রাজধানীর গুলশান-২ নম্বরে মিথ্যা রেকর্ডপত্র তৈরি করে সরকারের পরিত্যক্ত সম্পত্তি (বাড়ি) বিক্রি, হস্তান্তর ও নামজারির মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগে রাজউকের সাবেক দুই চেয়ারম্যানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। মঙ্গলবার দুদক উপপরিচালক ইয়াছির আরাফাত কমিশনের ঢাকা-১ কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন। গুলশান-২ নম্বরের ১০৪ নম্বর সড়কের ২৭/বি বাড়িটি ক্রয়সূত্রে মালিক খুলনা-৪ আসনের এমপি আবদুস সালাম মুর্শেদী। এরই মধ্যে দুদক জানতে পেরেছে, জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে তাঁর কাছে বাড়িটি বিক্রি করা হয়েছিল। ফলে বাড়িটি কেনার ক্ষেত্রে জালিয়াতির দায় তিনি এড়াতে পারেন না। তারপরও অদৃশ্য কারণে সালাম মুর্শেদীকে এ মামলায় আসামি করা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বাড়িটি জালিয়াতিপূর্ণভাবে বিক্রি করা হয়েছে এই তথ্য জানার পরও সেটি কেনায় সালাম মুর্শেদীকে মামলার চার্জশিটে আসামি করা যাবে। তবে চার্জশিটে আসামি করা না হলে আদালত তাঁর নাম চার্জশিটভুক্ত করতে সম্পূরক চার্জশিট দেওয়ার আদেশ দিতে পারেন। মামলার আসামিরা হলেন রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন খাদেম, আরেক সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী এম আজিজুল হক, সাবেক সদস্য (এস্টেট) এম নুরুল হক, সাবেক পরিচালক আবদুর রহমান ভূঁঞা, সাবেক উপপরিচালক (এস্টেট) আজহারুল ইসলাম, রাজউকের সহকারী পরিচালক (নিরীক্ষা ও বাজেট) শাহ মো. সদরুল আলম ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক হাবিব উল্লাহ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক সহকারী সচিব আবদুস সোবহান, সাবেক শাখা সহকারী মাহবুবুল হক এবং কক্সবাজারের রামুর বাসিন্দা মীর মোহাম্মদ হাসান ও তাঁর ভাই মীর মো. নুরুল আফছার।
নথি জালিয়াতির মাধ্যমে সালাম মুর্শেদীকে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন বাড়িটি বরাদ্দ দেওয়া হয়– এমন অভিযোগ তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ২০২২ সালের ১১ আগস্ট দুদকে আবেদন করেন তৎকালীন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, বর্তমানে এমপি সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। দুদক অভিযোগটি আমলে না নেওয়ায় একই বছরের ৩০ অক্টোবর হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। রিটে ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল, ২০১৬ সালের ২০ জানুয়ারি এবং ৪ জুলাই রাজউক চেয়ারম্যানকে দেওয়া গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তিনটি চিঠি যুক্ত করা হয়। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে দেওয়া চিঠিতে পরিত্যক্ত বাড়ির তালিকা থেকে বাড়িটি অবমুক্ত না হওয়ার পরও সালাম মুর্শেদী কীভাবে সেটি দখল করে আছেন, রাজউক চেয়ারম্যানের কাছে এ ব্যাখ্যা চেয়েছিল গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
২০২২ সালের ১ নভেম্বর এ-সংক্রান্ত রিটের শুনানিতে ১০ দিনের মধ্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, রাজউক চেয়ারম্যান এবং সালাম মুর্শেদীকে হলফনামা আকারে নথি দাখিল করতে বলেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে রুলে পরিত্যক্ত সম্পত্তির ‘খ’ তালিকাভুক্ত বাড়িটি বেআইনিভাবে দখলের অভিযোগে সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব, রাজউক চেয়ারম্যান, দুদক চেয়ারম্যান, ঢাকা জেলা প্রশাসক ও সালাম মুর্শেদীকে রুলের জবাব দিতে বলেছিলেন আদালত। এরপর দুদক অভিযোগটি আমলে নিয়ে অনুসন্ধান করে মঙ্গলবার মামলা করে।