সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা বিজয়ী নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন ও ডিফেন্ডার মাসুরা পারভীনের বাড়ি সাতক্ষীরায় বইছে আনন্দের জোয়ার। জেলার এই দুই কৃতি খেলোয়াড়কে বরন করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ও জেলা ক্রীড়া সংস্থা। কিন্তু এই আনন্দের মধ্যে সাতক্ষীরায় সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) এর অবেধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে ঘরভাঙা আতঙ্কে দুশ্চিন্তায় রয়েছে মাসুরার পরিবার।
সাতক্ষীরা শহরের অদূরে বিনেরপোতা এলাকায় বেতনা নদীর তীরে সরকারি খাস জমিতে মাসুরাদের বাড়ি। সেখানে তার মা-বাবা ও দুই বোন বসবাস করেন। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে দ্বিতীয় দফায় শুরু হতে যাওয়া সওজ এর অবেধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানের অংশ হিসাবে তাদের ঘরের পেছনের দেয়ালে তিনটি ক্রস চিহ্ন দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের আগে ওই ঘর সরিয়ে না নিলে বুল ডোজার দিয়ে তা ভেঙে গুড়িয়ে দেয়া হবে। মাসুরা পারভীনের পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে একাধিকবার জানানোর পরও এখনো পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। কিন্তু উচ্ছেদ অভিযান শুরুর আর মাত্র চারদিন বাকি আছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না দিলে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা নিয়ে বাড়ি ফিরে হয়তো গৃহহারা হতে হবে ডিফেন্ডার মাসুরা পারভীনকে।
এ বিষয়ে মাসুরার বাবা রজব আলী বলেন, ২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৮ সাফে আমার মেয়ের একমাত্র গোলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে বাংলাদেশ। আমাদের থাকার জায়গা না থাকার বিষয়টি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর নজরে আসে। তখন তিনি আমাদের মাথা গোজার ঠাঁই করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু আমাকে যে জমি দেওয়া হয় সেখানে ১৫ ফুট পানি জমে ছিল। বিভিন্ন দফতরে বহুদিন ছোটাছুটির পর সহায়তা না পাইনি। বাধ্য হয়ে মাসুরার বঙ্গমাতা গোল্ড কাপের তিন লাখ টাকা দিয়ে মাটি ভরাট করি। সেই সময় মাসুরা ২৮ দিন বাড়িতে ছিল। তার ইচ্ছা ছিল দুই দিন বাড়িতে থেকে ঢাকায় যাবে। মেয়ের খেলার পুরস্কারের টাকা দিয়ে বাড়ি তৈরি করি। এরপর মাত্র দুই দিন নতুন ঘরে থেকে ঢাকায় খেলতে চলে যায় মাসুরা।
তিনি আরও বলেন, এর আগে সাতক্ষীরা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইটাগাছা পূর্বপাড়ায় একটি জরাজীর্ণ ভাঙাচোরা দোচালা ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতাম। চাল ও দেয়াল খসে পড়ছিলো। মাসুরা বাধ্য হয়ে তার সঞ্চিত টাকা দিয়ে এই ঘর করেছে। আগে ভ্যানে করে এলাকায় ফল-মূল বিক্রি করে সংসার চালাতাম। অসুস্থতার কারণে এখন আর সেটাও করতে পারি না। সরকারিভাবে পাওয়া আট শতক জমিতে এত টাকা খরচ করে বাড়ি বানিয়ে এখন আমরা প্রায় নিঃস্ব। নিজে কাজ করতে পারি না। মেয়ের খেলার টাকায় সংসার চলে এখন। সড়ক ও জনপথ বিভাগ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করবে। সেই হিসেবে আমাদের বাড়িতে ক্রস চিহ্ন দিয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে ইউএনওর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে মাসুরা। তখন ইউএনও বলেন, ‘সড়ক বিভাগের সীমানার মধ্যে আপনার বাড়ি পড়লে আমাদের করার কিছু নেই। ফলে এই মুহুর্তে আমাদের থাকার শেষ আশ্রয়স্থলটি ভেঙে দিলে অসুস্থ স্ত্রী ও মেয়েদের নিয়ে কোথায় থাকবো? রাস্তায় নামা ছাড়া আরা কোন গতি থাকবে না আমাদের। তিনি সওজ এর উচ্ছেদ অভিযান থেকে নিজেদের বাড়িটি রক্ষার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
মাসুরার মা ফাতেমা বেগম বলেন, ‘মেয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে ফিরবে। দেশের মানুষ আনন্দ করছে। কিন্তু আমরা তো দুশ্চিন্তায় আছি। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সরকারি জায়গায় থাকায় সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করবে। আমাদের ঘরের পেছনে ক্রস চিহ্ন দেওয়া হয়েছে। ঘর ভেঙে দিলে থাকবো কোথায়?’
এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা (ইউএনও) ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, মাসুরাদের ঘরে ক্রস চিহ্ন দেওয়ার বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি।
সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘সরকারিভাবে জমি পাওয়ার প্রমাণপত্র নিয়ে উচ্ছেদের দিন উপস্থিত থাকলে অভিযানে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সিদ্ধান্ত নেবেন। হয়ত ভুল করেও ক্রস দিতে পারে। এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনও কারণ নেই বলে জানান তিনি।
খুলনা গেজেট/ টি আই