খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  ইস্টার সানডে উপলক্ষে ইউক্রেনে ৩০ ঘণ্টা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা পুতিনের
  নারী বিশ্বকাপের মূলপর্বে বাংলাদেশ
  জনগণই দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে : মির্জা ফখরুল
  আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে দেশের ইতিহাসে সর্বোত্তম: প্রধান উপদেষ্টা

ছাত্রীকে হেনস্তায় সন্ধ্যায় যুবক গ্রেপ্তার, দুপুরে জামিন

গেজেট ডেস্ক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে পোশাক নিয়ে ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগে গ্রেপ্তার মোস্তফা আসিফের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেরা মাহবুব এ আদেশ দেন। তদন্ত কর্মকর্তা বরাবর আসামির বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেন বাদী। এ সংক্রান্ত আবেদন আদালতে উপস্থাপন করে আসামির জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে জামিন মঞ্জুর করেন বিচারক।

জানা গেছে, অভিযুক্ত মোস্তফা আসিফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সহকারী বাইন্ডার। ভুক্তভোগীর অভিযোগ পাওয়ার পরপরই বুধবার সন্ধ্যায় তাকে আটক করে শাহবাগ থানা পুলিশ। এরপর মধ্যরাতে অভিযুক্তকে ছাড়াতে শাহবাগ থানায় যান একদল লোক।

ক্যাম্পাসে হেনস্তার শিকার হয়ে শাহবাগ থানায় মামলার প্রেক্ষিতে মোস্তফা আসিফকে শাহবাগ থানায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর তাকে ছাড়িয়ে আনতে একটি গোষ্ঠীকে রাতভর থানায় ‘মব’ তৈরির চেষ্টা দেখা গেছে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, মোস্তফা আসিফের বাবা এবং কয়েকজন ছাত্রনেতার মধ্যস্ততায় তারা থানা ত্যাগ করেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে আসিফকে আদালতে হাজির করা হয়। জামিনের পর তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন ‘তৌহিদী জনতা’ পরিচয় দেওয়া গোষ্ঠীটি।

তাকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক মো. তৌফিক হাসান। আসামি পক্ষের আইনজীবী জামিন চেয়ে শুনানি করেন। রাষ্ট্র পক্ষে জামিনের বিরোধিতা করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেরা মাহবুব তার জামিন মঞ্জুর করেন।

এর আগে ঘটনার সূত্রপাত বুধবার দুপুরে। ভুক্তভোগী ছাত্রী অভিযুক্তের ছবি যুক্ত করে শিক্ষার্থীদের ফেসবুক গ্রুপে হেনস্তার ব্যাপারে পোস্ট করেন। তিনি লেখেন, এই লোকটা আজ আমাকে শাহবাগ থেকে আসার পথে হ্যারাস করেছে। আমাকে হুট করে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলে আমার ড্রেস ঠিক নাই, আমি পর্দা করি নাই ইত্যাদি। তার আচরণ খুবই অ্যাগ্রেসিভ ছিল। পরে তাকে আমি জিজ্ঞাসা করি, আপনি কোন হলে থাকেন, কোন ডিপার্টমেন্টে পড়েন। বলেন, তিনি এই ক্যাম্পাসের কেউ না।

পোস্ট করার পরে তার সহপাঠীরা অভিযুক্ত মোস্তফা আসিফকে খুঁজে বের করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যান এবং অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর ভুক্তভোগীর মামলার প্রেক্ষিতে প্রক্টর অফিস থেকে তাকে শাহবাগ থানায় পাঠানো হয়। তার ব্যাপারে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ তখন বলেন, ছাত্রীটিকে হেনস্তার করার কথা স্বীকার করেছেন তিনি। পরে তাকে শাহবাগ থানায় পাঠানো হয় এবং গ্রন্থাগারকে এ বিষয়ে জানানো হয়।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযুক্তকে থানায় গ্রেপ্তারের পাশাপাশি চাকরিচ্যুত করা হয়েছে গুজব ছড়িয়ে তার পক্ষে অবস্থান নিতে দেখা যায় একটি গোষ্ঠীকে। ফেসবুকে আহ্বান জানিয়ে রাত সাড়ে দশটার দিকে তারা শাহবাগ থানায় গিয়ে অভিযুক্তকে ছাড়িয়ে আনতে মব তৈরি করেন।

আবু আব্দুল্লাহ নামে একজন পোস্ট করেন, ‘এই লোকের পক্ষে আমি যেতে চাই। কেউ সাথে আসলে আসবেন। কোন আইনে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে?’। এরপর শাহবাগ থানায় গিয়ে আবার ফেসবুকে পোস্ট করেন তিনি।

এরপর দলবলসহ থানায় গিয়ে ভুক্তভোগী মেয়ের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার জন্য জোরাজুরি করতে থাকেন তারা। এমনকি ভুক্তভোগী ছাত্রীর মামলার নথি থেকে তার পরিচয় বের করে তাকে মেসেঞ্জারে কুরুচিপূর্ণ বার্তা পাঠিয়ে সেগুলো ফেসবুকে উন্মুক্ত করে দেন।

এ সময় মোস্তফা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি উদ্যান থেকে আসার সময় তাদেরকে দেখে বলেছি, আপনার ওড়নাটা ঠিক করেন। অশ্লীলভাষায় ভুক্তভোগী ছাত্রীকে বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বলছি ওড়না সরাইতে হবে না, আপনি একটু নামান।’

এভাবে সারা রাত থানার ভেতরে মব তৈরির পর সাড়ে নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর রফিকুল ইসলাম, ঢাবি শিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদ, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় মুখ্যসংগঠক তাহমিদ আল মুদাসসির চৌধুরী, অভিযুক্তের বাবাসহ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করে মীমাংসায় আসতে সক্ষম হন এবং আইনি প্রক্রিয়ায় পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সম্মত হন তার বাবা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সহকারী প্রক্টর রফিকুল ইসলাম বলেছেন, তারা আলোচনা করে আইনি প্রক্রিয়ায় যেতে সম্মত করতে পেরেছেন। পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।

তাহমিদ আল মুদাসসির বলেন, ভোর ৪টা থেকে শাহবাগ থানায় ‘আন্দোলনকারীদের’ সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করেছি, তাদের অবস্থান থেকে সরিয়ে আনার জন্য। পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়ার জন্য সম্মত করাতে পারি এবং তারা তাদের অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়।

তিনি বলেন, ‘অভিযুক্তকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করানো হয়েছে’, এমন কিছু মিথ্যা অভিযোগের প্রেক্ষিতে ক্ষোভের জায়গা তৈরি করা হয়েছে। অভিযুক্তের বাবা প্রক্টরের সঙ্গে কথা বলে আশ্বস্ত হন এবং আইনি প্রক্রিয়ায় ছেলের জামিনের জন্য কাজ করতে সম্মত হন।

খুলনা গেজেট/ টিএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!