বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রতিদিনের হিসাব প্রতিদিনই দিতে হবে। সংগঠন ভুক্ত হয়ে কাজ করা এটা আমাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ। আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে ধারণ করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা ভালোবাসেন তাদেরকে যারা আল্লাহর পথে সারিবদ্ধ হয়ে কাজ করে এবং লড়াই করে। তারা শীশা ঢালা প্রাচীরের ন্যায় অটল থাকে।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) সকালে খুলনা অঞ্চল জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে নগরীর আল ফারুক সোসাইটিতে অনুষ্ঠিত উপজেলা ও থানা কর্মপরিষদ সদস্যদের শিক্ষা শিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় নেতৃবৃন্দ কারো সাথে কোন আপোষ না করে আল্লাহর রাস্তায় হাসি মুখে জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, রাজনীতি হবে মানুষের কল্যাণের জন্য, চাঁদাবাজির জন্য নয়। রাজনীতি হবে মানুষের সেবার জন্য, দখল দারিত্বের জন্য নয়। জামায়াত ক্ষমতায় গেলে চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, ঘুষ বাণিজ্য, দূর্নীতি থাকবে না । সকল মানুষ নিজেদের অধিকার ফিরে পাবে ইনশাআল্লাহ।
কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেকের সভাপতিত্বে বক্তৃতা করেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, টিম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মশিউর রহমান খান, খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন, সাতক্ষীরা জেলা আমীর মুহাদ্দিস রবিউল বাশার, বাগেরহাট জেলা আমীর মাওলানা রেজাউল করিম, মহানগরী নাযেবে আমীর অধ্যাপক নজিবুর রহমান, মহানগরী সেক্রেটারি এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলাল, জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সাতক্ষীরা জেলা সেক্রেটারি মাওলানা আজিজুর রহমান, মহানগরী সহকারী সেক্রেটারি প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।
প্রধান অতিথি আরও বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের জুলুম, অত্যাচার ও নির্যাতন এবং পুলিশী হয়রানীর কারণে আমরা আমাদের নিজস্ব ঘরে থাকতে পারতাম না। স্ত্রী সন্তান জন্ম দিয়েছে কিন্তু বাবা সন্তানকেও দেখতে পায়নি। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশের মানুষ নতুন মুক্তি লাভ করেছেন। আমরা মুক্ত বাতাসে নি:শ^াস নিতে পারছি আলহামদুলিল্লাহ। আমরা দাড়ি, টুপি পড়ে চলতে পারতাম না। এখন চলতে পারছি। সবই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল।
তিনি দেশের অর্থনীতির ধ্বংসের কথা উল্লেখ করে বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা দূর্নীতি করে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে।
তিনি অন্তবর্তীকালীন সরকারকে সহযোগীতা করতে হবে উল্লেখ করে বলেন, বর্তমান রাজনীতিতে আমীরে জামায়াতের বক্তব্য ও সেক্রেটারী জেনারেলের বিবৃতি দৈনিক সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা জানতে পারবো। দায়িত্বশীল সম্পর্কে গুজবে কোন কান দিবেন না। জামায়াত রাষ্ট্র গঠনে ১০ দফা কর্মসূচী দিয়েছে, তা জনগণের মাঝে প্রচার করতে হবে। বিগত দিনের প্রেক্ষাপটে মুর্খরা কেন্দ্র দখল করে নিয়ে ভোট বাণিজ্য করেছে। জামায়াতে ইসলামী দলমত নির্বিশেষে সকলকে সাথে নিয়ে একটি সমৃদ্ধিশালী দেশ গড়তে চায়। জামায়াতে ইসলামীর এমপি হয় আল্লাহর রহমতে এবং জনগণের ভালবাসায়। আমরা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি, আরো ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। আল্লাহ যখন সম্মান দিয়েছে এ সম্মান ধরে রাখতে হবে । আমাদের মাঝে যেন কোন অহংকার না আসে। মানুষের ভালোবাসা নিয়েই দেশের সেবা করতে হবে বলে তিনি দায়িত্বশীলদেরকে গভীর রাতে আল্লাহ তায়ালার কাছে ও দিনে জনগণের কাছে ধর্ণা দেওয়ার আহবান জানান।
মো. আব্দুল হালিম আরও বলেন, ‘গত ১৫ বছর একটা সরকার জনগণের অধিকার দেয়নি। মেধাবীরা চাকরি পায়নি, শুধু দলের নেতারা চাকরি পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সিট পায় না, ওখানেও চাঁদাবাজি চলে। জামায়াত ক্ষমতায় গেলে মেধা, যোগ্যতা, সততা অনুযায়ী চাকরি পাবে। এখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না। যেই দলের হোক, যেই গ্রামের হোক, যেই ধর্মের হোক; মেধা, যোগ্যতা অনুসারে চাকরি হবে।’
সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, হাজারও প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এ বিপ্লব, এই পরিবর্তন এ আন্দোলনের সফলতা একে অবশ্যই আমরা পাহারাদারি করব। এর কোনো ধরনের অপমান এ জাতি সহ্য করবে না। এ আন্দোলন বিশেষ কোনো জনগোষ্ঠীর কিংবা সম্প্রদায়ের নয়। এ জন্য আপামর জনগণ রাস্তায় নেমে এসে সফল করেছেন। এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো ধর্মের লোকেরা শুধু লড়াই করেনি। জাতি দল ধর্ম নির্বিশেষে আপামর ছাত্র-জনতার এ আন্দোলনকে কেউ যদি নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চায় তাহলে আবারো বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ তা রুখে দেবে। আমরা সেই ১৮ কোটি মানুষের সঙ্গে থাকব ইনশাআল্লাহ।
খুলনা গেজেট/এমএম