সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গা উৎসব সন্নিকটে। তাই হিন্দু পরিবারগুলোতে বয়ে যাচ্ছে আনন্দের বন্যা। শেষ সময়ে এসে মন্ডপে মন্ডপে প্রতিমা তৈরির কারিগরাও দিনরাত অবিরাম কাজ করছেন।
তবে চৌগাছার একমাত্র প্রতিমা তৈরির কারখানা বলে খ্যাত হালদার পাড়ার কারিগর বিশ্বজিত কুমার এ বছর খুব ভালো নেই। গত বছরে তিনি ২৫টি প্রতিমা তৈরি করলেও এ বছর তা নেমে এসেছে অর্ধেকে। জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে তাই অন্য বছরের মত মানুষ এ বছর প্রতিমা অর্ডার দেয়নি।
যেগুলো তৈরি করেছেন সেগুলো এখনও বিক্রি হয়নি । শেষমেষ ভাগ্যে কি লেখা আছে তা নিজেও জানেন না কারিগর বিশ্বজিত কুমার।
প্রতিমা তৈরির কারিগর (ভাস্কর) বিশ্বজিত কুমার বিশ্বাস। পিতা মৃত চৈতন্য কুমার বিশ্বাস। আদি বাড়ি মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলায়। তিনি দীর্ঘদিন চৌগাছা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের হালদার পাড়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন। খুব অল্প বয়স থেকেই প্রতিমা তৈরিতে তার সুপরিচিতি। তার হাতে তৈরি সব ধরনের প্রতিমা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে খুবই পছন্দের। বছরের বার মাসই তিনি কোন না কোন প্রতিমা তৈরি করেন। আর শারদীয় দুর্গা উৎসব এলে ব্যস্ততা কয়েক গুণ যায় বেড়ে। এ বছর ব্যস্ততা থাকলেও অন্য বছরের মত তেমন নেই। কারণ প্রতিমা অর্ডার অনেক কম হয়েছে।
গত বছর তিনি ২৫টি প্রতিমা বানালেও এ বছর মাত্র ১২টি প্রতিমা তৈরি করেছেন। তারমধ্যে দুইটি প্রতিমা এখনও অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে। বিশ্বজিত তার কারখানায় দীর্ঘ চার মাস ধরে তৈরি করে চলেছেন দুর্গা প্রতিমার পাশাপাশি লক্ষ্মী, সরস্বতি, গণেশ, কাত্তিক, সিংহ, সাপ, ময়ুর, ইঁদুর, হাঁস, পোঁচ প্রভৃতি। বর্তমানে সকল প্রতিমা তৈরি করে রোদে শুকানো হয়েছে। এখন চলছে রং তুলির কাজ।
সরেজমিন দেখা যায়, ভাস্কর বিশ্বজিত কুমার তার নিপুন হাতে প্রতিমাগুলোতে রঙ-তুলি দিয়ে রাঙিয়ে তুলছেন।
তিনি বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বাংলা মাসের কার্তিকের ২ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে উৎসব শুরু হবে। তাই দিন যত যাচ্ছে ততই ব্যস্ততা বেড়ে যাচ্ছে। এখন শেষ সময়ে এসে প্রতিমাগুলোতে রঙ দিয়ে সাজিয়ে তুলছি। তবে একাধারে বৃষ্টির কারণে কাজে কিছুটা ছন্দপতন ঘটছে। গেল বছরে যেখানে আমি ২৫টি প্রতিমা বিক্রি করেছিলাম। এ বছর সেখানে মাত্র ১২টি প্রতিমা তৈরি করেছি।
এরমধ্যে ১০টি বিক্রি করা সম্ভব হলেও এখনও ২টি প্রতিমা অবিক্রিত আছে। অর্ডার কমে যাওয়া ও প্রতিমা অবিক্রিত হওয়ার পেছনে মানুষের কাছে টাকা না থাকা কাজ করছে। এছাড়া প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, একটি প্রতিমা তৈরি করতে তার ব্যয় ১৫/১৬ হাজার টাকা। কিন্তু সেই প্রতিমা বিক্রি করতে হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকায়। দীর্ঘ চার মাস পরিশ্রম করে যতসামান্য লাভে এটি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। তার হাতে তৈরি প্রতিমা চৌগাছা উপজেলা ছাড়াও পাশের কোটচাঁদপুর উপজেলাতে বিক্রি হয়।
খুলনা গেজেট/ এএজে