প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে সরকারি নথি চুরি ও অফিসিয়াল সিক্রেটস আইনে দায়ের করা মামলায় জামিন দিয়েছেন আদালত। রোববার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভার্চুয়ালি এ আদেশ দেন। আদালতের সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন জিআর পুলিশের উপ-পরিদর্শক নিজামুদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকা এবং পাসপোর্ট জমা দেওয়ার শর্তে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) রোজিনা ইসলামের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।
আদালতের আদেশের পর রোজিনার আইনজীবি প্রশান্ত কুমার কর্মকার সাংবাদিকদের বলেন, আদালত ৫ হাজার টাকা মুচলেকায় সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের অন্তর্বতীকালীন জামিন মঞ্জুর করেছেন। এছাড়া জামিনের জন্য তার পাসপোর্ট জমা রাখতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, জামিন প্রদানের ক্ষেত্রে যে শর্ত (পাসপোর্ট জমা) আরোপ করা হয়েছে, তাতে আমাদের আপত্তি নেই। ন্যায় বিচারের স্বার্থে যদি এই আদেশ হয়, তবে তাকে আমরা স্বাগত জানাই।’
রোজিনা ইসলাম আজই কারামুক্ত হতে পারবেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে আইনজীবি প্রশান্ত কুমার বলেন, আদালত বাচনিক আদেশ দিয়েছেন। এখন আদেশের লিখিত কপি পাওয়ার পর সেটি কারাগারে যাবে। আইনগত বাধা না থাকলে তিনি আজই কারাগার থেকে মুক্তি পাবেন।
জামিন পরবর্তী মামলার কার্যক্রম নিয়ে এই আইনজীবি বলেন, এটা বাদী ও বিবাদীর ওপর নির্ভর করবে। বাদীর পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে রোজিনা ইসলাম যেমন পদক্ষেপ নিতে চান, তিনি আইনজীবিদের মাধ্যমে সেই আইনানুগ প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হবেন।
গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শেষ হয়। জামিন আবেদনের শুনানি গ্রহণ করেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাকী বিল্লাহ। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী শুনানিতে দুই পক্ষের আইনজীবিরা ভার্চ্যুয়ালি অংশ নেন। তবে আদালত সেদিন তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। রাষ্ট্রপক্ষের তথ্য উপস্থাপন ও জামিন বিষয়ে আজ আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন আদালত।
পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে ১৭ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রায় ছয় ঘণ্টা আটকে রেখে হেনস্তা ও নির্যাতন করা হয়। রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁকে শাহবাগ থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাত পৌনে ১২টার দিকে তাঁর বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়।
শাহবাগ থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১৮ মে রোজিনা ইসলামকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। পুলিশ তাঁকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে। শুনানি নিয়ে আদালত রিমান্ডের আবেদন নাকচ করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আর জামিন আবেদনের ওপর অধিকতর শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন রাখেন। এই আদেশের পর রোজিনা ইসলামকে কাশিমপুর মহিলা কারাগারে পাঠানো হয়।
সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মুক্তি দাবিতে কয়েক দিন ধরেই প্রতিবাদ ও আন্দোলন চলেছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও প্রতিবাদ হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এনএম