খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  বিশ্বকাপ বাছাই : মার্টিনেজের ভলিতে পেরুর বিপক্ষে জয় পেল আর্জেন্টিনা

জীবননগরে এক সঙ্গে জন্ম নেওয়া জমজ চার শিশুর পরিবারে চিন্তার ভাঁজ 

মুতাছিন বিল্লাহ, জীবননগর

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার সুটিয়া গ্রামে এক সঙ্গে জন্ম নেওয়া চার নবজাতক শিশুর ওজন কম থাকায় সংকটাপন্ন অবস্থায়  টানা ২০দিন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) রাখা হয়েছিলো। এতে সন্তানদের চিকিৎসার খরচ নিয়ে আর্থিক সংকটে পড়েছেন তহমিনা এবং তাঁর স্বামী প্রান্তিক চাষি জিয়ারুল ইসলাম দম্পতি। গত মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সকালে টানা চিকিৎসার শেষে তাদের নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ওই দম্পতি।

৪ অক্টোবর যশোরের বেসরকারি আদ্বদীন হাসাপাতালে সিজারিয়ানের মাধ্যমে জমজ চার শিশুর জন্ম হয়। এদের মধ্যে দুটি ছেলে ও দুটি মেয়ে। তাদের নাম রাখা হয়েছে জুম্মান,জুবায়ের, জুনিয়া ও জিনিয়া। এদের মধ্যে জিনিয়া গত ২২ অক্টোবর অসুস্থতা জনিত কারণে মারা যায়। একসঙ্গে চার সন্তানের জন্ম ঘটনাটি বিরল। এতে প্রতিনিয়তই জিয়াউর রহমানের বাড়িতে ভিড় করছেন উৎসুক এলাকাবাসী।

নবজাতকদের মা তাহমিনা খাতুন বলেন, দীর্ঘ ৯ বছর পর আমাদের ঘরে সন্তান আসছে খবর শুনে আমরা খুবই খুশি হয়েছিলাম।সিজার করে একসাথে চারজন বাচ্চা জন্ম নেয়,পরে একজন বাচ্চা মারা যায়। অনেক কষ্ট করে যশোরের হাসপাতালে দেড় লক্ষ টাকা পরিশোধ করে আমরা গতকাল বাড়িতে আসি।এখন ৩টি বাচ্চার খাবার ও ঔষধ কেনার সামর্থ্য আমাদের নেই।

নবজাতকদের বাবা জিয়ারুল ইসলাম বলেন, “আল্লাহ’তালা আমার চারটা বাচ্চা দিয়েছেন। এতে আমি খুবই খুশি। বাচ্চাগুলো মানুষ করা নিয়ে আমি খুব দুচিন্তায় পড়ে আছি। যশোরের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসহ অন্যান্য খরচ নিয়ে মিটিয়ে সংকটে আছেন তিনি। যশোরে চিকিৎসার সময় ডিসি ও ইউএনও স্যার আমার খোঁজ খবর নিতেন, আমি আমার সংকটের কথা তাদের জানিয়েছিলাম তারা আমার ঔষধ কেনার জন্য দশ হাজার টাকা দেন।

তিনি জানান, বুধবার (২৫ অক্টোবর) বাড়ির আসার পর দুপুরে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ফল, বাচ্চাদের দুধ, কাপড় ও কিছু আর্থিক সহয়তা পাঠিয়ে ছিলেন। বিকালে বাঁকা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাদের প্রধান তিনিও কিছু আর্থিক সহয়তা দিয়ে যান।আজ উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও স্যার এসেছিলো তারা বাচ্চাদের কিছু দুধ ও দশ হাজারের মতো টাকা দিয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, আমি ট্রাক্টর চালিয়ে ও বিঘাখানিক জমি চাষাবাদ করে কোন রকম সংসার চালায়। আমি আমার বাচ্চাদের ভবিষ্যতে কথা চিন্তা করে বিভিন্ন যায়গায় সাহায্য সহযোগিতা আবেদন জানিয়েছি। যাতে তাদের চিকিৎসার ও লেখা পড়া করে মানুষ করতে পারি। এজন্য তিনি ডিসি, পুলিশ সুপার ও ইউএনও মহাদয় তাকে আর্থিক সহয়তার পাশাপাশি বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা জন্য আবেদন করে জানান।

নবজাতকেরা বাড়ি আসার খবরে বুধবার বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে জেলা পক্ষ থেকে ফুল ও উপজেলা পরিষদের পক্ষে থেকে বাচ্চাদের খাবার, উপহার ও আর্থিক সহয়তা নিয়ে হাজির হন জীবননগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হাসিনা মমতাজ। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের প্রধান ও জীবননগর সাংবাদিক সমিতির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ।

বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের প্রধান বলেন, খবরটি শোনার পর আমি ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে মার্তৃত্বকালীন ভাতার ব্যবস্থা করে দিই। তাছাড়া তাদের সার্বিক খোঁজ খবর নিয়েছি। ভবিষ্যতে ইউনিয়ন পরিষদের যত রকম সুযোগ সুবিধা আসবে তাদের দেওয়ার আশ্বাস করেন তিনি।

জীবননগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান বলেন,”খবরটি শুনে আমরা খুবই আনন্দিত, ইউএনও মহোদয় ও উপজেলা পরিষদ তাদের পাশে আছি।তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। “

জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসিনা মমতাজ বলেন,  জিয়ারুলের পরিবারে চারটি সন্তান জন্মানোর খবর পায়। তখনই শুনতে পায় তাদের আর্থিক অবস্থা খুবই দূর্বল। তখনই আমাদের উপজেলা চেয়ারম্যান ও ডিসি স্যারের তাগিদে আমরা ওই সময় দশ হাজারর টাকা ব্যবস্থা করি,এবং সার্বিক খবর রাখি। দুঃখের বিষয় চারটি বাচ্চার মধ্যে একটি বাচ্চা প্রচন্ড অসুস্থতার কারণে মারা যায় এতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে শোক প্রকাশ করছি।তারা বাড়ি আসার খবর পেয়ে আমরা বাচ্চাদের দেখার জন্য কিছু খবার ও আর্থিক সহয়তা প্রদান করি এবং তাদের ভবিষ্যতে মঙ্গল কামনা করি।

এদিকে,গত মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপারের পক্ষে নবজাতকের বাবা-মাকে আর্থিক সহায়তা, খাদ্য ও শুভেচ্ছা-সামগ্রী উপহার হিসেবে তুলে দেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) জাকিয়া সুলতানা ও জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ এস এম জাবীদ হাসান।এছাড়া বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের প্রধান তাদের উপহার, পাঁচ হাজার টাকা ও জীবননগর সাংবাদিক সমিতির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম পাঁচ প্যাকেট দুধ দিয়ে সহযোগিতা করেন।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!