চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় মালবাহী ট্রেনের সহকারী চালক (লোকো মাস্টার) জুনায়েদুর রহমানকে মারধর করায় রেলওয়ের পাঁচ কর্মীকে (ওয়েম্যান) সাময়িক বরখাস্তের ঘটনায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন রেল শ্রমিকরা। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার না করলে ধর্মঘটের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
শুক্রবার (১০ জুন) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনের অদূরে রেললাইনের ওপর মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। এ সময় যাত্রীবাহী একটি ট্রেন আটকানোর চেষ্টা করেন তারা। তবে প্রশাসনের তৎপরতায় তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
মানববন্ধনে শ্রমিক হুমায়ুন কবির বলেন, লাল ব্রিজের ওপর ২৫-৩০ জন শ্রমিক মেরামত কাজ করার আগে স্টেশন মাস্টারকে আমরা মেসেজও দিয়ে রেখেছিলাম। আমাদের নিরাপত্তার জন্য ব্রিজ থেকে প্রায় ৪০০ মিটার দূরে লাল পতাকা তুলে রাখেন রেল শ্রমিকেরা। বিকেল ৩টার দিকে দর্শনা স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা সিরাজগঞ্জগামী পাথরবোঝাই একটি মালবাহী ট্রেন পতাকা ভেঙে লাল ব্রিজে প্রবেশ করে। এ সময় প্রাণ রক্ষায় ব্রিজ থেকে শ্রমিকরা লাফ দেন। কেউ কেউ ব্রিজের রড ধরে ঝুলে পড়েন। ব্রিজের ওপর শ্রমিকদের চিৎকারে ও সামনে রেললাইন সংস্কারের ট্রলি দেখে ট্রেনটি থামিয়ে দেন চালক। আহত হন কয়েকজন শ্রমিক। এরপরও আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আশ্বাস দেন তোমরা কাজ চালিয়ে যাও। তোমাদের কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু রাত ২টার পর আমাদের ৫ শ্রমিককে কেন বরখাস্ত করা হলো? এর বিচার চাই।
তিনি আরও বলেন, মানববন্ধন চলাকালে পারি পাকশী বিভাগীয় কর্মকর্তারা চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে আশ্বস্ত করেছেন শিগগিরই বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করবেন। আমরা শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি প্রতিকার না পাই তাহলে ধর্মঘটের ডাক দিতে বাধ্য হবো। এছাড়াও মানববন্ধনে বেতন বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া বিষয় তুলে ধরেন শ্রমিকরা।
এ সময় শ্রমিকরা যাত্রীবাহী ট্রেন আটকে দেওয়ার চেষ্টা করলে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমানের আশ্বাসে শ্রমিকরা সরে যান।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (৯ জুন) সকাল থেকে আলমডাঙ্গা লাল ব্রিজের ওপর প্রায় ৪০০ মিটার দূরে লাঠির সাহায্যে লাল পতাকা তুলে রাখেন রেল শ্রমিকেরা। বিকেল ৩টার দিকে দর্শনা স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা সিরাজগঞ্জগামী পাথরবোঝাই একটি মালবাহী ট্রেন লাল ব্রিজের কাছে পৌঁছালে লাল পতাকা তুলে ট্রেনটিকে থামানোর চেষ্টা করেন শ্রমিকরা। রেল শ্রমিকেরা ব্যর্থ হলে ট্রেনটি লাল ব্রিজের কাছে থাকা আরেকটি পতাকা ভেঙে ব্রিজে প্রবেশ করে। এ সময় প্রাণ রক্ষায় ব্রিজ থেকে শ্রমিকরা লাফ দেন। কেউ কেউ ব্রিজের রড ধরে ঝুলে পড়েন। শ্রমিকদের চিৎকারে ও সামনে রেললাইন সংস্কারের ট্রলি দেখে থেমে যায় ট্রেনটি।
এ সময় উত্তেজিত হয়ে ট্রেনের প্রধান চালক আমিনুল ইসলাম ও সহকারী চালক জোনায়েদকে মারধর করেন উত্তেজিত শ্রমিকরা। মারধরের প্রতিবাদে লাইনের ওপর বন্ধ করে রাখা হয় ট্রেনটি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পরিদর্শক করেন পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের একটি টিম। পরে ট্রেন চালক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে বিচারের আশ্বাস দেওয়া হয়। রাত ৯টার দিকে সিরাজগঞ্জের উদ্দেশে মালবাহী ট্রেনটি আলমডাঙ্গা ছেড়ে যায়।
এ ঘটনায় রাতেই বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েম্যান হাফিজ, শহিদুল ইসলাম, মুস্তাফিজ, ছাব্বির ও হুমায়ুনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক শাহিদুল ইসলাম বলেন, কোনো স্থানে মেরামতের কাজ হলে যে স্টেশন থেকে ট্রেন ছেড়ে আসবে সেই স্টেশন মাস্টার ট্রেন চালককে মেরামতের বিষয়টি জানানোর নির্দেশনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে মালবাহী ট্রেনটি চুয়াডাঙ্গার দর্শনা স্টেশন থেকে ছেড়ে এসেছে, ওই স্টেশন মাস্টার নাজমা পারভীন চালককে মেরামতের বিষয়টি অবগত করেননি। এ কারণে শ্রমিকদের সিগন্যালে চালক গুরুত্ব দেননি বলে প্রাথমিকভাবে জেনেছি। সত্যতা যাচাইয়ে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি। প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক তদন্তে মালবাহী ট্রেনের সহকারী চালককে মারধরের ঘটনায় পাঁচ ওয়েম্যানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্তে দর্শনা স্টেশন মাস্টারের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।