যশোরে রাইসমিল মালিক ও কৃষকরা সরকারের দেয়া কথা রাখেননি, করেছেন চুক্তিভঙ্গ। বোরো মৌসুমে মিলাররা ২৭ হাজার ৩১২ মেট্রিকটন চাল দেবে বলে চুক্তি করলেও দিয়েছেন মাত্র ১৫ হাজার ১০৫ মেট্রিকটন। জেলার ৩৫১টি রাইসমিল মালিক এ কাজ করেছেন। বাজারে ধানের দাম বেশির কথা বলে তারা চাল দেননি সরকারকে। সংগ্রহ অভিযান শেষ হওয়ায় এসব মিলারদের তালিকা করে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। একইসাথে বাতিল করা হতে পারে রাইসমিলের লাইসেন্সও।
হতাশাজনক অবস্থা ধান সংগ্রহের ক্ষেত্রেও। খাদ্য গোডাউনে ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র তিন হাজার ৬৪৪ মেট্রিকটন। অথচ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৯ হাজার ৫৬৬ মেট্রিকটন। নির্দিষ্ট সময় শেষ হওয়ার পর সরকার আরও ১৫ দিন বৃদ্ধি করলেও কোনো কাজ হয়নি। ধান বিক্রি করতে গোডাউনে আসেননি কোনো কৃষক।
সূত্র জানায়, গত ২৬ এপ্রিল থেকে সারাদেশে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু যশোরে সেটি সম্ভব হয়নি। খাদ্যবিভাগ সংগ্রহ শুরু করে মে মাসের শেষের দিকে। ৩১ আগস্ট ছিল সংগ্রহের শেষ সময়। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার ধারে কাছে না যাওয়ায় খাদ্য মন্ত্রণালয় আরও ১৫ দিন সময় বৃদ্ধি করে। সেটি শেষ হয়েছে ১৫ সেপ্টেম্বর। কিন্তু অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। কৃষক এবং মিলাররা খাদ্যগুদামমুখি হয়নি। অথচ যশোরে এ বছর বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে।
এ বছর যশোর সদর উপজেলার কৃষকদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত এক হাজার ৪০ টাকা মণ দরে ধান কিনতে অ্যাপের মাধ্যমে আবেদন চাওয়া হয়। গত বছর আমন মৌসুম থেকে যশোরে এ প্রক্রিয়ায় ধান কেনা শুরু হয়। আমন মৌসুমে সদর উপজেলার বিভিন্ন কৃষকের কাছ থেকে ২ হাজার ৮২৬ মেট্রিকটন ধান কেনে খাদ্য অধিদপ্তর। বোরো মৌসুমে ৮৭০ মেট্রিকটন বৃদ্ধি করে ৩ হাজার ৬৯৬ মেট্রিকটন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় সদর উপজেলায়। গোটা জেলায় সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৯ হাজার ৫৬৬ মেট্রিকটন ।
সদর উপজেলায় অ্যাপের মাধ্যমে আবেদনের পর লটারিতে যারা বিজয়ী হন কেবলমাত্র তারাই সরকার নির্ধারিত এক হাজার ৪০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রির সুযোগ পান। সদর উপজেলার ১৫ টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা থেকে ৮ হাজার ৬০০ কৃষক আবেদন করেন। এরমধ্যে লটারিতে বিজয়ী হন দু’ হাজার ৮৬২ জন।
বিজয়ীদের মধ্যে তিন ক্যাটাগরির কৃষক ছিলেন। তারা হচ্ছেন, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড়। কিন্তু বিজয়ী এসব কৃষকের বেশিরভাগ খাদ্যগুদামমুখি হননি।
কারণ হিসেবে খাদ্য ও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এ বছর বাজারে ধানের দাম অনেক বেশি। এ কারণে অধিকাংশ কৃষক ঝামেলায় জড়াতে চাননি। ফলে কৃষকরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান বিক্রি করেনি এ মৌসুমে।
এদিকে, চাল সংগ্রহের চিত্র প্রায় একই রকম। বোরো মৌসুমে সরকারকে চাল দেয়ার জন্য জেলার ৩৫১ মিলার চুক্তিবদ্ধ হন। তারা ২৭ হাজার ৩১২ মেট্রিকটন চাল দিবেন বলে চুক্তি করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা কথা রাখেননি। চুক্তি ভঙ্গ করেছেন তারা। ধানের দাম বেশি উল্লেখ করে পুরোপুরি চাল দেয়নি মিলাররা। অথচ চুক্তি অনুযায়ী প্রত্যেক মিলারের চাল দেয়া বাধ্যতামূলক।
খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যশোরে এ বছর ২৪টি অটো রাইসমিল এবং ৩২৭ টি হাসকিং মিল মালিক চাল দেবেন বলে চুক্তিবদ্ধ হন। চুক্তি করার পরও যেসব মিলার বিভিন্ন অজুহাতে চাল দেয়নি তাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আগামীতে তারা যাতে কোনোভাবে চুক্তিবদ্ধ হতে না পারে সেই ব্যবস্থা করবেন তারা। একইসাথে মিলের লাইসেন্সও বাতিল করা হতে পারে।
সংগ্রহ অভিযান সম্পর্কে যশোর সদর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, বোরো মৌসুমে তার গুদামে ৩ হাজার ৮৫৮ মেট্রিকটন সিদ্ধ চাল, ৬৭৩ মেট্রিকটন আতপ চাল এবং ২ হাজার ২৫১ মেট্রিকটন ধান কেনা হয়েছে। এই দুরবস্থার মধ্যে এমন সংগ্রহে খুশি তিনি।
এ বিষয়ে যশোর জেলা খাদ্য কর্মকর্তা আব্দুর রহমান বলেন, সংগ্রহের সময় শেষ হয়েছে। ধানের দাম বেশির কথা বলে চুক্তিবদ্ধ মিলাররা পুরোপুরি চাল দেয়নি। শেষ পর্যন্ত ৫৫ ভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। এখন খাদ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। যেভাবে নির্দেশনা আসবে সেইভাবে মিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা খাদ্য কর্মকর্তা।
খুলনা গেজেট / এমএম