খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  রাজধানীর উত্তরা থেকে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম গ্রেপ্তার
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৮৩
  ১৬ ডিসেম্বর ঘিরে কোনো ধরণের হামলার শঙ্কা নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ঝিকরগাছায় ফুল আর চৌগাছা হতে পারে ফলের রাজধানী

মহিদুল ইসলাম, চৌগাছা

সময়ের সাথে পরিবর্তন এসেছে কৃষিতেও। সীমান্তবর্তী উপজেলা চৌগাছার কৃষকরা চাষ পদ্ধতিতে আমুল পরিবর্তন ঘটিয়েছে। ধান পাটের পাশাপাশি গোটা উপজেলাতে বানিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে হরেক রকমের ফল। মৌসুম এলে ছোট খাটো বাজারসহ প্রধান বাজার গুলো ফলে ভরে উঠে।

গড়ে উঠেছে ফল সংগ্রহের পয়েন্ট। বাহারি এ সব ফলের মেলা দেখে স্থানীয়রা বলছেন যশোরের ঝিকরগাছা হচ্ছে ফুল আর চৌগাছা হচ্ছে ফলের রাজধানী। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সাধারণ মানুষের মুখের কথা একদিন বাস্তবে রুপ নিবে এমনটিই মনে করছেন এ জনপদের সচেতন মহল।

কৃষি প্রধান উপজেলা হিসেবে খ্যাত যশোরের চৌগাছা। শতকরা আশি শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে কৃষি কাজের সাথে জড়িত। বর্তমানে গ্রামাঞ্চলের মাঠে গেলে চোখে পড়বে কাঁঠাল, আম, পেয়ারা, মাল্টা, লিচু, ড্রাগন, লেবুসহ বড় বড় সব ফলের বাগান। কৃষকের এই উদ্যোগ দেশের অর্থনীতিতে যেমন অবদান রাখছে তেমনি বেকার যুবকরা হচ্ছেন আর্থিক ভাবে লাভবান।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চৌগাছাতে প্রায় ১ হাজার ৭শ হেক্টর জমিতে নানা ধরনের ফলের চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে ড্রাগন ৬৫ হেক্টর, আম ৭৫০ হেক্টর, পেয়ারা ৫৮০ হেক্টর, লিচু ৮৫ হেক্টর, মাল্টা ২৬ হেক্টর, কুল ১২০ হেক্টর, কাঁঠাল ১৮ হেক্টর, নারিকেল ২৫ হেক্টর।

ড্রাগন চাষি উপজেলার পাতিবিলা গ্রামের আইনাল মন্ডলের ছেলে আক্তার হোসেন, একই গ্রামের নাসির উদ্দিনের ছেলে রুবেল হোসেন জানান, তারা কয়েক বন্ধু মিলে একই মাঠে সাড়ে ৪ বিঘা জমিতে প্রায় তিন বছর আগে ড্রাগন চাষ শুরু করেন। এ পর্যন্ত জমিতে ব্যয় করেছেন ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকা আর ফল বিক্রি করেছেন প্রায় ১৮ লাখ টাকার। পরিশ্রম বেশি ও ব্যয় তুলনা বেশি হলেও অধিক লাভজন একটি ফসল হচ্ছে ড্রাগন বলছেন চাষিরা। বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় দাম সব সময় ভালো পাওয়া যায়।

পেয়ারা চাষি মো. বাবু বলেন, গেল দুই দশক ধরে কৃষকরা ধান পাটের পাশাপাশি সবজি চাষ করে কৃষকরা বেশ লাভবান হয়েছে। আমি ৫ বিঘা জমিতে নানা জাতের আম চাষ করেছি, এপর্যন্ত যে রোজগার করেছি তাতে আমি খুশি। তবে ফল সংরক্ষনের জন্য সরকারী ভাবে একটি কোল্ডস্টোর তৈরী হলে চাষি আরও লাভবান হতেন।

আম চাষি আবু মুকুট বলেন, আম মৌসুমী ফল, আম উঠা শুরু হলে বাজারে চাহিদার কোন কমতি থাকেনা, সেকারনে অঅম চাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। মাল্টা চাষি হাবিবুর রহমান বলেন, ফল চাষ নিঃসন্দেহে একটি লাভজনক ফসল। ফল চাষের জন্য উপযুক্ত জমি নির্বাচন ও সঠিক ভাবে পরিচর্জা করা হলে বাম্পার ফলন হয় লাভবান হয় কৃষক।

এদিকে চৌগাছাতে ব্যাপক ভাবে ফল চাষ হওয়ায় উপজেলাতে অন্তত তিনটি ফল পয়েন্ট গড়ে উঠেছে। ব্যবসায়ীরা এই সব পয়েন্টে কৃষকের নিকট হতে নায্য মুল্যে ফল ক্রয় করে তা দেশের বিভিন্ন জেলাতে পাঠায়। পয়েন্ট গুলোর ব্যবসায়ীদের প্রতি হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বেশ কিছু এনজিও।

তারা নানা ভাবে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সহযোগীতা করছেন বলে জানা গেছে। উপজেলার শিশুতলা মোড়ে ফল পয়েন্টের মালিক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ফল চাষিরা জমি থেকে ফল উঠিয়ে আমাদের পয়েন্টে নিয়ে আসেন।

নায্য মুল্য দিয়ে সেটি ক্রয়ের পর ট্রাক ভর্তি করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে পাঠানো হয়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সমরেন বিশ্বাস বলেন, এ অঞ্চলের চাষিরা বর্তমানে ফল চাষে ব্যাপক মনোযোগী হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ড্রাগন চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে কৃষক। আমরা সর্বদা কৃষককে নানা ভাবে সহযোগীতা করে যাচ্ছি। যে ভাবে ফল চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে অচিরেই চৌগাছা ফলের জন্য নতুন ভাবে পরিচিতি লাভ করবে।

খুলনা গেজেট/ এসজেড

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!