খুলনা, বাংলাদেশ | ১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  প্রীতি ম্যাচ : মালদ্বীপকে ২-১ গোলে হারাল বাংলাদেশ, সিরিজ শেষ হলো ১-১ সামতায়
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৯৪
  আগামীর বাংলাদেশ হবে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতার : ড. ইউনূস
  জুলাই-আগস্টে নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশে সময় লাগবে : উপদেষ্টা আসিফ

গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ চলছেই, ইসরায়েলে যুদ্ধকালীন সরকার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ইসরায়েলের অব্যাহত বিমান হামলায় কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা। এ যেন মৃত্যু আর আতঙ্কের উপত্যকা। আকাশে যুদ্ধবিমানের বিকট শব্দ। চারদিকে বিধ্বস্ত ভবনের ইট-পাথর। এরই মধ্যে গাজায় মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ১০০ ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছেন পাঁচ হাজারের বেশি।

অন্যদিকে, ইসরায়েলে হামাসের হামলায় মৃত্যু বেড়ে ১ হাজার ২০০ ছাড়িয়েছে। জ্বালানির অভাবে গাজার একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে।

গাজার হামলা জোরদার করতে এবং উত্তরাঞ্চলে হিজবুল্লাহর হামলা ঠেকাতে রিজার্ভের তিন লাখ সেনা তলব করা হয়েছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রের প্রথম চালান ইসরায়েলে পৌঁছেছে। বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে গঠন করা হয়েছে একটি যুদ্ধকালীন ঐকমত্যের সরকার। গাজা সীমান্তের কাছে বিপুলসংখ্যক সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। বিবিসির কূটনীতিক প্রতিনিধি পল অ্যাডামস জানান, এটা অনেকটা নিশ্চিত যে শিগগির ঘনবসতিপূর্ণ গাজা দখলের চেষ্টা চালাবে ইসরায়েল।

মার্কিন এক কর্মকর্তা জানান, গাজা থেকে মার্কিনি ও বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তারা ইসরায়েল ও মিসরের সঙ্গে আলোচনা করছেন। তবে মিসর বলছে, তাদের সঙ্গে থাকা গাজার স্থলবন্দর দিয়ে তারা উপত্যকাটিতে খাদ্যদ্রব্য ও ওষুধ পাঠাতে চায়। তারা অন্য কোনো দিকে সীমান্ত খুলে দিয়ে বেসামরিক লোকজনকে পালাতে দিতে চায় না। বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার সিএনএনকে বলেন, গাজায় থাকা মার্কিনিদের বের করে আনার ব্যবস্থা করা উচিত।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, দক্ষিণাঞ্চলীয় নেভাতিম বিমানঘাঁটিতে অস্ত্র নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি কার্গো বিমান মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অবতরণ করেছে। ওই দিন এক ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হামাসের হামলার কঠোর সমালোচনা ও নিন্দা করেছেন। তিনি এ হামলার ঘটনাকে ‘নিখাদ মন্দের কর্মকাণ্ড’ বলে বর্ণনা করেন। ওই হামলায় এ পর্যন্ত ১৪ মার্কিনির নিহত হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রয়োজনে সবকিছুই দেবে।

গাজায় হামলার পাশাপাশি লেবাননে হিজবুল্লাহর স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। লেবাননের সংগঠনটি বলছে, ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় গত সোমবার তাদের তিন সদস্য নিহত হন। এর প্রতিবাদে তারা ইসরায়েলের অভ্যন্তরে রকেট ছুড়ছে। অধিকৃত পশ্চিম তীরের নাবলুসে ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে বুধবার তিন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

চলমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি ইসরায়েলের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে তেলআবিবে পৌঁছেছেন। হামাসের হামলার নিন্দা জানিয়েছেন ব্রিটেনের রাজা চার্লস। ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টোলটেনবার্গ বলেছেন, আত্মরক্ষার অধিকার ইসরায়েলের আছে। তবে এ হামলা যেন আনুপাতিকভাবে হয়। যতদূর সম্ভব বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি ঠেকানো সম্ভব হয়।

