বৈশ্বিক করোনা মহামারিতে আশঙ্কার চেয়েও বেশি পতন ঘটেছে ভারতের অর্থনীতির। দেশটির পরিসংখ্যান দফতরের প্রকাশিত সর্বশেষ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন দেখা গেছে গত তিনমাসে দেশটির জাতীয় উৎপাদন বা জিডিপি’র পতন ঘটেছে ২৩.৯ শতাংশ। ১৯৯৬ সালে ভারত ত্রৈমাসিক হিসেব প্রকাশ শুরুর পর এটাই সবচেয়ে বড় পতন। করোনাভাইরাস মহামারি এবং নাকাল করে তোলা লকডাউন এই পতনের নেপথ্যে ভূমিকা রেখেছে। বৃটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির আশঙ্কা আর্থিক মন্দার কবলে পড়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে ভারত। গত কয়েক মাসে কর্মহীন হয়ে পড়েছে ভারতের বহু নাগরিক
টানা দুইবার ত্রৈমাসিক হিসেবে কোনও দেশের জিডিপির পতন ঘটলে সেই দেশটি আর্থিক মন্দায় পড়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। আর গত তিনমাসে ভারতের জিডিপি পতনের পর আগামী তিনমাসও তা অব্যাহত থাকবে বলেই আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর এখন পর্যন্ত চারবার মন্দার কবলে পড়েছে ভারত। সর্বশেষ ১৯৮০ সালের পর এবার নতুন মন্দার কবলে পড়তে যাচ্ছে দেশটি।
ভারতের জিডিপির এই আশঙ্কাজনক পতনের নেপথ্যে ভূমিকা রেখেছে করোনাভাইরাস মহামারি। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৩৬ লাখ করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত রবিবার দেশটিতে একদিনে ৭৮ হাজার ৭৬১ জনের নতুন সংক্রমণ শনাক্ত হয়। যা ওইদিনে দুনিয়ার সব দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ শনাক্তের ঘটনা। তারপরও ভারত ধাপে ধাপে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু অব্যাহত রেখেছে। কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্বিতীয় ধাপের লকডাউন অর্থনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না। আর প্রথম ধাপের লকডাউনের প্রভাব জিডিপির সর্বশেষ হিসেবের স্পষ্ট।
করোনাভাইরাস মহামারি যখন শুরু হয় তখনই ভারতের অর্থনীতি নড়বড়ে অবস্থায় ছিল। গত বছর দেশটিতে বেকারত্বের পরিমাণ গত ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। চাহিদা কমে যাওয়ায় পণ্য উৎপাদন সঙ্কুচিত হতে থাকে আর ব্যাংকগুলো ঋণের বোঝায় চাপা পড়তে থাকে। আর সেই মুহূর্তেই শুরু হওয়া বৈশ্বিক মহামারি ভারতকে আরও নাকাল করে তোলে। মার্চের শেষ দিকে দেশটি কঠোর লকডাউন আরোপ করলে বন্ধ হতে বাধ্য হয় বহু কারখানা, সাময়িকভাবে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশটির বেশিরভাগ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ে।
লকডাউনের প্রথম মাসেই ভারতের ১২ কোটি ১০ লাখ মানুষ কাজ হারায় বলে জানায় দেশটির আর্থিক কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণকারী বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনোমি (সিএমআইই)। তবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হলে আবারও লাখ লাখ মানুষ কাজে যোগ দিতে পারবে বলেও জানায় সংস্থাটি। সেই হিসেবে জুন মাস থেকে ধাপে ধাপে দেশটিতে আর্থিক কর্মকাণ্ড শুরু হলে অনেকেই কাজ ফিরে পায়।
তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা কাজ ফিরে পাওয়া মানুষের বেশিরভাগই অনানুষ্ঠানিক খাতের। বিশেষ করে এদের বড় অংশই কৃষিকাজে নিয়োজিত। আর সেটিই ভারতীয় অর্থনীতির মূল শক্তি।
সর্বশেষ ত্রৈমাসিক হিসেব অনুযায়ী, ভারতে উৎপাদন থেকে শুরু করে খুচরা বিক্রি পর্যন্ত নানা সেবায় জড়িত বেশিরভাগ শিল্পের জিডিপিরই পতন ঘটেছে। তবে উল্টোচিত্র দেখা গেছে কৃষি এবং কৃষি সংশ্লিষ্ট খাতে। লকডাউনের প্রভাব এসব খাতে পড়লেও এবছরের বাম্পার ফলন এবং প্রান্তিক এলাকাগুলোতে কিছুটা দেরিতে করোনাভাইরাস পৌঁছানো এই খাতের জিডিপি প্রবাহ ঠিক রাখতে সহায়তা করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
খুলনা গেজেট/এআইএন