ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে পুঁজি করে জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে অভিনব প্রতারণা করেছেন এক নারী। বিগত সরকারের পতনের দিন ৫ আগস্ট বিজয় মিছিল চলাকালে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের গুলিতে তাঁর স্বামী নিহত হয়েছেন উল্লেখ করে মামলা করেন তিনি। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনকে আসামি করা হয়। শুধু তাই নয়; অভিযোগ উঠেছে, মামলা থেকে আসামির নাম প্রত্যাহার করার কথা বলে ওই নারী বিভিন্নজনের কাছ থেকে টাকাও নিয়েছেন।
তবে ঘটনার তিন মাস পর মঙ্গলবার তাঁর স্বামী আল আমিন মিয়া (৩৪) ঢাকার আশুলিয়া থানায় এসে হাজির হন। তিনি বলেন, আমি জীবিত আছি এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমার স্ত্রী মিথ্যা মামলা করেছে।
গত ২৪ অক্টোবর কুলসুম বেগম (২১) নামের এ গৃহবধূ তাঁর স্বামীকে হত্যার অভিযোগ এনে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। গত ৮ নভেম্বর ঢাকার আশুলিয়া থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়।
মামলার বাদী কুলসুম বেগম স্থায়ী ঠিকানা দেখিয়েছেন মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার স্বল্প সিংজুরী বাংগালা গ্রামে এবং বর্তমান ঠিকানা আশুলিয়ার জামগড়া।
এজাহারে উল্লেখ করেন, ৫ আগস্ট সকালে তাঁর স্বামী আল আমিন মুক্তিকামী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেন। সরকার পতনের পর বিকেলে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় বিজয় মিছিলে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে তিনি নিহত হন। বাদী আরও দাবি করেন, আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালে থাকা কাগজপত্র, ছবি ও ভিডিও দেখে তাঁর স্বামীর লাশ শনাক্ত করেন। এ ব্যাপারে কুলসুম বেগমের সঙ্গে এজাহারে দেওয়া আশুলিয়ার ঠিকানায় গিয়ে খুঁজে পাওয়া যায়নি, তাঁর মোবাইলও বন্ধ।
জানা গেছে, আল আমিন সিলেটের দক্ষিণ সুরমার পিরিজপুরের বাসিন্দা। মামলা দায়েরের প্রায় দুই সপ্তাহ পর এ ঘটনা জানতে পারেন। তিনি তখন মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় ছিলেন। বিষয়টির সত্যতা পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি জুড়ী থানায় যোগাযোগ করেন। সেখানকার পুলিশ তাঁকে নিজের এলাকা দক্ষিণ সুরমা থানায় বিষয়টি জানাতে পরামর্শ দেয়। পরে তারা সিলেট থেকে আশুলিয়া থানায় আসেন।
এখানে আল আমিন পুলিশকে জানান, ৫ আগস্ট স্ত্রী কুলসুম তাঁর সঙ্গে সিলেটেই ছিল। এর তিন-চার দিন পর ঝগড়া করে মানিকগঞ্জে চলে আসে।
দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি আবুল হোসেন বলেন, সোমবার রাতে আল আমিন থানায় এসে মামলার বিষয়টি জানান। মঙ্গলবার সকালে আশুলিয়া থানা পুলিশের একটি দল এসে তাঁকে নিয়ে যায়।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহীনুর কবীর জানান, বাদী কুলসুম মিথ্যা মামলা করেছেন। এখন তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আল আমিনকে আদালতে নেওয়া হবে।
খুলনা গেজেট/এইচ