প্রতিবছর নভেম্বর মাসে নামিদামি স্কুলগুলো তাদের ভর্তি ফরম বিতরণ শুরু করে। আর ডিসেম্বরে নেওয়া হয় ভর্তি পরীক্ষা। অভিভাবকরাও তাঁদের সন্তানদের পছন্দের স্কুলে ভর্তি করাতে ছোটেন এক স্কুল থেকে অন্য স্কুলে। কিন্তু এবার করোনার কারণে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আরও কত দিন বন্ধ থাকবে, তা-ও স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এই অবস্থায় অভিভাবকদের প্রশ্ন, এবার স্কুলে ভর্তি পরীক্ষার কি হবে?
করোনা পরিস্থিতিতে খুলনা মহানগরীর ১০টি সরকারি বিদ্যালয়ের তৃতীয় ও ষষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা গভীর অনিশ্চয়তায় পড়েছেন, আছে উদ্বেগও। কারণ, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি, বরং দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর ইঙ্গিত দিচ্ছে। শীতের শুরুতেই সারাদেশে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েই চলেছে।
জানা গেছে, মহানগরীতে অবস্থিত ১০টি সরকারি স্কুলের মধ্যে ছয়টি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণি ও চারটি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন শিক্ষার্থীরা। গত বছর স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীর আসন সংখ্যার বিপরীতে ভর্তির আবেদন পড়েছিল প্রায় ছয়গুণ। পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ধারিত সংখ্যক আসনে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হয়। কিন্তু এ বছর স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরকার এরই মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি), জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) এবং এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিল করেছে। স্কুলগুলোর বার্ষিক পরীক্ষাও না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি আগামী ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সবমিলে নয় মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। অর্থাৎ শিক্ষাবর্ষ নিয়মিত রাখতে তাঁরা পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী জানুয়ারিতে স্কুল খোলা সম্ভব না হলেও যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছানো এবং শিক্ষাবর্ষ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের।
২০১৯ সালে খুলনার ১০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষার্থীদের ভর্তি যুদ্ধ ১৯ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে ২১ ও ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষা চলে। গেল বছর স্কুলগুলোর মধ্যে খুলনা জিলা স্কুল, সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, খুলনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, সরকারি ইকবালনগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে মোট ১০৮০টি আসের বিপরীতে আবেদন করেছিল ৬ হাজার ৯৬ জন শিক্ষার্থী। ওই বছর প্রতি আসনে লড়ছে প্রায় ৬ জন করে। এছাড়া কেডিএ খানজাহান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি দৌলতপুর মুহসিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সালাহউদ্দীন ইউসুফ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দেলদার আহমেদ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির চারটি স্কুলে মোট ৪৮০টি আসনের বিপরীতে পরিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৫১৩ জন। আসন প্রতি প্রতিদ্বন্দিতা করেছিল প্রায় ৫ জন শিক্ষার্থী।
ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব ও খুলনা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ফারহানা নাজ খুলনা গেজেটকে জানান, খুলনা মহানগরীতে অবস্থিত খুলনা জিলা স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে প্রাত ও দিবা শাখার নির্দিষ্ট সংখ্যক ২৪০টি আসনের বিপরীতে ১ হাজার ৪৮৫ জন পরীক্ষার্থী এবং ষষ্ঠ শ্রেণিতে দুই শাখায় ২৪টি আসনের বিপরীতে ১৭৬জন পরীক্ষার্থী, সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির দুই শাখায় ২৪০টি আসনের বিপরীতে পরীক্ষার্থী ১ হাজার ৪৬৩ জন এবং ষষ্ঠ শ্রেণির দুই শাখায় ২৪টি আসনের বিপরীতে পরীক্ষার্থী ২২২ জন, সরকারি ইকবালনগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির দুটি শাখায় মোট ২৪০টি আসনের বিপরীতে পরীক্ষার্থী ১ হাজার ১১৯ জন এবং ষষ্ঠ শ্রেণির দুই শাখায় ২৪টি আসনের বিপরীতে ১৩৯জন পরীক্ষার্থী।
খুলনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে একটি শাখার নির্দিষ্ট সংখ্যক ১২০টি আসনের বিপরীতে পরীক্ষার্থী সংখ্যা ৮৩১ জন এবং ষষ্ঠ শ্রেণিতে ২১টি আসনের বিপরীতে ১৮৯ জন পরীক্ষার্থী, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে ১২০টি আসনের বিপরীতে পরীক্ষার্থী সংখ্যা ২৬৬ জন এবং ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১২টি আসনের বিপরীতে পরীক্ষার্থী ১৩৪ জন, সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে ১২০টি আসনের বিপরীতে ৯৩২জন পরীক্ষার্থী এবং ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১২টি আসনের বিপরীতে ৮১জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল।
এছাড়া কেডিএ খানজাহান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শুধুমাত্র ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১২০টি আসনের বিপরীতে পরীক্ষার্থী সংখ্যা ৪৫২জন, সালাহউদ্দীন ইউসুফ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির ১২০টি আসনের বিপরীতে পরিক্ষার্থী সংখ্যা ৩৫০ জন, সরকারি দৌলতপুর মুহসিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির ১২০টি আসনের বিপরীতে পরিক্ষার্থী ২৭০ জন ও দেলদার আহমেদ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে ১২০ আসনের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দিতা করেছিল ৩০৬ ও ১৮০ জন পরীক্ষার্থী।
ভর্তি পরীক্ষায় তৃতীয় শ্রেণিতে বাংলায় ১৫, ইংরেজিতে ১৫ ও গণিতে ২০ নম্বরে সর্বমোট ৫০ নম্বর এবং ষষ্ঠ শ্রেণিতে বাংলায় ৩০, ইংরেজিতে ৩০ ও গণিতে ৪০ নম্বরে সর্বমোট ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হয়।
এ ব্যাপারে ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব ফারহানা নাজ মুঠোফোনে খুলনা গেজেটকে বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও ভর্তি পরীক্ষার নীতিমালা এসেছে, তবে কবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। করোনা পরিস্থিতিতে সরকারি স্কুলগুলোতে কিভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে। তিনি আরও জানান, গত বছরের মতো পরীক্ষা হয়তো এবার নাও হতে পারে।
খুলনা গেজেট / এআর