জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেন দাবি করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সেক্টর কমান্ডার ছিলেন জিয়াউর রহমান। যিনি মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করলেন, তার খেতাব কেড়ে নেবেন? এ অধিকার কারো নেই।’
শনিবার দুপুর ১২টায় রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দলটির প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর বিএনপি আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জিয়াউর রহমান প্রথম বিদ্রোহ করেন দাবি করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে এ খেতাব দেওয়া হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য। তৎকালীন সরকার মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য দিয়েছে। এই খেতাব বাতিল করার অধিকার যদি সরকারের থাকে, তাহলে নতুন করে বীরশ্রেষ্ঠ, বীর উত্তম খেতাব দিন। যেহেতু এটা দেওয়ার এখতিয়ার নেই, সুতরাং কেড়ে নেওয়ারও অধিকার নেই।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এ দেশের মাটিতে শেখ হাসিনার সব অপকর্মের বিচার করা হবে। জনগণের আদালতেই সেই বিচার হবে। সময় এলে সব হিসাব নিকাশ নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, যার পিতার প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধা নেই, সেই এ ধরনের ঘৃণ্য কাজ করতে পারে। শেখ মুজিব মারা যাওয়ার পর ৭৬ সালে মতিয়া চৌধুরী ডাকসু থেকে তার ছবি নামিয়ে ফেলেন। তার পিতার প্রতি অশ্রদ্ধা জানান। কিন্তু শেখ হাসিনা এদের মন্ত্রী বানিয়েছেন।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আরো বলেন, আঘাত এলে পাল্টা আঘাত হবে। পুলিশের কাজ পুলিশ করুক। যারা চাকরি করতে চান, তারা জনগণের পক্ষে থাকুন। আর যদি হাসিনাকে রক্ষা করতে চান, যা পারেন, করতে থাকুন, কামাই করুন। তাদের বিষয়ে আমার কোনো কথা নেই। সময় এলে জনগণ সব হিসাব নেবে।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মানে জিয়া, গণতন্ত্র মানে জিয়া, জিয়া মানে বাংলাদেশ। জিয়ার খেতাব নিয়ে আমরা ব্যবসা করি না। এটা আমাদের গর্ব। এই খেতাব কেড়ে নিলে হিসাব নেওয়া হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানুল্লাহ আমান বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের খেতাবে হাত দিলে শেখ হাসিনা তোমার হাত পুড়ে যাবে। তুমি মনে করছো, সবকিছু হজম করে ফেলবা, তুমি যেদিন জিয়াউর রহমানের খেতাব কেড়ে নিবা, সেদিন থেকে তোমার প্রধানমন্ত্রীত্ব থাকবে না। তোমার ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হবে। তুমি আর ক্ষমতায় থাকতে পারবা না, তোমাকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশে একজন রাজনীতিবিদ আছেন, যিনি কবিতার ভাষায় কথা বলেন। বাড়ি নোয়াখালী, তিনি ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, আল জাজিরার প্রতিবেদনের পেছনে কারা, তাদের খুঁজে বের করা হচ্ছে। তারা অপরাধীকে প্রশ্রয় দেয়। আওয়ামী লীগ একটি অপরাধী সংগঠন। আল জাজিরার প্রতিবেদন ধামাচাপা দিতে জিয়াউর রহমানের খেতাব কেড়ে নেওয়ার কথা বলছে।
রিজভী বলেন, জিয়াউর রহমানের খেতাব কেড়ে নেওয়ার অধিকার শেখ হাসিনার নেই। পৃথিবী যতদিন থাকবে জিয়াউর রহমানের অবদান ততদিন থাকবে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিবুন্নবী খান সোহেল বলেন, বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রণ করে মাফিয়ারা। রাজনীতি ও অর্থনীতি সব নিয়ন্ত্রণ করে। ব্যাংক ও শেয়ার বাজার লুট করে। দিনের ভোট রাতে করে। এদেশের সরকার মাফিয়া। আল জাজিরা বিশ্বকে সেটা জানিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানকে খাটো করছে মাফিয়ারা। শাজাহান খান পরিবহন খাতের মাফিয়া। গাজীপুরের মাফিয়া মোজাম্মেল। এ দুজন মিলে খেতাব কেড়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। খেতাব কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে হাত জ্বালিয়ে দেওয়া হবে।
সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিবুন্নবী খান সোহেল ও যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরবসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা।
এদিকে প্রতিবাদ সমাবেশের বিক্ষোভ শেষে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সমাবেশে প্রধান অতিথি ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বক্তব্য শেষে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়। একপর্যায়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যাপক লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ।
এতে ছাত্রদলের সিনিয়র সাধারণ সম্পাদক আমিনুল রহমান আমিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তবিয়র রহমান সাগর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম আহবায়ক শাফি, শহিদুল্লাহ হল ছাত্রদলে সভাপতি শাহিন, এসএম হলের নাহিদুজ্জান শিপন, মহসিন হলের রোমান পাঠান, নয়ন ছাড়াও বিএনপি ছাত্রদল যুবদলের প্রায় ২৫ থেকে ৩০ নেতাকর্মী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় দুই জন পুলিশ সদস্যকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া অনেক নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
খুলনা গেজেট/এনএম