গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিকুর রহমান মিয়া জামানত হারিয়েছেন। তিনি মুকসুদপুর উপজেলা অওয়ামী লীগের সভাপতি। গোপালগঞ্জ আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন মানেই নিশ্চিত বিজয়।
কিন্তু ১৫ জুনের মুকসুদপুর পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী বিজয়ী হতে পারেননি। তিনি ৫ জন প্রার্থীর মধ্যে পঞ্চম হয়েছেন। হারিয়েছেন জামানত। এই প্রার্থী আওয়ামী লীগকে চরম লজ্জায় ফেলেছেন বলে মন্তব্য করেছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।
মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভা নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আশ্রাফুল আলম শিমুল জগ প্রতীক নিয়ে ৬ হাজার ১৫৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে মুকসুদপুর পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আহজ্জ্বাত মহসিন খিপু মিয়া মোবাইল প্রতীকে পেয়েছেন ৪ হাজার ৫৩৩ ভোট।
সাবেক মেয়র ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সাজ্জাদ করিম মন্টু চামচ প্রতীকে ১ হাজার ৪৪৯ ভোট পেয়েছেন। স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সাইফুল আহম্মেদ বিদ্যুৎ নারকেল গাছ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১ হাজার ৩২৩ ভোট। আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আতিকুর রহামান মিয়া নৌকা প্রতীক নিয়ে ৬০৪ ভোট পেয়েছেন। বিজয়ী প্রার্থীর চেয়ে নৌকার প্রার্থী ৫ হাজার ৫৫০ ভোট কম পেয়েছেন।
মুকসুদপুর পৌরসভার রির্টানিং অফিসার আলাউদ্দিন আল মামুন জানান, যত ভোট কাস্ট হবে তার ৮ ভাগের ১ ভাগ ভোট না পেলে প্রার্থী জামানত হারাবেন। মুকসুদপুর পৌরসভার মোট ভোট ১৭ হাজার ৬২৭। এরমধ্যে কাস্ট হয়েছে ১৩ হাজার ৯৭৮টি ভোট।
নাম প্রকাশ না কারার শর্তে একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা জানান, আতিকুর রহামান মিয়া ৫ বছর আগে নৌকা প্রতীক নিয়ে মুকসুদপুর পৌরসভার মেয়র নির্বাাচত হন। তখন নেতা-কর্মী সমর্থকরা তার পক্ষে নামেন। জনগণের দ্বারে দ্বারে ভোট চেয়ে তাকে মেয়র নির্বাচিত করে আনেন। মেয়র নির্বাচিত হয়ে তিনি ভোটার ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দেন। দিন দিন তিনি ভোটার, দল ও নেতা কর্মীদের কাছ থেকে দূরে সরে যান। তার জনপ্রিয়তা কমে যায়।
‘মুকসুদপুর পৌরসভার ১৫ জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে আতিকুর রহমান মিয়াকে ২য় বারের মতো নৌকার প্রার্থী করা হয়। তাকে সাধারণ ভোটাররা সেভাবে গ্রহণ করেন নি। আতিকুর রহমান মিয়ার জামাতা মুকসুদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কাবির মিয়া তার পক্ষে ভোটে নামেন। তিনি নৌকার প্রার্থীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটি জায়গায় নিয়ে যান।’
‘কিন্তু হঠাৎ করে নির্বাচনের ৬ দিনে আগে উপজেলা চেয়ারম্যান কাবির মিয়া নৌকা প্রার্থীর পক্ষ ত্যাগ করেন। তিনি স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আহজ্জাত মহসিন খিপু মিয়াকে সমর্থন দেন। তার পরের দিন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী আতিকুর রহমান মিয়া নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বলে মুকসুদপুরে গুজব রটে যায়।’ যোগ করেন তারা।
নেতারা আরও জানান, পরে তিনি মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ব্রিফিং করে জানান, তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াননি। একটি মহল তার নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার বিষয়ে গুজব ছড়াচ্ছে। তিনি শেষ পর্যন্ত নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে নির্বাচনে লড়ে যাবেন বলেও ঘোষণা দেন।
নৌকার প্রার্থী অতিকুর রহমান মিয়া গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে জামানত হারিয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগকে লজ্জায় ফেলে দিয়েছেন বলেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে মুকসুদপুরের অনেক নেতা মন্তব্য করেছেন। তারা আরও বলেন, মুকসুদপুরে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় প্রার্থীর অভাব নেই। জনপ্রিয় কাউকে নমিনেশন দিলে তিনি বিজয়ী হতেন। আওয়ামী লীগের এমন ভরাডুবি হতো না।
মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম সিকদার বলেন, নেতাকর্মীদের নৌকার প্রার্থী আতিকুর রহমান মিয়া গুছিয়ে নিতে পারেননি। ৫ বছর তিনি মেয়র ছিলেন। এ সময়ের মধ্যেও তিনি নিজের মাঠ গোছাতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি ২য় বার নৌকার প্রার্থী হন। দলের মধ্যে কিছু সমস্যা ছিলো। বিষয়টি নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা হবে। প্রার্থী হয়ে ভালোই প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলেন।
‘কিন্তু তার জামাতা উপজেলা চেয়ারম্যান কাবির মিয়া নির্বাচনের ৬ দিন আগে শ্বশুরের পক্ষত্যাগ করেন। তারপর থেকেই নৌকার প্রার্থীর অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। ৪/৫ দিন নৌকার তেমন কোনো প্রচার-প্রচারণা ছিলো না। নির্বাচন ছেড়ে দেওয়ার মতই অবস্থায় ছিলেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর। এ কারণেই এমন বিপর্যয় ঘটেছে। তিনি জামানত খুইয়েছেন। এটি আমাদের জন্য চরম লজ্জা।’ যোগ করেন তিনি।
খুলনা গেজেট/ আ হ আ