গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার নলুয়া দক্ষিণপাড়া গ্রামে জোয়ারের পানিতে প্রায় ২৫ একর জমির বাঙ্গির ক্ষেত ডুবে গেছে। এতে শতাধিক কৃষকের অর্ধ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্থদের দাবী। হঠাৎ করে ক্ষেতে পানি ঢুকে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ঋণগ্রস্ত কৃষক। খবর পেয়ে ক্ষেত পরিদর্শনে যান উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ।
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার বাঙ্গির সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে। নলুয়া, বরুয়া, হিজলবাড়ি, মাছপাড়া, চকপুকুরিয়াসহ বিভিন্ন গ্রামের ২৫০ হেক্টর জমিতে বাঙ্গির ফলন হয়েছে বেশ ভালো। কিন্তু ক্ষেত থেকে বাঙ্গি তোলার আগ-মুহুর্তে নলুয়া গ্রামে কে বা কারা রাতের আধারে রাস্তার বাঁধ কেটে দেয়। এতে শতাধিক কৃষকের ২৫ একর বাঙ্গি ক্ষেতে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে। তলিয়ে যায় ক্ষেত। ফসল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক।
বাঙ্গি চাষের আয় থেকে চলতো ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া ও সংসার খরচ। ধার-দেনা ও ব্যাংক লোন করে এসব জমিতে বাঙ্গির চাষ করেছেন কৃষকেরা। জমির ফসল নষ্ট হওয়ায় সংসার চালনা ও ঋণ পরিশোধ করা কৃষকের মাথার বোঝা হয়ে দাড়িয়েছে। দ্রুতই ক্ষেত থেকে পানি নিষ্কাসনসহ ক্ষতি পূরণের দাবি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক-কৃষাণীরা।
নলুয়া দক্ষিণপাড়া গ্রামের কুসুম বিশ্বাস জানিয়েছেন, প্রতি বছরের ন্যায় তিনি এ বছর ধারদেনা করে দেড় হেক্টর জমিতে বাঙ্গি চাষ করেছেন। কিন্তু জমিতে পানি ঢুকে পড়ায় তার ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। বাঙ্গি চাষ করে যে লাভ হয় তা থেকে দেনা দেওয়ার পর ছেলে-মেয়ের পড়াশুনা করান তিনি। এবছর কি ভাবে সংসার চালাবেন, ছেলে-মেয়ের পড়াশুনা করাবেন বা দেনা পরিশোধ করবেন তা নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
একই গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত সুমিন বিশ্বাস, বিষ্ণু বাইন, যুগল বাইন, জয়দেব রায়, দুলাল রায়, হরপ্রসাদ রায়, কিশোর রায়সহ অনেকে জানিয়েছেন, রাতে কে বা কারা রাস্তা কেটে দেওয়ায় মুহুর্তেই তাদের ক্ষেতে পানি ঢুকে পড়ে। সকালে এসে তারা দেখেন তাদের বাঙ্গি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে তাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এই ফসলের ওপর তারা নির্ভরশীল। তাই তারা সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।
কোটালীপাড়া উপজেলার কলাবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট বিজন বিশ্বাস জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে কে বা কারা রাস্তা কেঁটে মাছ ধরেছে। এতে নলুয়া দক্ষিণপাড়া গ্রামে বাঙ্গি ক্ষেতে পানি ঢুকে পড়ে। এ গ্রামের অধিকাংশ কৃষক বিভিন্ন সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে বাঙ্গি ও তরমুজের চাষ করেন। এতে শতাধিক কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
কোটালীপাড়া উপজেলার কলাবাড়ী ইউনিয়নের কালীগঞ্জ ব্লকের উপ সহকারী কৃষি অফিসার রমেন্দ্রনাথ হালদার জানিয়েছেন, খবর পেয়ে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের ক্ষেত পরিদর্শন করেছি। তাদের তালিকাও তৈরী করছি। যাতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সহযোগিতা পান।
কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফেরদৌস ওয়াহিদ জানিয়েছেন, খবর পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাঙ্গি ক্ষেত পরিদর্শন করে বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্য করার চেষ্টা করবেন বলেও তিনি জানান।