সারা দেশে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় চট্টগ্রামের মুরাদপুরে জড়ো হন কোটা আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে হঠাৎ করে ছাত্রলীগ–যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা–কর্মীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হন। এ সময় দুপক্ষই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সংঘর্ষের মধ্যে শিক্ষার্থীদের মিছিল লক্ষ্য করে চার ব্যক্তিকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। এতে তিনজন নিহত হন। আহত হন অন্তত ৩০ জন।
গুলি করা সেই চার ব্যক্তির মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। একজন মো. ফিরোজ, তিনি মহানগর যুবলীগের কর্মী। অন্যজন মো. দেলোয়ার স্বেচ্ছাসেবক লীগের সংগঠক। ফিরোজ রিভলবার নিয়ে এবং দেলোয়ার শটগান নিয়ে গুলি করেন। বাকি দুজনকে রিভলবার নিয়ে গুলি করতে দেখা গেছে। মিঠু ও জাফর নামে এই দুজনও যুবলীগের কর্মী বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যুবলীগের ফিরোজ মুরাদপুরের ত্রাস ছিলেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে থানায় একাধিক হত্যা মামলা রয়েছে। সর্বশেষ চট্টগ্রামের আলোচিত স্কুলছাত্রী তাসফিয়া আমিন হত্যা মামলার অন্যতম আসামি এই যুবলীগ কর্মী।
বেলা ২টা থেকে ষোলোশহর স্টেশনে অবস্থান নেন ছাত্রলীগ–যুবলীগের কর্মীরা। অন্যদিকে মুরাদপুরে অবস্থান নেন কোটা আন্দোলনকারীরা। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে দুই নম্বর গেট থেকে একটি মিছিল যায় মুরাদপুরের দিকে। কোটা আন্দোলনকারীরা ধাওয়া দিলে পিছু হটেন তাঁরা। কিছুক্ষণ যুবলীগের একটি মিছিল থেকে গুলি করতে দেখা যায় ফিরোজকে। একপর্যায়ে গুলি থামিয়ে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘গুলি দে, গুলি দে’। কিছুক্ষণ পর একজন গুলি এনে দেন তাঁকে। গুলি ভরে আবারও শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন ওই যুবক।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অস্ত্র নিয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগ–যুবলীগ। ছবি: আজকের পত্রিকা
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, সংঘর্ষের সময় এই চারজনের গুলিতে দুজন গুলিবিদ্ধ হন। তাঁরা দুজনই মারা গেছেন।
নিহত তিনজনের মধ্যে ওয়াসিম আকরাম চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মেহেরনামা এলাকার সবুর আলমের ছেলে। অপরজন ফারুক, তিনি পথচারী ছিলেন। ফারুকের বাড়ি কুমিল্লায়। তিনি ফার্নিচারের দোকানে চাকরি করতেন। সন্ধ্যায় মৃত ঘোষণা করা আরেকজন চট্টগ্রাম নগরের ওমরগণি এমইএস কলেজের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী মো. ফয়সাল আহমেদ শান্ত।
শিবিরের ক্যাডার থেকে যুবলীগে ফিরোজ
চট্টগ্রামের দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার ও ডাকাতির মামলার আসামি এই মো. ফিরোজ। নিজেকে যুবলীগের নেতা দাবি করে আসছেন ২০১৫ সাল থেকে। ওই বছরের ডিসেম্বরে নগরে বিলবোর্ড টাঙিয়ে আলোচনায় আসেন। ওইসময় যুবলীগের মিছিল–সমাবেশে সামনের সারিতে দেখা যেত। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে এবং ২০১৩ সালের জুলাই মাসে অস্ত্রসহ দুবার পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
সর্বশেষ চট্টগ্রামের আলোচিত স্কুলছাত্রী তাসফিয়া আমিন হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ছিলেন যুবলীগ কর্মী মো. ফিরোজ।
পুলিশ জানায়, ২০১১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে নগরের প্রবর্তক মোড়ে একটি রোগ নির্ণয়কেন্দ্র থেকে সন্ত্রাসীরা ১১ লাখ টাকা লুট করে। মারধর করা হয় একজন চিকিৎসককে। ডাকাতির ঘটনার পরদিন নগরের বায়েজিদ থানার কয়লাঘর এলাকা থেকে শিবির ক্যাডার মো. ফিরোজ ও মনিরুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ফিরোজের পাঁচলাইশের আস্তানা থেকে ১২ রাউন্ড গুলিভর্তি দুটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি গুলিসহ একটি ম্যাগাজিন, একটি একনলা বন্দুক, একটি বন্দুকের ব্যারেল, তিনটি কার্তুজ, দুটি চাপাতি উদ্ধার করে পুলিশ।
ফিরোজ ওই সময় পুলিশ হেফাজতে বলেছিলেন, ‘অস্ত্রগুলোর মালিক শিবির ক্যাডার ম্যাক্সন ও সরওয়ার। তাঁরা তাঁর কাছে এগুলো রাখতে দিয়েছিলেন।’
পুলিশ জানায়, চট্টগ্রামের শিবির ক্যাডার সরওয়ার ও ম্যাক্সনের সঙ্গে ফিরোজ চাঁদাবাজি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। ২০১১ সালে অস্ত্রসহ ধরা পড়ার পর ২০১৩ সালের ১৯ জুলাই রাতে তিন রাউন্ড গুলিভর্তি নাইন এমএম পিস্তলসহ আবারও ফিরোজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এ বিষয়ে মো. ফিরোজের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিছিলে গুলি করার কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘রিভলবার হাতে ওই ব্যক্তি আমি না।’ তবে যুবলীগের বেশ কয়েকজন জানিয়েছেন, রিভলবার হাতে ওই ব্যক্তি ফিরোজই।
মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখন আমরা মুভমেন্ট নিয়ে ব্যস্ত। ফিরোজের অস্ত্রের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
সূত্র : আজকের পত্রিকা
খুলনা গেজেট/এইচ