ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যাকায় যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েলে প্রথমবারের মতো হামলা চালিয়েছে ইরান। জাতিসংঘকে দেশটিতে হামলা কারণ জানিয়েছে সংস্থায় ইরানের নিয়োজিত দূত আমির সায়্যিদ ইরাভারি। সোমবার (১৫ এপ্রিল) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
রোববার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ইরানের দূত বলেন, স্বাভাবিকভাবেই সব দেশের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। ইরান এ হামলার মাধ্যমে সেই আত্মরক্ষার অধিকারই রক্ষা করেছে।
ইরানের দূত সায়্যিদ ইরাভানি বলেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। চলতি মাসের শুরুতে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে ইসরায়েলি হামলার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
হামলার ঘটনা উল্লেখ করে ইরাভানি আরও বলেন, তেহরানের পাল্টা জবাব দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। ইরান কোনো ধরনের উত্তেজনা বা যুদ্ধ চায় না। তবে যে কোনো হুমকি বা হামলার জবাবের কথা জানান তিনি।
ইরান জানিয়েছে, ইসরায়েলে হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রতিবেশী দেশগুলোকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিল। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আব্দুল্লাহিয়ান জানান, তেহরান যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রতিবেশী দেশগুলোকে হামলার বিষয়ে তাদের পরিকল্পনার কথা ৭২ ঘণ্টা আগে জানিয়েছিল। বার্তায় ইসরায়েলে ইরানের হামলা সীমিত ও আত্মরক্ষামূলক হবে বলেও জানানো হয়।
ইরানের পক্ষ থেকে এমন দাবি করা হলেও বিষয়টি অস্বীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি বলছে, ইরানের এমন দাবি সত্য নয়। তারা ইসরায়েলের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করতে চেয়েছিল।
তুরস্কের পররাষ্টরমন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামলার আগে তারা ওয়াশিংটন ও তেহরানের উভয়ের সঙ্গে কথা বলেছিল। হামলার প্রতিক্রিয়া যেন আনুপাতিক থাকে সে জন্য আঙ্কারা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে একে আপরের বার্তা পরস্পরের কাছে পৌঁছে দিয়েছে।
এদিকে ইরান ও ইয়েমেন থেকে ছোড়া অন্তত ৮৬ ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসের দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সেন্টকম জানিয়েছে, ধ্বংসের তালিকায় অন্তত ৬টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। এ ছাড়া ৮০টির বেশি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। এগুলো ইরান এবং ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলকে নিশানা করা হয়েছিল।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে সেন্টকম জানিয়েছে, ইরানপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠী হুতিদের উৎক্ষেপণকারী যানসহ একটি ব্যালেস্টিক মিসাইল ও ৭টি ড্রোন উড্ডয়নের আগেই ধ্বংস করা হয়েছে।
অন্যদিকে ইসরায়েলকে সমর্থনকারী দেশগুলোকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা আশতিয়ানি বলেন, যদি কোনো দেশ তাদের আকাশসীমা ইসরায়েলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় তাহলে আমরা তাদের চূড়ান্ত মোকাবিলা করব।
এক্সে হিব্রু ভাষায় এক পোস্টে তিনি বলেন, যদি কোনো দেশ ইরানের ওপর (সম্ভাব্য) আক্রমণের জন্য ইসরায়েলের জন্য তার মাটি বা আকাশসীমা উন্মুক্ত করে দেয়, তাহলে তারা আমাদের পক্ষ থেকে নিষ্পত্তিমূলক প্রতিক্রিয়া পাবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, ব্যাপক হারে ইরানি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ করা হয়েছে; তা সত্ত্বেও ইরানের উদ্দেশ্য ছিল ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের ঘটনা ঘটানো। আর এক্ষেত্রে ইরান সফল হলে এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে অনিয়ন্ত্রিত সংঘাতে প্ররোচনা দিত।
উল্লেখ্য, গত শনিবার রাতে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর প্রথমবারের মতো ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ইরান। মূলত চলতি মাসের শুরুর দিকে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের দূতাবাসে ইসরায়েলি বোমা হামলার জবাবে শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে এই পাল্টা হামলা করে তেহরান। ইসরায়েল ও ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা। এমনকি দুই চিরশত্রু দেশের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধ পর্যন্ত বেধে যেতে পারে বলে সতর্ক করছেন তারা।
গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার দামেস্কে অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেটে হামলা চালিয়ে দেশটির কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করে ইসরায়েল। এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে একের পর এক হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছিল ইরান।
খুলনা গেজেট/এএজে