খুলনায় মহানগরীতে গত সাতদিনে ৬টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এসব খুনের মধ্যে পাঁচটি খুনে ব্যবহৃত হয়েছে অস্ত্র, গুলি, ছুরিসহ দেশীয় অস্ত্র। পুলিশ প্রায় সবগুলোর খুনের সাথে জড়িত সন্দেহে আসামী আটক করতে পেরেছেন। তবে খানজাহান আলী থানা এলাকায় আলোচিত মশিয়ালীর ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্র এখনও উদ্ধার হয়নি। এদিকে সম্প্রতি নগরীতে খুনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
জানা যায়, এসব হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষ, শ্রমিক ও ছাত্ররা। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই বাকবিতন্ড, মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাও হত্যার পিছনের কারণ হিসেবে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ। এদিকে নগরীতে যুবকের গলিত লাশের পরিচয় এখনও মেলেনি।
সামাজিক ও রাজনৈতিক একাধিক নেতাদের (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) সাথে আলাপ কালে তারা জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে নগরীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশের অবস্থান জোরদার ছিল। মুখে মাস্ক না পরে চলাফেরা এবং একত্রে একাধিক মানুষ চলাফেরা না করার জন্য পুলিশ খুবই তৎপর ভূমিকায় ছিল। কিন্তু সম্প্রতি পরপর কয়েকটি হত্যার ঘটনা ঘটে যাওয়া হতাশ নগরের সাধারণ মানুষ।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) সূত্র থেকে জানা যায়, গত ১৪ জুলাই দিবাগত রাতে নগরীর দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জামাল (৩৪) নামে সিএসডি গোডাউনের এক শ্রমিককে খুন করা হয়। দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বলেন, এই হত্যা মামলায় ২ জনকে আটক করা হয়েছে। এরা হলেন হিরু ও বিপ্লব।
এরপর গত ১৬ জুলাই নগরীর খানজাহান আলী থানার মশিয়ালী এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গোলাগুলির ঘটনায় ৩জন এবং প্রতিপক্ষের লাঠিপেটায় ১জন নিহত হয়। গুলি, ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে এই চারটি খুন করেছে দুর্বৃত্তরা। এলাকাবাসীরা জানায়, দীর্ঘদিনের ক্ষোভ থেকেই এই ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের সাথে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জাফরিন, তার ভাই সাবেক আ’লীগ নেতা জাকারিয়া এবং মিল্টনের সুসম্পর্ক থাকায় দীর্ঘদিন তারা রাজত্ব করেছে। তবে নির্যাতনের শেষ সীমানায় আসায় এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়লেই দুই গ্রুপের সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে গুলি ছোড়েন তারা। এসময় গিলাতলার মশিয়ালী এলাকার মোঃ নজরুল ইসলাম (৬০), একই এলাকার গোলাম রসুল (৩০) ঘটনাস্থলে নিহত হন। পরবর্তীতে ঐ রাতেই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কলেজ ছাত্র মোঃ সাইফুল ইসলাম (২৭) খুলনা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এদিকে ঐদিন দিবাগত রাত ২টার দিকে হামলাকারী পক্ষের জেহাদ শেখ (৩৪) কে পিটিয়ে হত্যা করে বিক্ষুব্ধরা। এ ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত চারজনকে আটক করেছেন। এরা হলেন জাফরিন, জাহাঙ্গীর, রহিম আকঞ্জ এবং আরমান।
সর্বশেষ গত ১৯ জুলাই নগরীর হরিণটানা এলাকা থেকে ৩০ বছরের এক যুবকের গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। হরিণটানা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানান, কৈয়া বাজারের আগে জয় খালী ব্রীজ সংলগ্ন একটি মাছের ঘেরের পাশে গলিত লাশটি উদ্ধার করা হয়েছে। তার পরিচয় জানা যায়নি।
এ ব্যাপারে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) কানাই লাল সরকার সাংবাদিকদের বলেন, নগরীর সকল হত্যা কান্ডের পিছনের কারণ বের করা হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনার সাথে জড়িত একাধিক আসামীদেরও আটক করা হয়েছে। যারা আটক হয়নি তাদের আটক করতে অভিযান চলছে। পাশাপাশি অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টাও চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলে তিনি দাবি করেন।
খুলনা গেজেট / এনআইআর