খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ পৌষ, ১৪৩১ | ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৬৫
  গাজীপুরের শ্রীপুরে বোতাম তৈরির কারখানায় আগুনে নিহত ১

চুয়াডাঙ্গাতে এতো গরম কেন

গেজেট ডেস্ক

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা চুয়াডাঙ্গা। গত কয়েক দিন ধরে মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে জেলাটির ওপর দিয়ে। গত তিন দিন ধরে চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে, আর তা থাকছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে। তাপপ্রবাহের এমন অবস্থা এ জেলায় নতুন নয়। প্রতি বছর বেশ কয়েকবার ঘুরেফিরে আসে তাপপ্রবাহ। এই জেলায় বা এর আশপাশে কেন তাপমাত্রা এমন চরমভাবাপন্ন সে প্রশ্ন অনেকের।

পরিবেশবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভৌগোলিক অবস্থান এবং স্থানীয় জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে চুয়াডাঙ্গায় তাপপ্রবাহ বেশি থাকে। ফলে শীতকালে সেখানে তীব্র শীত ও গরমকালে তীব্র গরম হয়। এলাকাটি চরমভাবাপন্নের দুষ্টচক্রে পড়ে গেছে।

চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান  বলেন, গরমের মৌসুমে চুয়াডাঙ্গায় স্বাভাবিকের চেয়ে ২-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেশি থাকে। চলতি মাসের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকবার ৪০ ডিগ্রির ওপরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬ এপ্রিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মাঝখানে কিছুদিন তাপমাত্রা কম ছিল। এরপর ১৬ এপ্রিল থেকে ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকে। ওইদিন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৭ এপ্রিল ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি , ১৮ এপ্রিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তিনি বলেন, চার পাঁচ বছর ধরে দেখছি, চুয়াডাঙ্গায় ৪০ এর কাছাকাছি থাকে। গত বছর এই সময় এ জেলার তাপমাত্রা ছিল ৪১ থেকে ৪২ ডিগ্রির ওপরে। সে তুলনায় সামান্য কম হলেও একই রকম তাপ অনুভব হচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশ স্বাধীনের পর থেকে চুয়াডাঙ্গায় ২০১৪ সালের ২১ মে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এখন পর্যন্ত এ জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর পরের বছরগুলোতে একাধিকবার তাপমাত্রা ৪০-এর ঘর পার করেছে।

আবহাওয়াবিদ জামিনুর রহমান বলেন, একটা অঞ্চলে যখন হিট ওয়েভ শুরু হয় তখন যদি এটা দ্রুত রিলিজ হতে না পারে তাহলে সেখানে গরম বেড়ে যায়। তাপ দ্রুত রিলিজ না হওয়ার অন্যতম কারণ হলো কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, গাছপালা কমে যাওয়া, জলাধার কমে যাওয়া। এসব কারণেই মূলত তাপটা রিলিজ হয় না। ফলে তাপমাত্রাটা বাড়তে থাকে।

এছাড়া জেলাটির ভৌগোলিক অবস্থানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে বিহার, কলকাতায় হিট ওয়েভ চলছে। ওখানে যখন তাপমাত্রা বেশি থাকে এখানেও বেশি থাকে। এর কারণ ভৌগোলিকভাবে চুয়াডাঙ্গা পশ্চিমবঙ্গের কাছাকাছি। পশ্চিমবঙ্গের তাপমাত্রা যখন বেশি থাকে এখানে তাপমাত্রা বেশি থাকবে এটাই স্বাভাবিক।

চুয়াডাঙ্গার এমন পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, বাংলাদেশে এপ্রিল হচ্ছে সবচেয়ে গরম মাস। এ সময় পৃথিবীতে সূর্য লম্বালম্বিভাবে আমাদের দেশে কিরণ দেয়। দেশের প্রেক্ষাপটে চুয়াডাঙ্গা এখন উত্তপ্ত। কিন্তু আমাদের দেশের পশ্চিমাঞ্চল বিশেষ করে বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এসব অঞ্চল উত্তপ্ত। ওখানকার তাপমাত্রা বাংলাদেশের চেয়ে একটু বেশি। এ কারণে পশ্চিম দিক থেকে উত্তপ্ত লু হাওয়া (শুকনো গরম হাওয়া) বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এরমধ্যে চুয়াডাঙ্গাও অন্যতম প্রবেশপথ। লু হাওয়া ও অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রার ঊর্ধ্বগতি এই দুইয়ের যুগপৎ সংমিশ্রণে আমাদের চুয়াডাঙ্গাসহ ওই অঞ্চল এপ্রিল মাসে উত্তপ্ত থাকে। একই অবস্থা থাকে মে মাসেও। এমনকি পুরো গ্রীষ্মকাল জুড়ে আসলে এ এলাকা উত্তপ্ত থাকে।

তিনি বলেন, এ সময় এ অঞ্চলে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে গরম বেশি অনুভূত হয়। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ৬০ শতাংশের যত বেশি হবে গরমের তীব্রতাও বৃদ্ধি পেতে থাকবে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ডিসিপ্লিনের প্রধান অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, এক সময় ঈশ্বরদীর আশপাশে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপমাত্রা থাকত এর অন্যতম কারণ হচ্ছে পদ্মায় পানি ছিল না। এখন চুয়াডাঙ্গাতেও একই অবস্থা। এক সময় এ অঞ্চলে প্রচুর জলাভূমি ছিল। এছাড়া এর আশপাশে বাঁওড় ছিল। যা তাপকে শোষণ করতে পারত। এখন এর পরিমাণ কমে গেছে। মূলত এটাও একটা বড় কারণ তাপমাত্রা বেশি অনুভূত হওয়ার পেছনে।

বায়ুমন্ডল দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, পাথুরে মাটি তাপমাত্রা দীর্ঘক্ষণ ধরে শোষণ করে থাকে। বালিমাটি হয় খুব তাড়াতাড়ি গরম হয়ে যায় অথবা খুব তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয়ে যায়। আমাদের দেশে প্রচুর অবকাঠামো হচ্ছে। এখন অবকাঠামো যদি বেশি হয় আর সবুজায়ন যদি কম হয় আবার পানির স্তর যদি নিচে নেমে যায় তখনই আবহাওয়া চরমভাবাপন্ন হয়ে ওঠে। চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতিও এমন। এর ফলে গরমকালে বেশি গরম থাকে, শীতকালে বেশি শীত থাকে। যা মরূকরণের লক্ষণ।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!