যশোরের চৌগাছায় স্পিরিট খেয়ে জাহাঙ্গীর (৩২) নামে এক জনের মৃত্য হয়েছে বলে জানা গেছে। একই সাথে আশঙ্কাজনক আরও একজন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন এবং ২ জন চিকিৎসা শেষে নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন।
নিহত জাহাঙ্গীর উপজেলার সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের পূড়াপাড়া গ্রামের মাহাতাব মন্ডলের ছেলে। অসুস্থরা হলেন একই গ্রামের মনু মিয়ার ছেলে হাসান ওরফে সাহেব (৩৫), মৃত আলী মিয়ার ছেলে মশিয়ার (৪০) এবং মৃত মোস্তফার ছেলে আবু বক্কর (২৫)। হাসান ওরফে সাহেব বর্তমানে খুলনা গাজি মেডিকেল হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন। আবু বক্কর (২৫) যশোর ২৫০ ময্যা হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে মঙ্গলবার বাড়ি ফিরেছেন এবং মশিয়ার চৌগাছা থেকে চিকিৎসা নিয়ে নিজ বাড়িতে আছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য।
স্থানীয় মেম্বর জানিয়েছেন, গত রবিবার রাত ৮টার দিকে পূড়াপাড়ার তোফাজ্জেল হোসেনের ছেলে নূরে আলম বকুল ও খোকনের কাছ থেকে রেকটিফাইড স্পিরিট কিনে আনে ভুক্তভোগীরা এবং নওশেদের বালির গাদার পরিত্যাক্ত ঘরের ছাদে বসে পান করে। এ ব্যবসার সাথে মাদক ব্যবসায়ি সাইদুর মুন্সিও জড়িত।
জাহাঙ্গীরের বড় ভাই আলমগির হোসেন জানিয়েছেন, রবিবার রাত থেকেই জাহাঙ্গীরের শারিরিক অবস্থার অবনতি হয়। সে “বুক জ্বলে গেলো” বলে চিৎকার করতে থাকে এবং স্পিরিট খেয়েছে বলেও জানায়। গত মঙ্গলবার সকালে তার অবস্থা বেশি খারাপ হলে প্রথমে চৌগাছা পরে যশোর এবং সেখান থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই মঙ্গলবার বিকাল ৫টার দিকে জাহাঙ্গীরের মৃত্যু হয়।
স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক ইউসুফ আলী বলেন,গত রবিবার জাহাঙ্গীরকে চিকিৎসা দিতে আমাকে ডাকে। আমি দেখলাম তার পেশার খুব কম। তার স্ত্রী আমাকে বললো চাচা খুব বমি করছে আর খাওয়া দাওয়া করতে পারছে না। তখন আমি বললাম এর চিকিৎসা আমার দিয়ে হবেনা। আপনারা চৌগাছায় নিয়ে যান।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মৃত্য সনদ অনুযায়ি জাহাঙ্গীরকে ২০ জুলাই দুপুর ২টা ৪২ মিনিটে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং ওই দিন সন্ধ্যা ৬ টার সময় তার মৃত্যু হয়। ম্যাথানল বিষক্রিয়া ও শকের (আঘাত) কারণে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই মিথানল বিষক্রিয়া কি জানতে চাইলে যশোর-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব) অধ্যাপক ডা. নসির উদ্দিন বলেন, মিথানল বিষক্রিয়া মানে রেকটিফাইড স্পিরিট এর বিষক্রিয়া।
চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. লুৎফুন্নাহার লাকি বলেন, সাধারনত রেকটিফাইড স্পিরিট পানে হার্ট ফেল করে মৃত্য হলে কারণ হিসেবে এটা লেখা হয়।
পুলিশের তালিকাভূক্ত মাদক ব্যবসায়ি সাইদুর মুন্সি বলেন, আমার নামে অনেক, অনেক মাদক মামলা ছিল। সেসব মামলার কিছু খারিজ আর জামিনে আছি। আমি গত ৬/৭ মাস মাদক ব্যবসা করিনা। স্পিরিট খেয়ে নিহতের ঘটনায় চৌগাছা থানার এসআই বিকাশ তদন্ত করেছেন। এব্যাপারে আমার বিরুদ্ধে কিছু পাইনি। এ নিয়ে দাদার সাথে (এসআই বিকাশ) ফোনে আমার কথা হয়েছে।
তারা দাবি করেন ওই দিন নূরে আলম বকুল (ভূক্তভোগীদের) তাদের কাছে স্পিরিট বিক্রি করেছে। নূরে আলম বকুলের ০১৬৩৪-৭০৮০৬১ নং মুঠোফোনে বার বার সংযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
অপরদিকে চৌগাছা থানার এসআই বিকাশ বললেন, এঘটনার আমি বেশি কিছু জানিনা। ওসি স্যার আমাকে একটু খোঁজ নিতে বলেছিলেন। ওরা নাকি স্পিরিট জাতীয় কিছু খেয়ে খুলনায় গিয়ে মারা গেছে। ওরা গ্রাম্য ডাক্তারের কাছেও চিকিৎসা নিয়েছিল। তবে মাাদক ব্যবসায়ী সাইদুর মুন্সির সাথে তার কোনো কথা হয়নি বলে দাবি করেন এসআই বিকাশ।
চৌগাছা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সবুজ বলেন, পূড়াপাড়ায় একজন মারা গেছে শুনেছি।
খুলনা গেজেট/ টি আই