আলজাজিরা জানায়, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে একটি জরুরি ঐকমত্যের সরকার গঠনে সম্মত হয়েছেন বিরোধী দলের নেতা বেনি গাঞ্জ। গতকাল কয়েক ঘণ্টার আলোচনা শেষে তারা ‘যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা’ গঠনে সম্মতি প্রকাশ করেন। এক যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, নতুন এ মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকবেন বেনি গাঞ্জও। মন্ত্রিসভায় যুদ্ধ সংশ্লিষ্টতা ছাড়া অপ্রাসঙ্গিক কোনো বিল বা আইন পাস করা হবে না।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র মেজর ড্যারন স্পাইলম্যান জানান, তারা রিজার্ভে থাকা তিন লাখের বেশি সেনাসদস্যকে তলব করেছেন। বুধবার তিনি সিএনএনকে বলেন, এমন কোনো পরিবার নেই, যার অন্তত এক সদস্যকে তলব করা হয়নি। আরেক মুখপাত্র বলেন, তাদের লক্ষ্য হামাসকে পুরোপুরি নিরস্ত্র করা, যাতে যুদ্ধ শেষে ইসরায়েলের বেসামরিক লোকজনের ওপর হামলার সক্ষমতা তাদের না থাকে।

গভীর মানবিক সংকট

অব্যাহত হামলার প্রেক্ষাপটে গাজার হাসপাতালগুলোতে তিল ধারণের জায়গাও নেই। সেগুলোতে ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতি তীব্র হয়েছে; নেই বিদ্যুৎ। বুধবার চিকিৎসকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স সতর্ক করে বলেছে, গাজায় অতিদ্রুত মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। এ পর্যন্ত কয়েক লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন; বহু লোক খাদ্য ও বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছেন। পানি ও জ্বালানির সংকট দেখা দিয়েছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘনবসতিপূর্ণ গাজায় এমনিতেই মানবিক সংকট বিদ্যমান। ইসরায়েলের হামলা সেটিকে আরও গভীর করেছে। হামাসের হামলার পর ইসরায়েল গাজায় সর্বাত্মক অবরোধ দিয়েছে। সেখানে সব ধরনের সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার পর গাজার ২২ লাখ মানুষের জন্য খাদ্য, জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও পানি দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। ওয়াদ আল-মাঘরাবি বলেন, তারা বিদ্যুৎ ও পানি ছাড়াই বাস করছেন। তাঁর শিশুসন্তানের ন্যাপি শেষ হয়ে গেছে; ওর জন্য মাত্র আধা বোতল দুধ আছে। তাঁর প্রশ্ন, ইসরায়েলে কি তাঁর শিশুসন্তান হামলা চালিয়েছিল?

গাজায় নিরাপদ জায়গা বলে কিছু নেই

‘আমরা কোথায় যাব? এখানে কোথায় নিরাপদ, নিরিবিলি ও শান্ত জায়গা আছে?’ গাজার রিমাল এলাকায় একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের বাসিন্দারা বিবিসিকে এ প্রশ্নটি করেন। ওই বাসিন্দা বলেন, তিনি জীবনের সবচেয়ে কঠিন সাত ঘণ্টা কাটিয়েছেন এখানে। কারণ, ইসরায়েলি বাহিনী দফায় দফায় বিমান হামলা চালাচ্ছে।

গত শনিবার ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে হামলা চালায়। জবাবে গাজায় একের পর এক বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এসব হামলায় গাজার আবাসিক ভবনের পাশাপাশি সরকারি ভবন, টেলিফোন কোম্পানির অফিস, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতালসহ নানা স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

রিমাল গাজার অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত। ফিলিস্তিনিদের মধ্যে যারা ধনাঢ্য, তারা রিমালে থাকেন। ওই এলাকার বাসিন্দারা সোমবার রাতের কথা বহুদিন ভুলতে পারবেন না। রাতের আঁধার কাটিয়ে যখন মঙ্গলবার ভোরের আলো ফুটে ওঠে, তখন বিমান হামলার তীব্রতা কমে আসে। এরপর মানুষ ধ্বংসযজ্ঞের ভয়াবহতা দেখেছে। দক্ষিণ-পশ্চিমের ওই এলাকা এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এর সংযোগ সড়কগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

শিশুকন্যাকে কোলে নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ওই এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আবু আল-কাস বলেন, তিনি সব হারিয়েছেন। তাঁর অ্যাপার্টমেন্টে পাঁচ সন্তান থাকত। এ ভবনে (ধ্বংসস্তূপ দেখিয়ে) তাঁর অ্যাপার্টমেন্ট ছিল। ভবনের নিচে তাঁর দোকান ছিল। সেটিও ধ্বংস হয়ে গেছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সোমবার রাতে গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন ৩০০ জন। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই বেসামরিক নাগরিক।

 

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!