‘ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লবে স্বৈরাচারী সরকারের পতন হলেও তাদের দোসররা বসে নেই। তারা নানা ষড়যন্ত্র করছে, এ কারণে সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। আর দেশকে এগিয়ে নিতে হলে রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কিশোরগঞ্জ পুরাতন স্টেডিয়ামে জুলাই বিপ্লবে শহীদ ও আহতদের স্মরণে জেলা বিএনপি আয়োজিত গণসমাবেশে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তারেক রহমান।
তিনি বলেন, দল-মত-নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে দেশের উন্নয়ন করতে হবে। শহীদদের আত্মত্যাগ ধরে রাখতে হলে দল-মত-নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। জনগণের নির্বাচিত সরকার ছাড়া দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি সম্ভব নয়। এ জন্য দরকার ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত জনগণের সরকার।
এই অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই জুলাই বিপ্লবে হাজারো ছাত্র-জনতা শহীদ হয়েছে।
তারেক রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ। এখানে প্রয়োজন কেবল সঠিক পরিকল্পনা, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সঠিক নেতৃত্ব। যাদের জবাবদিহি থাকবে জনগণের কাছে।
রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে আমরা দেশবাসীর সামনে সেই সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে পারি। আমাদের সামনে সেই সুযোগ এসেছে, তা কাজে লাগাতে হবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাই কেবল তা সম্ভব করে তুলতে পারে।’
জেলার সার্বিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান পরিকল্পনা নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘এ জেলায় দেশের ১৬ ভাগ ধান উৎপন্ন হয়। আমরা কৃষকদের সহযোগিতা করলে এ উৎপাদন আরো বাড়িয়ে ২৫ ভাগে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
তা ছাড়া এখানকার ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামে মাছের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা ক্ষমতায় গেলে হাওর নিয়ে এমন পরিকল্পনা করব, যেন দেশের চাহিদা মিটিয়ে মাছ বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব হয়। এ খাতে সৃষ্টি হয় বিপুল কর্মসংস্থান।’ এ সময় তিনি অষ্টগ্রামের বিখ্যাত পনিরের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথা বলেন এবং পনিরকে বিশ্ববাজারে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার কথাও জানান।
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে গ্রাম থেকে জেলা পর্যায় পর্যন্ত প্রতিটি পরিবারের জন্য একটি করে ফ্যামিলি কার্ড করে দেওয়ার কথা জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, এগুলো বরাদ্দ দেওয়া হবে নারীদের মাঝে। যেন সমাজ ও পরিবারে তাদের ক্ষমতায়ন হয়। এ ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে প্রতিটি পরিবারকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে, যাতে পরিবারগুলো উপকৃত হয়। আমরা ৩১ দফা কর্মসূচি দিয়েছি। ভবিষ্যতে জনগণের সমর্থন পেলে সবাইকে নিয়ে দেশ পরিচালনা করব।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলামের সভাপতিত্বে ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মাজহারুল ইসলামের সঞ্চালনায় আয়োজিত গণসমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমান, দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান সালেহ প্রিন্স, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা আকিল অহমেদ, কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন, আমিনুল ইসলাম রতন, রেজাউল করিম খান চুন্নু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক হাজি মো. ইসরাইলসহ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহতদের স্বজন ও আহতরা। এ ছাড়া সভার শুরুতে জেলায় জুলাই বিপ্লবে শহীদ পরিবারের সদস্য, আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের দলের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।
খুলনা গেজেট/কেডি