ঠাকুরগাঁও থেকে ধরা পড়ল ভয়ংকর সেই গৃহকর্মী রেখা। বৃদ্ধা গৃহকর্ত্রীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনার পরই ঢাকা ছেড়ে পালিয়ে ছিলেন ঠাকুরগাঁওয়ে। বুধবার (২০ জানুয়ারি) গভীর রাতে শাহজাহানপুর থানা পুলিশের একটি দল রাণীশংকৈল ও বালিয়াডাঙ্গি থানার সীমান্তবর্তী কাশিপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে।
শাজাহানপুর থানা পুলিশ জানায়, ঘটনার পর প্রথমে ডেমরায় আশ্রয় নেয় রেখা। পরে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য পালিয়ে যায় ঠাকুরগাঁওয়ে মামার বাসায়।
এদিকে চুরি করা টাকার মধ্যে এক লাখেরও বেশি খরচ করে ফেলেছিলেন তিনি। উদ্ধার করা হয় ৬০ হাজার টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও মোবাইল ফোন। রেখাকে আজই নিয়ে আসা হবে ঢাকায়। হাজির করা হবে আদালতে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ওই বৃদ্ধাকে নগ্ন করে চরম নির্যাতন চালায় সেই গৃহকর্মী। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সোমবার (১৮ জানুয়ারি) সকাল সোয়া দশটা। প্রায় তিন বছর ধরে কিডনীসহ নানা সমস্যায় ভোগা বিলকিস বেগম শুয়ে ছিলেন বিছানায়। পরম যত্নে তার সেবা করছেন রেখা নামে গৃহকর্মী। কিন্তু পরম মমতার পেছনে যে কত ভয়ংকর পরিকল্পনা লুকিয়ে ছিল তা ভাবলে শিউরে উঠবে যে কেউ।
জোর করে বিলকিস বেগমকে বাথরুমে ঢোকান রেখা। এরই মাঝে খুলে ফেলে তার শরীরের সব কাপড়। শীতের সকালে বৃদ্ধার গায়ে ইচ্ছেমতো ঢালা হয় ঠান্ডা পানি। কিন্তু ভেতরে গৃহকর্ত্রীকে আটকাতে না পেরে বেরিয়ে আসে রেখার আসল চেহারা।
যে লাঠি বৃদ্ধ বয়সে ছিল ভরসা, তা দিয়েই শুরু হয় মার। মার খেয়ে ফ্লোরে পড়ে গেলেও ক্ষান্ত হননি একের পর এক আঘাত করা হয় মাথায়। একপর্যায়ে হাতের কাছে যা পেয়েছে তা দিয়েই চালিয়েছে নির্যাতন। আলমারির চাবির জন্য বুকের উপর চেপে বসে। বটি হাতেও তেড়ে আসেন রেখা। এসব কিছুর মাঝে তার লক্ষ্য আলমারি। একসময় অসহায়ের মতো আত্মসমর্পণ করেন বৃদ্ধা বিলকিস বেগম। গলা থেকে চেইন খুলে পরে নেয় আয়েশি ভঙ্গিতে পরখ করে নেন হাতের বালা।
তারপর আলমারির চাবির সন্ধান পায় নিষ্ঠুর এ গৃহকর্মী। কিন্তু খুলতে না পেরে রক্তাক্ত, অসুস্থ বৃদ্ধাকে টেনে নিয়ে বাধ্য করেন আলমারি খুলে দিতে। ড্রয়ার খুলে স্বর্ণ, নগদ টাকা, মোবাইল সবই নিয়ে নেয় রেখা।
পুরোটা সময় বিবস্ত্র বৃদ্ধা, নিজের হাতেই রক্ত থামাতে মাথায় বাঁধেন কাপড়। সব হাতানোর পর কক্ষে তালা দেয় রেখা। তারপর খুলে আনে টিভি। নিয়ে আসে ব্যাগ। সবকিছু গুছিয়ে ফাকা বাসায় আহত বৃদ্ধাকে ফেলে বেরিয়ে যায় ভয়ংকর এ গৃহকর্মী।
খুলনা গেজেট/এমএম