খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৯০
  কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বাসা থেকে ২ সন্তানসহ বাবা-মায়ের মরদেহ উদ্ধার
  কুমিল্লায় অটোরিকশায় ট্রেনের ধাক্কায় নিহত বেড়ে ৭

জীবনের শেষ পর্যায়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন মিকাইল

একরামুল হোসেন লিপু

সাড়ে ৪ দশক পত্রিকা বিলি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন বৃদ্ধ মিকাইল হোসেন সিপার। জীবন সংগ্রামের শেষ পর্যায়ে এসে সংসার চালাতে এখন তাঁকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। চৈত্রের খড়তাপ, মাঘের হাড় কাঁপানো শীত, শ্রাবণের অঝোর ধারার বৃষ্টির মধ্যেও বাড়ি বাড়ি পত্রিকা বিলি করতে ছুঁটতে হয় তাঁকে।

খুলনা গেজেটের এ প্রতিবেদনের সাথে আলাপকালে মিকাইল হোসেন সিপার জানালেন তাঁর দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনের কথা। প্রতিদিন সাইকেল চালিয়ে তাঁকে বাড়ি বাড়ি, দোকানপাট, অফিসে গিয়ে পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে হয় জাতীয় এবং স্থানীয় পত্রিকার কপি। জানালেন করোনার পর থেকে পেপার বিলিতে ভাটা পড়েছে। বিক্রি কমে যাওয়ার সাথে আয়-রোজগারও কমে গেছে। যার কারণে খুব কাহিল হয়ে গেছি। বর্তমানে প্রতি মাসে পত্রিকা বিলি করে ৪ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। এই টাকা দিয়েতো কোন রকম সংসার চালানো সম্ভব নয়?

মিকাইল হোসেন সিপারের বয়স যখন ২৩ বছর। টগবগে যুবক। তখন থেকে তিনি সাইকেল চালিয়ে বাড়ি বাড়ি, দোকানপাট, অফিসে পত্রিকা বিলি করার কাজ শুরু করেন। টানা সাড়ে চার দশক তিনি এ পেশার সাথে সম্পৃক্ত। শুরু থেকেই তিনি পত্রিকা বিক্রির এজেন্ট খানজাহান আলী থানার ফুলবাড়িগেট পেপার হাউজের মালিক সাংবাদিক বদরউদ্দিনের কাছ থেকে পত্রিকা নিয়ে বিলির কাজ শুরু করেন। শুরুতে কমিশনের হার কম থাকলেও বর্তমানে শতকরা ৩০ শতাংশ হারে কমিশন পান। কিন্তু তাতে আয়ের উন্নতি হয়নি।

৪৫ বছর পূর্বে মিকাইল হোসেন যখন পত্রিকা বিলির কাজ শুরু করেন তখন একটি জাতীয় পত্রিকার মূল্য ছিলো ৫০ পয়সা। আর স্থানীয় পত্রিকার মূল্য ছিলো ১০ পয়সা। তাঁর বয়স এখন ৭০ এর কাছাকাছি। মা এখনও জীবিত আছেন। স্ত্রী, মা মেয়ে এবং ২ নাতি নিয়ে বসবাস করেন মহেশ্বরপাশা খানাবাড়ি এলাকায়। কোন পুত্র সন্তান নেই। তাই বয়স হলেও সংসারের হাল ছাড়তে পারছেন না।

বৃদ্ধ মিকাইল হোসেন বলেন, আগে পত্রিকা বিক্রি করে ভালোভাবে সংসার চালিয়েছি। কিন্ত এখন পত্রিকা বিলি করে যা ইনকাম হয় তা দিয়ে ঠিক মতো সংসার চলে না। এখন পত্রিকা বিলি করে মাসে ৪ হাজার টাকা পাচ্ছি। আগে পত্রিকা বিক্রি ভালো হতো সংসারও ভালোভাবে চলতো। এমন সময় গেছে যখন প্রতিদিন ৩’শ থেকে সাড়ে ৩’শ পত্রিকা বিলি করেছি। করোনর পর থেকে পত্রিকা বিক্রি কমে গেছে। এখন স্থানীয় এবং জাতীয় সব মিলিয়ে দিনে ৬০ পিচ পত্রিকা বিলি করি। করোনর পর থেকে খুব কাহিল হয়ে গেছি। পেপার বিলির মাসে ৪ হাজার টাকা, এই টাকা দিয়ে তো কোন রকমে সংসার চালানো সম্ভব নয়! বাজার খরচ হয় না। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ধার দেনা করে চলি। আশেপাশের মানুষজন মাঝে মধ্যে যদি কিছু সহযোগীতা করে! বাড়ির পাশে অন্যের জমি বর্গা নিয়ে কিছু চাষাবাদ করি। আমার সঙ্গে জামাই থাকে। মাঝেমধ্যে সে কিছু বাজার ঘাট করে দেয়। এই রমজানে ইফতার সামগ্রী তেমন কিছু কিনতে পারিনি। খুলনা জেলা সংবাদপত্র হকার সমিতি থেকে কিছু ইফতার সামগ্রী পেয়েছি। সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পায়না।ন্যায্যমূল্যের টিসিবি’র একটা কার্ড আছে। তাও কোন মাসে পাই। কোন মাসে পাইনা। জীবন সংগ্রামের শেষ পর্যায়ে সে খুব কষ্টে আছি।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!