জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে একমত হয়েছে ১৪ দল। সোমবার (২৯ জুলাই) রাত সাড়ে ৮টার দিকে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বিএনপি-জামায়াত নৈরাজ্যের মাধ্যমে দেশকে অকার্যকর করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, জাতীয় স্বার্থে দেশবিরোধী অপশক্তি নির্মূল করার জন্য ১৪ দলের বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এর আগে সোমাবার (২৯ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে গণভবনে ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে সূচনা বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ সময় কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোকে জঙ্গিবাদী কাজ হিসেবে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জামায়াত-শিবির-বিএনপির জঙ্গিরা আজকে আমাদের ওপর থাবা দিয়েছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে ঐ শিবির, ছাত্রদল, বিএনপি-জামায়াত এরাই কিন্তু এবং জঙ্গি এরা। এই জঙ্গিরাই কিন্তু আজকে আমাদের ওপর থাবা দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যে ঘটনাগুলো ঘটছে, আসলে এটা কোনো রাজনৈতিক কিছু না। এটা সম্পূর্ণ জঙ্গিবাদী কাজ। একেবারে জঙ্গিবাদী কাজ।
কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, এদের উদ্দেশ্যটা এখন বোঝা যাচ্ছে যে কোটা কোনো ইস্যু না। একে একে যে কয়টা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের সেবা দেয়, যে কয়টা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নত করে, সেটাই ধ্বংস করা। অর্থাৎ বাংলাদেশটাকেই যেন ধ্বংস করে ফেলা।
বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের নাম শুনলে এখন সবাই সমীহ করে মন্তব্য করে সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশে উন্নয়ন হয়েছে, উন্নয়নের ফলে বাংলাদেশ আজ বিশ্বব্যাপী একটি মর্যাদার আসন পেয়ে গেছে। বাংলাদেশের নাম শুনলে সবাই সমীহ করে চলে। সবাই সম্মানের চোখে দেখে। একটা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশকে আমরা তুলে আনতে সক্ষম হয়েছি, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে, অবকাঠামোগত উন্নয়নের মধ্য দিয়ে।
বৈঠকে এরপর শরিক দলের নেতারা একে একে বক্তৃতা দেন। প্রথমেই ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার বিশ্লেষণ দরকার আছে। জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধের বিষয়টি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময়ই এসেছিল। তখন করা হয়নি। এখন বিবেচনায় নেওয়া যায়।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু সরাসরিই জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার এখনই সময়। তাদের নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি এই বিষয়ে জনমত গঠনে রাজপথে মিছিল-সমাবেশ করাও প্রস্তাব দেন।
সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি বিকল্প রাজনৈতিক শক্তিগুলোকেও এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলামও জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে মত দেন। পাশাপাশি তিনি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানমুখী করার ওপর জোর দেন। এ জন্য আস্তে আস্তে মাধ্যমিক স্কুলগুলো খুলে দিয়ে পরীক্ষা শুরুর কথা বলেন তিনি।
তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের জন্য মামলা করেছিলেন বলে উল্লেখ করেন। তিনি জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার জোরালো দাবি জানান।
শেষের দিকে ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুকে সভার সমাপনী টানার কথা বলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু তিনি বলেন, বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ এবং তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারই করা উচিত।
সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী সভার সমাপনী টানতে গিয়ে বলেন, ১৪ দলের নেতাদের সুপারিশ থেকে এটা স্পষ্ট যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা এবং দেশে শান্তি বজায় রাখার স্বার্থে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা দরকার। ১৪ দলের নেতাদের পরামর্শে এই সিদ্ধান্ত নিতে তিনি একমত।
সূত্র আরো জানায়, প্রধানমন্ত্রী এও জানান যে, আগামী বুধবারের মধ্যেই প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করবে সরকার।
খুলনা গেজেট/কেডি