খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ আশ্বিন, ১৪৩১ | ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৭ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৬০
  হেজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ নিহত, নিশ্চিত করেছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি
  ছাত্র আন্দোলনে ১৫৮১ জন নিহত হয়েছেন : স্বাস্থ্য বিষয়ক উপ কমিটি

খুলনায় দুর্ভিক্ষ নিরসনের দাবি বঙ্গবন্ধুর

নিজস্ব প্রতিবেদক

সদ্য স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র শ্লোগান ওঠে “লাখো ইনসান ভুখা হায়, ইয়া আজাদী ঝুটা হায়”। অর্থাৎ লাখো মানুষ অনাহারে আছে, এ স্বাধীনতা মিথ্যা।

১৯৪৯ সালে পূর্ব পাকিস্তানের ১৭ জেলার মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। খাদ্যাভাব দেখা দেয়। লিয়াকত আলী খান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আর খাজা নাজীম উদ্দিন গভর্ণর জেনারেল। ১৯৪৯ সালের ২৪ এপ্রিল অবস্থান ধর্মঘটকালে পুলিশ ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে, ২৭ জুলাই পর্যন্ত তিনি জেলে ছিলেন। ২৩ জুন আওয়ামী মুসলিম লীগ আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৪৯ সালের শেষ দিকে খাদ্যভাবে হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। শুধুমাত্র খুলনা জেলায় দুর্ভিক্ষে ২৫ হাজার মানুষ না খেয়ে মরে। প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান পূর্ব পাকিস্তান সফরে এলে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আওয়ামী মুসলিম লীগ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

নবগঠিত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান বিভিন্ন স্থানের জনসভায় খুলনা অঞ্চলের দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় সরকারের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে জোরালো আওয়াজ তোলেন। অবিলম্বে পর্যাপ্ত পরিমাণে সরকারী সাহায্য, খাদ্য দ্রব্য ও পল্লী অঞ্চলে রেশনিং ব্যবস্থার দাবি করেন। তিনি উল্লেখ করেন ১৯৪৩ সালের মত অবস্থা যেন সৃষ্টি আর না হয়। ভূমিহীন, গরীব, বিধবা ও গ্রামের প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষকের কথা অবর্ণনীয়। ধানের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় গরীব মানুষ মহাজনদের নিকট থেকে ধার করেও ধান পাচ্ছে না। সরকারের খয়রাতি সাহায্য ধান, চাল বা কোন প্রকার সাহায্য খুলনার গরীব মানুষ পায়নি।

দুর্ভিক্ষ হলো কোন এলাকার ব্যাপক খাদ্য ঘাটতি। সাধারণত ফসলহানি, যুদ্ধ, সরকারের নীতিগত ব্যর্থতা ইত্যাদি কারণে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, গবাদি পশুর মড়ক, পোকার আক্রমণ ইত্যাদি কারণেও দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়।

বাংলা ১১৭৬ সালের (১৭৭০ খ্রি.) দুর্ভিক্ষ ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিতি পায়। অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় সমগ্র দেশজুড়ে চরম অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়। ত্রুটিপূর্ণ ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা ও খাদ্য বাজারে দালাল ফড়িয়া শ্রেণির দৌরাত্মের ফলে অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে পড়ে। ১৯৪৩ সালে বাংলাদেশে একটি ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ১৩৫০ বঙ্গাব্দে (খ্রি. ১৯৪৩) দুর্ভিক্ষ হয়েছিল বলে এটি পঞ্চাশের মন্বন্তর নামে পরিচিত। ১৯৩৮ সাল থেকে কৃষি ফসলের উৎপাদন কমতে থাকে। তা ছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো ঘটনাও এর পেছনে অন্যতম কারণ ছিল। জাপানী সেনাবাহিনীর হাতে বার্মার পতন হলে সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি বন্ধ হয়ে যায়।

এছাড়া যুদ্ধরত সেনাবাহিনীর সদস্যদের জন্য অতিরিক্ত খাদ্য শস্যের চাহিদা, অতিরিক্ত মুনাফাভোগীদের দৌরাত্ম এবং সরকারী অব্যবস্থাপনা এই দুর্ভিক্ষের অন্যতম কারণ। দুর্ভিক্ষে ৩.৫ মিলিয়ন মানুষ মারা যায়। বিপুল সংখ্যক মানুষ কলকাতা শহরে মৃত্যুবরণ করে। উল্লেখ্য যে, এদের মধ্যে সবাই কলকাতার বাইরের বাসিন্দা ছিলেন।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!