বাংলায় একটি প্রবাদ আছে, বারো মাসে তেরো পার্বণ। তেরো পার্বণের অন্যতম পহেলা বৈশাখ। বাঙালিয়ানাকে পূর্ণতা দান করছে জনপ্রিয় এই পার্বণটি।
আবহমান বাংলার কৃষ্টি, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধারণ করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজন করা হয় বৈশাখী উৎসব ১৪৩১ এর। বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে গত ৪ মে, শনিবার উৎসবটি পালিত হয়। ব্যাপক লোকসমাগমে খুবির কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ প্রাঙ্গণ জমজমাট হয়ে উঠে।
দীর্ঘ চার বছর পর উৎযাপিত এবারের বৈশাখী উৎসব ১৪৩১ এর অন্যতম আকর্ষণ ছিল ডিসিপ্লিনের (বিভাগ) স্টলগুলো। প্রত্যেকটি স্টল ভিন্ন ও আকর্ষণীয় থিম নিয়ে তৈরী। মোট ২৫টি স্টল দেখতে পাওয়া যায় মেলাতে। স্টলগুলো নামেও ছিল নান্দনিকতা।যেমন বাংলা ডিসিপ্লিনের রাখালী, অর্থনীতি ডিসিপ্লিনের ঝিঙেফুল, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের ছায়া বিটপী, রসায়নের রস কুঠির, ইসিই’র ঊর্ণিষা, গণিতের নেমন্তন্ন, ইংরেজি’র রোয়াক ইত্যাদি।
স্টলগুলোতে বিক্রি করা হচ্ছে নাড়ু, জিলাপি, পাটিসাপটা পিঠা, নকশিপিঠা, পাকান পিঠা, বিভিন্ন ফলের জুস, আইসক্রিম, ফুসকা, হস্তশিল্প মৃৎশিল্পের সামগ্রী , মেয়েদের প্রসাধনী ইত্যাদি আরো দ্রব্যাদি। ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে বানানো হয় বায়োস্কোপ, কাকতাড়ুয়া, ছবি তোলার ফ্রেম ইত্যাদি। মেলায় ছিল গ্রাম্যমেলার চিরাচরিত প্রতীক নাগরদোলা। বৈশাখী উৎসব উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন জায়গায় আঁকা হয়েছে বর্ণিল আলপনা।
দেখা যায়, বিকাল ৪টা থেকে মেলায় শুরু হয় মানুষের ঢল। নানান সাজে নিজেদের সাজিয়ে সবাই এসেছেন মেলায়। পরেছেন রঙ বেরঙের রঙের শাড়ি-পাঞ্জাবি। মেলায় এসে কেউ কেউ কেনা কাটা করছে তাদের প্রিয়জনদের জন্য । আবার কেউ খাওচ্ছেন স্নেহের ছোট ভাই বোনদের। আবার কেউ ব্যস্ত তার প্রিয় সিনিয়র ভাইয়ের পকেট কাটতে। অনেকে স্মৃতিগুলো ধরে রাখতে ব্যস্ত ক্যামেরার ফ্রেমে। আবার কেউ কেউ মেতেছেন বন্ধু বান্ধবদের সাথে খোশগল্পে। নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বয়সভেদে সবাই মেতেছেন এই বৈশাখী উৎসবে। সব মিলিয়ে এ যেন এক মিলন মেলা। বিকাল না গড়াতেই শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের অনুষ্ঠান। নাচ,গান, কবিতা আবৃত্তি, মঞ্চ নাটকে পুরো জমজমাট খুবির বৈশাখী উৎসব।
মেলার আয়োজক কমিটির সদস্য জহুরুল তানভীর বলেন, ২০১৯ সালের পর আবারো খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিলে আমরা বৈশাখী মেলার আয়োজন করেছি, যেন আমাদের পুরোনো যেই পহেলা বৈশাখের একটা আমেজ থাকত সেই আমেজটার ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। আমাদের এই উদযাপনে আমরা বিভিন্ন বাংলা সংস্কৃতিকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি।
প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, “দারুণ একটি উৎসবের অংশ হলাম। স্টলগুলিতে সৃজনশীলতার পর্যাপ্ত ছাপ রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যথেষ্ট আকর্ষনীয় ছিলো। সব মিলিয়ে বাঙালিয়ানাকে ধারণ করার এই প্রচেষ্টা আমাকে মুগ্ধ করেছে।
মেলায় ঘুরতে আসা এক দর্শনার্থী বলেন, বৈশাখ মেলায় এসে বাচ্চারা অনেক খুশি। তারা নাগরদোলায় উঠল, বিভিন্ন জিনিস কিনলাম , সবকিছু মিলিয়ে ভালো লাগছে।
খুলনা গেজেট/এইচ