বাগেরহাটের চিতলমারীর সদর বাজার থেকে পাটরপাড়া-রায়গ্রাম ও ডুমুরিয়া বাজার হয়ে গোদাড়া বাজার পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবোর) বেড়িবাঁধ। বেড়িবাঁধের অধিকাংশ জায়গার দুপাশেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি রয়েছে। এই জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় ৩ শতাধিক কাঁচা-পাকা স্থাপনা। এভাবে ধীরে ধীরে সরকারের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি বেহাত হয়ে যাচ্ছে। জায়গা সরকারের হলেও পজেশন বিক্রি করে এলাকার প্রভাবশালী ভূমিখেকোরা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে দফায় দফায় অবৈধ স্থাপনা গুলোয় লালচিহ্ন দেওয়া হলেও আজও উচ্ছেদ হয়নি কোন অবৈধ স্থাপনা। ফলে ভূমিখেকো চক্র জমি দখল ও বিক্রিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে দফায় দফায় ঘটছে সংঘর্ষের ঘটনা। সচেতন মহল সংঘর্ষ রোধ ও সরকারি সম্পত্তি রক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৬/১ পোল্ডারের আওতায় চিতলমারী সদর বাজার থেকে পাটরপাড়া-রায়গ্রাম ও ডুমুরিয়া বাজার হয়ে গোদাড়া বাজার পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। বেড়িবাঁধের অধিকাংশ এলাকায় দুপাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা। এই জায়গা দখল করে প্রভাবশালীরা পাকা ইমারত নির্মাণ করেছে। ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে এভাবে গড়ে উঠেছে প্রায় তিনশতাধিক অবৈধ স্থাপনা। এই অবৈধ স্থাপনা গুলোয় বারবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন লালচিহ্নিত করলেও অদ্যাবধি কোন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হয়নি। ডুমুরিয়া বাজার এলাকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গার পজেশন বিক্রি করে ডুমুরিয়া গ্রামের মৃত বরেন বাড়ৈ ছেলে অনুপ বাড়ৈ লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে স্থানীয়রা জানান, শুধু ডুমুরিয়া বাজারেই প্রায় শতাধিক অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। তাদের মধ্যে পজেশন বিক্রিকারীরা হলো, অনুপ বাড়ৈ, হরেন বাড়ৈ, বিপ্লব বাড়ৈ, ঝন্টু সরদার, রেজাউল শেখ, জয়ন্ত মন্ডল, উজ্জল রায়, অসিত কুমার, সনজিত মন্ডল বিজয় মন্ডল ও জগদীশ মন্ডলসহ অনেকে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখলকারীরা হলেন- কিমসত শেখ, ইউসুফ, আলতাফ শেখ, কহর শেখ, ভিম বাড়ৈ, সমীর মন্ডল, সুকুমার রানা, বিশ্ব মন্ডল, হরেকৃষ্ণ, সুবল চৌধুরী ও প্রভাষ বাড়ৈসহ অনেকে। এখানে ফুট হিসাবে পজেশন বিক্রি করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার এসব স্থাপনায় লালচিহ্ন দেওয়া হলে রহস্যজনক কারণে অদ্যবধি কোন স্থাপনাই উচ্ছেদ হয়নি। যার ফলে জায়গা দখল ও পজেশন বিক্রি নিয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।
এ ব্যাপারে অনুপ বাড়ৈ পজেশন বিক্রির কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি নিজেই উজ্জল রায়ের কাছ থেকে পজেশন কিনেছি।’
এ ব্যাপারে প্রফেসর মুকুলেশ ঢালী জানান, জায়গা গুলি সরকারি সম্পত্তি। এ নিয়ে প্রায়ই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। এটা বন্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) বিকেলে বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাসুমবিল্লাহ বলেন, ‘অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য প্রায় একমাস পূর্বে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছি। সার্ভেয়ার পেলে এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
খুলনা গেজেট/এনএম