খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ পৌষ, ১৪৩১ | ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে প্রাইভেটকারে বাসের ধাক্কা, নিহত ৫, আহত ১০
  মাদারীপুরের কালকিনিতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ চলছে, ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা

টাকা চুরির উদ্দেশ্যেই রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ব্যাংক : ড. সালেহউদ্দিন

গেজেট ডেস্ক

রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে এত ব্যাংক দিলেন কেন-এমন প্রশ্ন রেখে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাড়তে বাড়তে এখন বাংলাদেশে ব্যাংকের সংখ্যা ৬১টি। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে যেসব ব্যাংক দেওয়া হয়েছিল, এর কোনোটাই ভালো করছে না। এসব ব্যাংকের উদ্দেশ্যই ছিল ব্যাংক থেকে টাকা চুরি করা। পদ্মা ব্যাংকের মতো এগুলোকে নাম বদলে ভালো করার চেষ্টা না করে লিকুইডেট (বিলুপ্ত) করে দেওয়াটা সবচেয়ে ভালো।

শনিবার (৩ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘ব্যাংকিং খাতে সুশাসন জোরদারে ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে ছায়া সংসদ’ বিতর্ক শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। ব্যাংকিং খাতে সুশাসন জোরদারে ব্যাংক একীভূতকরণ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিপক্ষ দল বিজয়ী হয়েছে।

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অনেক আগেই বলেছিলাম, এত ব্যাংকের অনুমোদন দিলে মার্জারের (একীভূতকরণ) সিদ্ধান্তে যেতে হবে। দেরিতে হলেও মার্জার অ্যাকুইজেশনের সিদ্ধান্তটা ভালো। তবে মার্জারের মাধ্যমে ব্যাংক লুটেরা বা দুর্নীতিবাজরা যাতে পার না পেয়ে যায়, এ বিষয়ে খুব গুরুত্বসহকারে নজর রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রলেপ দিয়ে ব্যাংক খাতের চিকিৎসা করা যাবে না। অর্থনীতির স্বার্থে এটাকে শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। আমাদের দেশে মার্জারের ভালো উদাহরণও রয়েছে। যেমন ইস্টার্ন ব্যাংক এখন একটি সবল ব্যাংক। তবে খেয়াল রাখতে হবে, ভালো ব্যাংক যেন দুর্বলের প্রভাবে নড়বড়ে হয়ে না যায়। পাশাপাশি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তা ও ব্যাংক থেকে অর্থ আত্মসাৎকারী গ্রাহকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

সাবেক এই গভর্নর বলেন, আমি জানি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অডিট রিপোর্ট বছরের পর বছর পড়ে থাকে। কিন্তু কোনো অ্যাকশন হয় না। অন্যদিকে পরিচালকরা তাদের ঋণ ভাগাভাগি করতে থাকে। এগুলো একটি অর্থনীতির জন্য খুবই খারাপ। এজন্য ব্যাংকের আইনে কিছু সংস্কার প্রয়োজন। অন্যথা যে আইন আছে, সেটার যথাযথ বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি।

প্রতিযোগীরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিগত সক্ষমতা সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তরে বলেন, এখন বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিগতভাবে দুর্বল। কোনো সিদ্ধান্ত নিতে গেলে ওপরে নির্দেশনার অপেক্ষায় থাকলে হবে না। অর্থনীতির স্বার্থে কেন্দ্রীয় ব্যাংককেই প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং এর যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হয়। দেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আইন থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয় না।

প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রতিযোগিতার বিষয়ের (ব্যাংকিং খাতে সুশাসন জোরদারে ব্যাংক একীভূতকরণ) পক্ষে প্রাইম ইউনিভার্সিটি এবং বিপক্ষে বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা অংশগ্রহণ করেন।

ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ ১০ দফা সুপারিশ উপস্থাপন করেন। এগুলো হচ্ছে-ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে আত্মসাৎকৃত অর্থ আদায়ে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করে প্রয়োজনে প্রচলিত আইনের সংস্কারের মাধ্যমে অপরাধীদের বিরুদ্ধে বিচারের ব্যবস্থা করা। আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিতে স্বাধীন ব্যাংক কমিশন গঠন করা। ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিসহ ঋণখেলাপি ও অর্থ পাচারকারীদের নামের তালিকা জাতীয় সংসদে প্রকাশ করা।

আর্থিক খাতে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিসহ ঋণখেলাপিদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা প্রদান, নতুন ঋণ প্রদান বন্ধ, দেশে-বিদেশে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির তালিকা করে এনবিআর ও দুদকের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং ব্যবসা সম্প্রসারণ করা। শুধু সবল ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংক একীভূত নয়, যারা ব্যাংক দুর্বল করার জন্য দায়ী, তাদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যাতে সরকারের ব্যাংক একীভূতকরণ প্রক্রিয়াকালীন এসব অসৎ ব্যক্তি পার পেয়ে যেতে না পারেন।

দুর্বল ব্যাংকগুলোর ক্ষতির দায় কে নেবে তা স্পষ্ট করা। একই সঙ্গে দুর্বল ব্যাংকগুলোর আমানত গ্রহণ ও বিতরণ ছাড়া অন্যসব কার্যক্রম বন্ধ করা। দুর্বল ব্যাংকের আদায় অযোগ্য ঋণ আদায়ের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ব্যাংকের কার্যক্রমের ওপর অধিক মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম না হয়। ব্যাংকের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা আলাদা করতে হবে। যাতে মালিকদের প্রতিনিধিত্বকারী পর্ষদ যেন ব্যবস্থাপনা কাজে হস্তক্ষেপ করতে না পারে এবং ব্যাংক একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার সুফল পেতে গণমাধ্যমের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করা, যাতে কোনো পক্ষপাতমূলক সংবাদ ব্যাংক একীভূত প্রক্রিয়ায় বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!