বাউল সম্রাট লালনশাহের জন্মভুমি ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলা। আবহমানকাল ধরে এই উপজেলায় বিনোদনের খোরাক যুগিয়েছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা। কিন্তু কালের বির্বতনে মানুষ আজ ভুলতে বসেছে, বিলুপ্তপ্রায় ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা। বাংলার ঐতিহ্যের অংশ লাঠিখেলা নিয়ে মানুষের আগ্রহ ছিল অনেক। এক সময় প্রতিটি গ্রামেই লাঠি খেলার পৃথক পৃথক দল থাকতো। কিন্তু বর্তমানে লাঠিখেলার নতুন করে কোন সংগঠন বা দল তৈরি হচ্ছেনা। আধুনিকতার ছোয়া আর প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় হারাতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা। ঢাক-ঢোলের তালে তালে নাচা নাচি আর লাঠি চালনার কলাকৌশল দেখে মুগ্ধ হতো মানুষ, অন্য দিকে প্রতিপক্ষের হাত থেকে আত্মরক্ষার কৌশল অবলম্বনের প্রচেষ্টা সম্বলিত টান টান উত্তেজনার একটি খেলার নাম লাঠি খেলা। এ খেলা একটি ঐতিহ্যগত মার্শাল আর্ট।
এক সময় উপজেলার তৈলটুপি, হরিয়ারঘাট, দোবিলা, জোড়াদাহসহ ৮ ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি গ্রামেই সাধারণ মানুষকে নবান্নের শুরু থেকে এই খেলা করতে দেখা যেত। তাছাড়াও বিভিন্ন উৎসব-যেমন বাংলা বর্ষবরণ, বিবাহ, সুন্নতে খাতনা, চড়ক পূজা, মহরম ইত্যাদি উপলক্ষে বিভিন্ন গ্রামে লাঠি খেলার আয়োজন করতো। এক্ষেত্রে সাধারণত কোন লাঠিয়াল দলকে ভাড়া করে আনা হতো।
হাজার হাজার নারী পুরুষকে এক সময় লাঠি খেলা বেশ আনন্দের খোরাক যুগিয়েছে। মানুয়ের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছিল এ খেলাটি। দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসত মানুষ এ খেলা দেখার জন্য। বিভিন্ন জায়গায় মাঝে মধ্যে এ লাঠি খেলা দেখা গেলেও বর্তমানে তা খুব সীমিত। ঈদুল ফিতরের পরে উপজেলার কয়েকটি গ্রামে লাঠি খেলার খবর পাওয়া গেছে। লাঠি খেলা দিন দিন বিলুপ্তি হওয়ার কারণে এর খেলোয়াড়ের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। তাই তৈরি হচ্ছে না কোন নতুন খেলোয়াড়। আর পুরানো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়রা অর্থের অভাবে প্রসার ঘটাতে পারছেনা এ খেলা। তাই আবহমান বাংলার বিনোদনের উৎস লাঠি খেলা আর চোখে পড়ে না।
এ বিষয়ে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের প্রবীণ খেলোয়াড় (লাঠিয়াল) রমজান আলী বলেন, ‘আমার একটি লাঠি খেলার দল আছে। আমার বাবা দাদাও লাঠি খেলা করতো। এখন আমার দলের সদস্য সংখ্যা ১০-১২ জনের মত, আগে সংখ্যাটা বেশি ছিল। আমার এই বাপের ঐতিহ্য ধরে রাখতে অনেক কষ্ট হচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এখন আর আগের মতো খেলোয়াড় পাওয়া যায় না খেলার জন্য। আগের মত বায়না পাওয়া যায় না কোন অনুষ্ঠানে তাই কোন আয় হচ্ছে না এ খাত থেকে। সে জন্য আমাদের খেলার প্রতি মনোনিবেশ কমে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি এবং ব্যক্তি সহযোগিতা পেলে হয়তো ঐতিহ্যবাহী এই লাঠিখেলাটি ধরে রাখা যাবে।
খুলনা গেজেট/এনএম