খুলনা, বাংলাদেশ | ২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  প্রীতি ম্যাচ : মালদ্বীপকে ২-১ গোলে হারাল বাংলাদেশ, সিরিজ শেষ হলো ১-১ সামতায়
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৯৪
  আগামীর বাংলাদেশ হবে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতার : ড. ইউনূস
  জুলাই-আগস্টে নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশে সময় লাগবে : উপদেষ্টা আসিফ

জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল, পানিবন্দি অসংখ্য মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ২৪ ঘন্টার বেশি সময় ধরে ঝড়ো হাওওয়া ও বৃষ্টিপাত হচ্ছে বাগেরহাটে। এতে জেলার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি ২ থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। পানির প্রবল চাপে বেরিবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। ঝড়ের ফলে সৃষ্ট জলোচ্ছাসে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে মৎস্য ঘের। পানিবন্দি রয়েছে কয়েক হাজার পরিবার।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, রাত বারোটার দিকে বাগেরহাটের নদনদীগুলোয় স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে চার ফুট বেশি জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে পানগুছি নদীর তীরবর্তী মোড়লগঞ্জ উপজেলা, বলেশ্বর তীরবর্তী শরণখোলা উপজেলা, পশুর নদীর তীরবর্তী মোংলা উপজেলা, রামপাল উপজেলা ও বাগেরহাট সদরের বেশ কিছু গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার লোকালয়ে পানি ঢুকে মানুষের ঘরবাড়ি, চিংড়িঘের তলিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

সোমবার সকালে বাগেরহাট সদর উপজেলার মাঝিডাঙ্গা এলাকায় গিয়ে দেখা যায় প্রায় দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দি রয়েছেন। ভৈরব নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে তাদের বাড়ি ঘর।

স্থানীয় ডেইজি বেগম নামের এক নারী জানান, রাত দুইটার দিকে মাঝিডাঙ্গা-বাজনদার বাড়ির মোড় সড়কের উপর দিয়ে পানি এসে আমাদের এলাকা তলিয়ে যায়। এর আগেই সড়কের বিপরীত পাশে থাকা শতাধিক পরিবারের বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছিল। পানিতে আমাদের গ্যারেজের চারটি ইজিবাইক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। রান্না করেও খাওয়ারও কোন সুযোগ নেই। সেখানেও পানি।

শুধু মাঝিডাঙ্গা নয়, এ উপজেলার চরগ্রাম, ভদ্রপাড়া, সুলতানপুর, ভাঙ্গনপাড়, রহিমাবাদ, ডেমাসহস অন্তত ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার মানুষ একধরণের পানিবন্দি রয়েছেন।

এদিকে শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়নের রাজৈর এলাকায় বেরিবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। যার ফলে ওই এলাকার ৫শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পেড়েছেন। এছাড়া একই উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের বগি ও চালিতাতলা এলাকায় রিং বেরিবাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করে অন্তত ৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

এছাড়া মোরেলগঞ্জ, মোংলা ও রামপাল উপজেলার বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এসব এলাকায় অন্তত ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, বাগেরহাট সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর, গোপালকাঠি, মোরেলগঞ্জের শ্রেনীখালি, পঞ্চকরণ,শরণখোলার রাজৈর এলাকায় বেরিবাঁধ উপচে এবং ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এসব এলাকার প্রায় ১৭‘শ মিটারের বেশি জায়গা থেকে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। তবে বাস্তবিক অর্থে এর পরিমান আরও বেশি।

এদিকে ঘূর্নিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলচ্ছাসে জেলার কয়েক হাজার মৎস্য ঘের ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে রামপাল উপজেলার চাষীরা।

রামপাল উপজেলার বাইনতলা চাকশ্রী গ্রামের চিংড়ি চাষী শেখ নূর ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নদী ও খালে জোয়ারের পানি তিন থেকে চার ফিট বৃদ্ধি পেয়েছে। রাতে জোয়ারের পানির চাপে ঘেরের বাঁধ ভেঙে প্রায় এক লক্ষ টাকার চিংড়ি মাছ ভেসে গেছে।

ঘের ব্যবসায়ী ডালিম শেখ বলেন, জোয়ারের পানির চাপ এতটাই প্রবল ছিল যে মুহূর্তের মধ্যেই আমার ঘের পানিতে তলিয়ে যায়। রাত থেকে আমার ঘেরসহ এখানকার প্রায় অর্ধশত মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে আছে।

মোড়েলগঞ্জ উপজেলার বারইখালি এলাকার আব্দুল্লাহ আল জিমি বলেন, বাতাসে আমাদের বাড়ির গাছ-গাছালি ভেঙে গেছে। এলাকা পুরো পানিতে তলিয়ে গেছে। আমার ঘরের ভিতরে প্রায় এক ফুট পানি এবং বাইরে তিন চার ফুট পানিতে তলানো। কাল রাতে আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়েছিলাম কিন্তু ঘরবাড়ি রক্ষার জন্য আশ্রয় কেন্দ্র থেকে চলে এসেছি। রান্নাবান্না না করতে পেরে কাল রাত থেকে এখনো খাওয়া-দাওয়া হয়নি।

শরনখোলার তাফালবাড়ি এলাকার নাজমুল জানান, গতকাল রাত থেকে সকাল পর্যন্ত একটানা বাতাস হচ্ছে। এই বাতাসে আমাদের বেশ কিছু গাছ পড়ে গেছে। আমাদের এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কও পাওয়া যাচ্ছে না। সব মিলে আমরা খুব আতঙ্কের মধ্যে আছি। তাফালবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রাজিব বলেন, ঘূর্ণিঝড় এর পভাবে আমার ইউনিয়নের চালিতাবুনিয়া গ্রামের একটি বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে ওই এলাকা তিন থেকে চার ফুট পানিতে প্লাবিত রয়েছে। সেখানকার মানুষরা অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে তবে এখনো অনেকে নিজেদের বাড়িঘরে অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এখনো প্রচন্ড বাতাস ও বৃষ্টি হচ্ছে।

এদিকে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে গোটা সুন্দরবন। করমজলসহ বনের উঁচু এলাকাগুলোও দুপুরের জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে এতে এখনো বন্যপ্রাণীর ক্ষতির কোন খবর পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে নদীতে ভাটা আসলেও পানি কমছে না। ফলে দুপুরের জোয়ারে আবারো নতুন করে বিস্তৃন অঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত ৪০০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত ও দশ হাজার মানুষ পানিপন্দি আছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

খুলনা গেজেট/এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!