প্রতিবছর লাখ লাখ মুসলমান সৌদি আরবে হজ পালন করতে যান। তবে এ বছর হজে বহু মুসল্লির মৃত্যু, যা শোকে পরিণত হয়েছে। এবার ১০টি দেশের ১ হাজার ৮১ হজযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। তাপপ্রবাহ ও অসহনীয় গরমে চলতি বছর সহস্রাধিক হাজির মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
যদিও হজ মৌসুমে স্বাস্থ্য পরিকল্পনার সাফল্যের দিক তুলে ধরেছে দেশটি। সৌদি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফাহাদ আল-জাল্লায়েল এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন, বড় সংখ্যক হজযাত্রী এবং উচ্চ তাপমাত্রা চ্যালেঞ্জ থাকলেও হজ মৌসুমে এ বছর কোনো ধরনের জনস্বাস্থ্যসংক্রান্ত ঝুঁকি ছিল না। প্রায় ১৮ লাখ ৩০ হাজারের মতো হাজি হজের আনুষ্ঠানিকতায় অংশগ্রহণ করেছেন, যার মধ্যে ১৬ লাখই এসেছিলেন বিদেশ থেকে। তবে হজে এত বেশি মৃত্যুর জন্য ছয়টি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে চরম তাপে উত্তপ্ত পরিস্থিতি, অতিরিক্ত ভিড় এবং পরিচ্ছন্নতাজনিত সমস্যা, পরিবহন সমস্যা, বিলম্বিত চিকিৎসা সহায়তা, নথিবিহীন হাজি এবং বয়োজ্যেষ্ঠ, রুগ্ণ বা অসুস্থ হাজিদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
সৌদি আরবে তাপমাত্রা এবার ৫১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠেছিল। এ পরিস্থিতিকেই একটা বড় কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় উচ্চতাপ ও পানিশূন্যতা এড়াতে সতর্কতা জারি করলেও অনেক হাজি তীব্র গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা এবং হিটস্ট্রোকের শিকার হয়েছেন। ১০টি দেশ থেকে হজ পালন করতে আসা মানুষের মধ্যে সর্বাধিক মৃত্যু হয়েছে মিসরীয়দের।
এদিকে বিভিন্ন মানুষের বয়ান থেকে জানা গেছে, সৌদি কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার কারণে এ পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। হজযাত্রীদের জন্য নির্ধারিত অনেক এলাকায় বিভিন্ন সংকট দেখা গেছে। অনেকে বলছেন, থাকার জায়গা বা সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থাপনার দিক দিয়ে ভালো ছিল না, ফলে তাঁবুগুলোতে অতিরিক্ত ভিড় এবং পরিচ্ছন্নতাসংক্রান্ত সুবিধার ঘাটতি ছিল।
অন্যদিকে প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই হাজিরা প্রায়ই দীর্ঘ পথ হাঁটতে বাধ্য হয়েছেন। এ জন্য অনেকে বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা আটকে দেওয়া এবং খারাপ পরিবহন ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন।
এ ছাড়া অনেক হাজিই পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা পাননি বলে জানা গেছে। অনেকে বলছেন, যারা তীব্র গরমে ক্লান্তি বা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগেছেন, তাদের জন্য অ্যাম্বুলেন্স বা প্রাথমিক চিকিৎসা সহজে পাওয়ার উপায় ছিল না।
এদিকে হজ করতে একজন হাজিকে একটি বিশেষ হজ ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়। কিন্তু কিছু ব্যক্তি অবৈধভাবে সৌদিতে প্রবেশ করেন। এই ‘অনুমোদনহীন হজ’ সমস্যা অতিরিক্ত মৃত্যুর জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়।
এ ছাড়া অনেক হাজি জীবনের শেষের দিকে হজে যান। তারা আশা করেন যে, হজে গেলে সেখানেই যেন তাঁর মৃত্যু হয়। কারণ হজ পালনের সময় মৃত্যু সৌভাগ্যের বিষয় মনে করেন তারা।
সূত্র : বিবিসি
খুলনা গেজেট/এইচ