ঘাস কাটার যন্ত্র কিনতেও অনিয়ম! এমনই কাণ্ড করেছেন বাফুফের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ ও অপারেশন ম্যানেজার মিজানুর রহমান। ক্রয়াদেশ দেবার ৩ মাস আগেই কেনা হয় মেশিন। চমকে ওঠার মতো তথ্য হলো, পুরো ঘটনাটিই ঘটেছে বাফুফের কেনাকাটার অনিয়ম নিয়ে ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার তদন্তের সময়।
ফিফার তদন্ত অনুযায়ী আবু নাঈম সোহাগ তার দ্বায়িত্বের অবহেলা করেছেন সেটা প্রমাণিত। ভেঙেছেন ফিফার চারটি কোড অব এথিক্স। যার পরিপ্রেক্ষিতে নিষিদ্ধ ফুটবল ফেডারেশন সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
যদিও সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, তিনি নির্দোষ।
কিন্তু চ্যানেল টোয়েন্টফোরের অনুসন্ধান বলছে ভিন্ন কথা। ফিফার তদন্ত চলাকালীন বাফুফের এ কর্মকর্তার অনিয়ম, দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ মিলেছে। আরো স্পষ্ট করে বললে, ফিফার ক্রয়নীতি না মেনে একাধিক তারই নির্দেশে ঘাস কাটার মেশিন কিনেছে ফুটবল ফেডারেশন।
অনুসন্ধানের প্রয়োজনে যাওয়া হয় পুরান ঢাকার নবাবপুর মার্কেট, বাংলাদেশ হার্ডওয়্যারের সন্ধানে। পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সেখান থেকেই কেনা হয়েছে তিনটি ঘাস কাটার মেশিন।
দোকানের নাম বিভ্রান্ত ছড়ানোর মতই। কারণ বাংলাদেশ হার্ডওয়্যার বিক্রি করে না কোনো ধরনের ঘাস কাটার মেশিন।
অবশেষে সন্ধান মিললো বি এইচ লন মোয়ার অ্যান্ড মেশিনারিজের। এখান থেকেই বাংলাদেশ হার্ডওয়্যারের বিক্রয় রশিদে হোন্ডা ব্র্যান্ডের ঘাস কাটার মেশিন কেনা হয়।
কে এই মিজান? ফুটবল ফেডারেশনের অপারেশন ম্যানেজার। বেতন দেড় লাখ টাকা। যার নামে আছে অর্থ অনিয়মের অভিযোগ। অসংখ্য অভিযোগ। অনুসন্ধানে তিনটি ঘাস কাটার মেশিন ক্রয়েও পাওয়া গেল অনিয়ম।
ওয়ার্ক অর্ডার দেয়া হয়েছে ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩। যেখানে স্পষ্ট করে বলা আছে ৩ ডিসেম্বর ২০২২ এ নেয়া হয়েছিল কোর্টেশন। তাহলে এর আগেই কিভাবে পণ্য বুঝে পেল বাফুফে?
শাহজাহান বলেন, পাঁচ ছয় মাস আগে মেশিন নিছিলো। বলছে জায়গা মতো পৌঁছায় দিছি।
তিনটি মেশিন কিনে পাঠিয়ে দেয়া হয় মুন্সীগঞ্জ, গোপালগঞ্জ আর সিলেটে। সবকিছু স্বাভাবিক মনে হলেও, চোখ উল্টে যাবে বাফুফের দেয়া ওয়ার্ক অর্ডার আরেকটু মনোযোগ দিয়ে দেখলে। পাঠানোর তারিখ ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩। অর্থাৎ পণ্য বুঝে পেয়ে ব্যবহারও শেষ, ওয়ার্ক অর্ডার হয়েছে তারও প্রায় তিন মাস পর।
সেই ওয়ার্ক অর্ডারে আবার স্বাক্ষর করেছেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ। অনিয়মের অভিযোগের শুনানিতে জুরিখ যাওয়ার মাত্র দুদিন আগে এই ওয়ার্ক অর্ডারে স্বাক্ষর করেন তিনি। তার মানে ফিফা যে কারণে তদন্ত করেছে, শুনানির জন্য ডেকেছে সেই কাজ আরও একবার করেছেন আবু নাঈম সোহাগ।
শাহজাহান বলেন, সব মিলায় আমার সাড়ে ৪ লাখ টাকা বাকি।
দায় এড়াতে পারেন না বাফুফের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আবু হোসেনও। ক্রয় প্রক্রিয়ায় করেছেন স্বাক্ষর, দিয়েছেন গ্রিন সিগন্যাল। কিন্তু সফল হননি। অর্থ ছাড় করণের আগেই তা আটকে দিয়েছে ফিফা।