক্ষার্থী ছিলেন। দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থা গুরুতর দেখে তাকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়। এর পর হাসপাতালে বৃদ্ধ বাবা-মা ও বোন এসে পৌঁছলে কিছুক্ষণ পরেই বাবা-মায়ের কোলে ঢলে পড়েন তিনি।

সাতক্ষীরা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিদর্শক বিজয় কুমার বলেন, মোস্তাফিজুরের নিহতের কথা আমরা শুনেছি। শোনামাত্রই সেখানে অফিস থেকে দুজনকে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার তার কর্মস্থলে ফেরার কথা ছিল। মাস্টার্স পরীক্ষা দেওয়ার জন্য তিনি ছুটি নিয়ে বাড়িতে গিয়েছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার মাগুরাগামী জিকে পরিবহনের একটি বাস (ঢাকা মেট্রো গ-১১০২১৪) ৪০-এর ঊর্ধ্বে যাত্রী নিয়ে যশোর থেকে মাগুরার দিকে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে বাসটি বারোবাজার পার হয়ে আমজাদ আলী ফিলিং স্টেশনের সামনে পৌঁছলে বিপরীত থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে যাত্রীবাহী বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার ওপর আড়াআড়ি হয়ে উল্টে পড়ে। এতে প্রাণ হারান ১২ জন। আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!