চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউপি নির্বাচনে অংশ নেওয়া দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে এক মেম্বার প্রার্থীসহ উভয়পক্ষের ১২ জন আহত হয়েছেন।
সোমবার (১ নভেম্বর) রাত ৮টার দিকে সীমান্ত ইউনিয়নের মেদিনীপুর গ্রামের তেতুলতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে জীবননগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় আহতরা জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে একজনের অবস্থা অবনতি হলে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
সীমান্ত ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ মনোনীত দুই মেম্বার প্রার্থী ইসরাইল বিশ্বাসের (টিউবওয়েল মার্কা) সমর্থক এবং বর্তমান ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল আলীমের (মোরগ মার্কা) সমর্থকের মধ্যে ভোট চাওয়াকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষ হয়।
স্থানীয়রা জানায়, সোমবার রাতে জীবননগর সীমান্ত ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর প্রার্থী আব্দুল আলিমের (মোরগ মার্কা) সমর্থকরা ভোট চাইতে যায়। এসময় অপর প্রার্থী ইসরাইল বিশ্বাসের সমর্থকরা বাঁশ ও রড নিয়ে হামলা চালায়। একপর্যায়ে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে দুইপক্ষের মোট ১২ জন আহত হয়। খবর পেয়ে জীবননগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। পরে আহতদের উদ্ধার করে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১১ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। অপর একজনকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আব্দুল আলীমের পক্ষের আহতরা হলেন- সীমান্ত ইউনিয়নের মেদিনীপুর গ্রামের মৃত হারান মোল্লার ছেলে তারিখ মোল্লা (৩৫) ও তার ভাই আব্দুর রাজ্জাক (৫০), একই গ্রামের মৃত দাউদ মণ্ডলের ছেলে শওকত মণ্ডল (৪৫), আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে আব্দুল হালিম (২৫) ও মৃত কবিল মণ্ডলের ছেলে নওশের মণ্ডল (৫০)।
অপর প্রার্থী ইসরাইল বিশ্বাসের পক্ষের আহতরা হলেন- মেদিনীপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন বেল্টুর ছেলে সুমন (৩৫), একই গ্রামের তবিকুর রহমানের ছেলে তারিখ (৪০), ফকরুদ্দিনের ছেলে শান্ত (৩৬), দরুদ চৌধুরীর ছেলে কাওছার চৌধুরী (৫০), মৃত আইজেল তরফদারের ছেলে কাওছার আলী (৫০) ও তার ভাই নওশেদ আলী (৪২)।
প্রার্থী আব্দুল আলীম বলেন, রাতে আমার কর্মীরা ভোট চাওয়ার জন্য মেদিনীপুর গ্রামের তেতুলতলা নামকস্থানে পৌঁছালে ইসরাইল বিশ্বাসের কর্মীরা বাঁশ ও রড দিয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকে। এতে আমার পাঁচ জন কর্মী আহত হয়। তাদের উদ্ধার করে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এর মধ্যে তারিখের অবস্থা অবনতি হলে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। এ বিষয়ে আমি জীবননগর থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছি।
প্রার্থী ইসরাইল বিশ্বাস বলেন, আমি ঘটনার সময় ছিলাম না। খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। আসার পরই প্রার্থী আব্দুল আলীমের সমর্থকরা আমাকে মারধর করে এবং আমার গায়ের জামা কাপড় ছিড়ে দেয়। এতে আমিসহ মোট সাত জন কর্মী আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সাকিল আর সালান বলেন, রাত পৌনে ১টার দিকে তারিখ নামে একজনকে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে পরিবারের সদস্যরা। তার হাতের একটি আঙুল ভেঙে হাত থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এছাড়া শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতের চিহ্ন আছে। ধারণা করা হচ্ছে রড বা লোহা জাতীয় কিছুর আঘাত লেগেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ভর্তি করা হয়েছে।
জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এক প্রার্থীর সমর্থকরা ভোট চাইতে গেলে উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এতে সামান্য হাতাহাতির ঘটনা ঘটলেও কেউ আহত হয়নি। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। রাতেই দুই প্রার্থী বিষয়টি মীমাংসা করে নিয়েছে বলে জানান তিনি।