খুলনায় বর্ধিত দামেই বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস। খুলনা সিটি কর্পোরেশন গরুর মাংসের দাম ৬০০ টাকা নির্ধারণ করলেও প্রতি কেজি মাংস ৬৫০ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। ক্রেতা সাধারণের অভিযোগ সিন্ডিকেট করে বাড়ানো হয়েছে এই মাংসের দাম। দাম বৃদ্ধি থাকার কারণে নিম্ন ও মধ্যবৃত্তের গরুর মাংস ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে রয়েছে বলে ক্রেতাদের অভিযোগ। তবে গরুর সংকট আর গো-খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দাম বেশি বলছেন বিক্রেতারা।
নগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গরুর মাংস প্রতিকেজি ৬৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। যা গেল বছরের মাঝামঝি সময়ে বিক্রি হয়েছে ৫৫০ টাকা। তার দু’মাস পরে বিক্রি হয়েছে ৫৮০ টাকা। জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৬২০ টাক। রমজান মাসের শুরুতে ৬৫০ টাকায় বিক্রি করতে গিয়ে হোঁচট খান ব্যবসায়ীর। সে সময় সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের শক্ত ভূমিকায় ৬০০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হন কসাইরা। কিন্তু ২০ রমজানের পর ঈদের দোহাই দিয়ে মাংসের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। সে সময় তারা প্রতিকেজি মাংস ৭০০ টাকায়ও বিক্রি করেন। ঈদের পর দাম কিছুটা কমিয়ে এখন ৬৫০ টাকায় বিক্রি করছেন মাংস বিক্রেতারা।
ফরাজিপাড়ার বাসিন্দা বুলবুল বলেন, খুলনার কসাইরা তাদের ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। বাজার তদারকি না থাকার কারণে এ মূল্য বৃদ্ধি। দাম বৃদ্ধির কারণে মধ্যবিত্তের ক্রয় ক্ষমতার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে এটি।
গল্লামারী কথা হয় আইয়ুব নামে এক ব্যক্তির সাথে। তিনি বলেন, প্রতিমাসে কোন না কোন পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়। দাম বৃদ্ধির সাথে আমাদের আয় বৃদ্ধি পায়না। যা হয় তা দিয়ে সংসার চালতে অনেক কষ্ট হয়। তাই সরকারের আমাদের দিকে তাকানো উচিত বলে তিনি অনুরোধ করেন।
নগরীর ময়লাপোতা মোড়ের মাংস ব্যবসায়ী রাজু বলেন, গো খাদ্যের দাম উর্ধ্বমুখী। বেড়েছে গরুর দাম। হাটে আগের মতো গরু পাওয়া যায় না। তাছাড়া ঢাকার ব্যবসায়ীরা খুলনা হাটগুলো দখল করে রেখেছে। যা পাওয়া যায় তাও কাড়াকাড়ি করে কিনতে হয়। গরু কিনতে বিভিন্ন ফার্মে গেলে মালিকরা দাম হাকায় আকশচুম্বী। তাছাড়া সামনে রয়েছে কোরবানি। তাই বেশী দাম পাওয়ার আসায় অনেক খামারী গরু হাটে আনতে চায়না। প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে ১০ বছরের বেশী সময় গরু আমদানি হয়না। তাই গরুর মাংসের দাম বেড়েছে।
ময়লাপোতা মোড়ের অপর ব্যবসায়ী জানান, প্রতিদিন ময়লাপোতা মোড়ে ৮ থেকে ১০ টি গরু জবাই করা হয়। এখন দু’টি গরুর মাংস বিক্রি করা দায় হয়ে পড়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বাজারে এলসি করা মাংস ভারত থেকে আনা হচ্ছে যেগুলো মরা গরুর মাংস। তা খুলনার হোটেলগুলো সাপ্লাই দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, গরু আমদানি করা হলে মাংস ৩০০ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব হবে। না হলে এর থেকে আরও বাড়াবে বলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
মাংসের দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে কেসিসি বাজার সুপার মাজেদ মোল্লা বলেন, রমজানের প্রথমদিকে গরুর মাংসের দাম বাড়াতে চেয়েছিল খুলনা কসাইরা। কিন্তু কেসিসি মেয়রের শক্ত ভুমিকায় তা বাড়াতে পারেনি। সে সময় ৬০০ টাকায় নির্ধারণ করা হলে কসাইরা মানতে চায়নি। রমজানের কারণে তারা ৬০০ টাকায় বিক্রি করতে রাজি হয় তারা। কিন্তু তার কার্যকারিতা ২০ রমজান পর্যন্ত স্থায়ী হয়। কেসিসি ৬০০ টাকায় মাংস বিক্রির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এরপরে তারা বাড়িয়ে মাংস বিক্রি করতে থাকে। তাছাড়া খুলনার বাইরে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলাগুলোতে ৬৫০ টাকায় মাংস বিক্রি করছেন বিক্রেতা।
ভোক্তা অধিকার খুলনা জেলা শাখার সহকারী পরিচালক শিকাদার শাহিনুর আলম বলেন, কোন পণ্যের দাম নির্ধারণ করার দায়িত্ব আমাদের নয়। যদি কেউ দাম নির্ধারণ করে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করে সেটা দেখা আমাদের দায়িত্ব। মাংসের সরবরাহের পরিমাণ বেড়ে গেলে দাম কমে যাবে বলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান।