খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ঠা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৮ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  জুলাই অভ্যুত্থানে হামলায় অভিযুক্ত ঢাবির ১২৮ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার
  দেশ বদলাতে একক নির্দেশে নয়, টিম হয়ে কাজ করতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা
বোরো ধান চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন কৃষকরা

ঘুরে দাঁড়িয়েছে তেরখাদার অভিশপ্ত জলাবদ্ধ ভুতিয়ার বিল

তেরখাদা প্রতিনিধি

তেরখাদা উপজেলার ভুতিয়ার বিল একসময় ‘অভিশপ্ত’ বিল হিসেবে পরিচিত ছিল। বছরের পর বছর জলাবদ্ধতার অভিশাপ নিয়ে সেখানকার ৫০ হাজার মানুষ লড়াই করে বেঁচে থাকতে হতো। দীর্ঘ প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় পতিত থাকার পর ধীরে ধীরে জেগে উঠেছে অভিশপ্ত এ বিলটি। ঘুরে দাড়িঁয়েছে ভুতিয়ার বিল। বিলের ৩০-৩৫ শতাংশ জলাশয় থেকে পানি সরে যাওয়ায় চাষাবাদের উপযোগী হয়েছে। ইরি-বোরো ধান চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন কৃষকরা।

খোঁজ নিয়ে জানাযায়, এক সময় এই বিলের আশপাশে প্রায় অর্ধশত গ্রামের ৫০ হাজার মানুষের আয়-রোজগারের একমাত্র উৎস ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে বিলটি একসময় স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নেয়।

সূত্র জানায়, গত প্রায় ২৫ বছর বিলটি জলাবদ্ধ। এলাকাবাসীর দীর্ঘ আন্দোলন, সংগ্রামে বিলের জলাবদ্ধতা নিরসনের দুইটি ধাপে প্রকল্প গ্রহণ করেছিলো বিগত সরকার। বর্তমানে বিলের উচু স্থানসমূহ জেগে উঠেছে। আগামীতে বিলটি আরও জেগে উঠবে বলে আশাবাদ স্থানীয়দের।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, খুলনার তেরখাদা উপজেলা ও নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার অংশ বিশেষ নিয়ে প্রাকৃতিক ভাবে ভুতিয়ার বিলটি সৃষ্টি। ১৯৯৬ সাল থেকে ধীরে ধীরে বিলটিতে জলাবদ্ধতা শুরু হয়। ২০০০ সালে বিলের অর্ধেক স্থান পানিতে তলিয়ে যায়। ২০০৩ সালে ভুতিয়ার বিল প্রায় ২ হাজার একর জমি স্থায়ী জলাবদ্ধতার শিকার হয়। ধীরে ধীরে আশপাশের আরও কয়েকটি স্থান মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার একর জমি জলাবদ্ধ হয়। ফলে ভুতিয়ার বিল পাড়ের মানুষের মধ্যে নীরব দুর্বিক্ষ চলতে থাকে।

স্থানীয়রা জানান, এসময়ে বিল পাড়ের প্রায় ৫০ টি গ্রামের হাজার হাজার পরিবার অভাবের তাড়নায় কাজের সন্ধানে শহরে পাড়ি জমাতে থাকে। যে সব পরিবারের গায়ে মাছের গন্ধ ছিল তারা শহরমুখী হয়ে দিনমজুর, রিক্সা চালিয়ে কষ্টে দিন কাটাতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে যারা এলাকায় টিকে ছিলেন, তাদের জীবন, জীবিকার একমাত্র মাধ্যম নৌকায় করে শাপলা শামুক তোলা আর মাছ ধরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ভুতিয়র বিলের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ২৮১ কোটি টাকার একটি (২য় পর্যায়ের সংশোধিত) প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায় ২০১৩ সালে। ওই বছরের জুন থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছিল। এ প্রকল্পের আওতায় ৪৯.২৫ কি.মি. আঠারোবাকী নদী খনন, ২৯.১৫ কি.মি চিত্রা নদী খনন, ১১৭.২৫ কি.মি খাল নিস্কাশন, ৪.০২৫ কি.মি নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ, ১৫.৩৬৫ কি.মি পেরিফেরিয়ান বাধ, ৫ টি সুইচ গেইট নির্মাণ, ২টি বেইলী ব্রিজ নির্মাণ, ৯ টি সুইচ গেইট মেরামত করা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, ভুতিয়ার বিল ও পার্শ্ববর্তী নদীগুলোতে সংযোগ করে দেওয়া হয়েছে, সেই সাথে পার্শ্ববর্তী নদীগুলোর নাব্যতা বৃদ্ধি করার জন্য খনন করা হয়েছে। নদীর পানির সাথে পলি এসে বিল কিছুটা উচু হয়েছে।

জানতে চাইলে বিল সংলগ্ন নাচুনিয়া এলাকার গিয়াস খাঁ বলেন, আমাদের দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পর পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। বিলের অনেক স্থান জেগে উঠেছে। কোথাও কোথাও ১/২ ফুট পানি রয়েছে। এসব স্থানও যেগে উঠতে পারে।

কৃষক ইয়ার শেখ বলেন, এই বিলটি ছিল আমাদের রুটি রুজির একমাত্র ভরসা। দীর্ঘ ২৫-২৬ বছর ধরে বিলটি জলাবদ্ধ। বিলে আমার ৫-৬ বিঘা জমি রয়েছে। সেখানে বর্ষাকালে বুক সমান পানি থাকে। এখন প্রায় এক হাত পানি রয়েছে। জমির চারদিকে বেড়িবাধ দিয়ে সেখানে বোরো ধান চাষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেই লক্ষে কাজ করে যাচ্ছি।
একই এলাকার মোল্যা ইলিয়াস বলেন, বিলে আমার প্রায় ২ বিঘা ৪ শতক জমি রয়েছে। বিলে যখন পদ্মফুল ফোটে তখন অনেকে শহর থেকে বিল দেখতে আসেন। তাদের নৌকায় করে বিল ঘুরিয়ে দেখাই। তখন দৈনিক ৬/৭ শত টাকা পর্যন্ত আয় হয়। এখন পদ্মফুল নেই, আমার জমিতে পানি অনেকটা কমে গেছে। এ বছর চাষাবাদ করতে পারব কি না জানিনা। অন্যরা চাষাবাদ করলে আমিও করব।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শিউলি মজুমদার বলেন, প্রায় ৩৫০০ হেক্টরের ভূতিয়ার বিলটি বর্ষা মৌসুমে সম্পুর্ণই জলাবন্ধ থাকে। শুষ্ক মৌসুমে প্রায় ৪০ শতাংশ আবাদের আওয়ায় চলে এসেছে। নদী ও খাল খনন করার কারনে আরো প্রায় ৪০০ হেক্টর জমি আবাদের আওতায় এসছে। দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে জলাবন্ধ এ বিলে বর্তমানে পানি অনেকটা কমে গেছে। আস্তে আস্তে আরও পানি কমবে। কয়েকবছর আগে যেখানে কৃষকরা পৌছাতে পারতো না এবছর সেখানে ধান চাষ হচ্ছে। আশা করি ধীরে ধীরে ভুতিয়ার বিল স্থায়ী ভাবে জলাবদ্ধ মুক্ত হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সেলিম রেজা বলেন, ভুতিয়ার বিলের জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে আমাদের পরিকল্পনা আছে। গত বছর ঢাকা থেকে একটি টিম সার্ভে করে গেছে। প্রকল্পটি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। আশাকরি সরকার খুব শীঘ্রই বড় পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!