হিমায়িত মৎস্য রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠানের ১৩ লাখ টাকার ছিনতাইয়ের পর পুলিশ সদস্যের দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। আর সোমবার দুপুরে ঠিকাদারের দুই লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। একটি ব্যাংক অভ্যন্তরে; বাকি দু’টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ফেরার পথে ঘটে। সাধারণ গ্রাহকদের প্রশ্ন, তাহলে কি বিভাগীয় শহর খুলনায় ছিনতাইকারীদের মূল টার্গেট ব্যাংক? এতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছেন গ্রাহকরা।
সর্বশেষ, সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নগরীর স্যার ইকবাল রোডের অগ্রনি ব্যাংক থেকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মনোলিছ কন্সট্রাকশন’র ২ লাখ টাকা নিয়ে রিকশা যোগে ফিরছিলেন মোঃ তারিকুল আলম। খুলনা সার্কিট হাউজ মোড়ে তিনটি মোটরসাইকেলে ৮ জন দুর্বৃত্ত তার রিকশাকে ঘিরে ধরে। তারিকুলকে মারধর ও গুলি করার হুমকি দিয়ে টাকার ব্যাগ নিয়ে হাজী মহসিন রোড দিকে চলে যায় হেলমেট পরিহিতরা।
মনোলিছ কন্সট্রাকশন’র মালিক সাবেক কাউন্সিলর মোঃ মাহবুব কায়সার বলেন, এঘটনায় খুলনা সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ঘরে ফেরার পথে দিন-দুপুরে প্রকাশ্যে এমন ঘটনায় হতবাক হয়েছি। মানুষের নূন্যতম নিরাপত্তা কোথায়?
আহত তারিকুল আলম জানান, দৃর্বত্তরা তার বুকে কয়েকটি ঘুষি মারে। এসময়ে আমি মাটিতে পড়ে যাই। তখন অস্ত্র ঠেকিয়ে টাকার ব্যাগ নিয়ে চম্পট দেয়।
খুলনা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আশরাফুল আলম বলেন, এঘটনায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযান ও তদন্ত একসাথেই চলছে।
এর মাত্র এক সপ্তাহ আগে, ২০ সেপ্টেম্বর নগরীর তেতুলতলা মোড়ে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ভিতর থেকে গ্রাহকের ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্র। এ ঘটনার পর ব্যাংকিং লেনদেন কেন্দ্রিক গ্রাহকদের ওপর ছিনতাইকারীদের সক্রিয়তার বিষয়টি নজরে আসে। এঘটনায় ব্যাংক থেকে একজনকে আটক করে পুলিশে সোর্পদ করেন স্থানীয়রা। পরে ক্ষতিগ্রস্ত পুলিশ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে খোয়া যাওয়া ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
এরআগে, গত ১২ আগস্ট খুলনা স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে প্রাইভেটকারে যাওয়ার পথে হিমায়িত মৎস্য ব্যবসায়ীর ১৩ লাখ টাকা ছিনতাই হয়। অভিযোগ রয়েছে, ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের পর ছিনতাইকারীরা প্রাইভেটকারের পিছু নেয়। ছিনতাই হওয়া ওই টাকাও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নগরীর শিববাড়ি, ফেরিঘাট, পিকচার প্যালেস মোড় এলাকায় সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের অসংখ্য শাখা রয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কড়াকড়ি না থাকায় লেনদেনের সময় অপরাধী বা তাদের লোকজন ব্যাংকের ভিতরে অবস্থান নেয়। গ্রাহককে লেনদেনে সহায়তার নামে কিংবা চলাচলের পথে তারা সুযোগ বুঝে টাকা ছিনিয়ে নেয়।
ক্ষতিগ্রস্ত পুলিশ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে ছিনতাইয়ের ঘটনায় সাধারণ মানুষ ভীতুসন্ত্রস্ত। ব্যাংক অভ্যন্তরেও কি গ্রাহকরা নিরাপদ নই?
তিনি আরও জানান, ওইদিন ২০ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহরের ব্যস্ততম এলাকা শিববাড়ী মোড়ের নিকটে ডাচ-বাংলা ব্যাংকে দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা জমা দিতে গিয়েছিলাম। ব্যাংকে টেবিলের পাশের চেয়ারে টাকার ব্যাগ রেখে জমা স্লিপ পূরণ করছিলাম। হঠাৎ দেখি তার টাকা ভর্তি ব্যাগটি নেই। সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করলে ব্যাংকের দারোয়ান গেট বন্ধ করে দেয়। কিন্তু ততক্ষণে টাকার ব্যাগ নিয়ে প্রতারক চক্রটি সরে পড়ে। কিন্তু জমাস্লিপ পূরণের সময় দুর্বৃত্তদের একজন আমার সাথে কথা বলে ব্যস্ত রাখছিল; তাকে আটক করে পুলিশে সোর্পদ করা হয়। পরে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে তার টাকা এখনো উদ্ধার হয়নি বলে জানান তিনি।
কেএমপি’র মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার কানাইলাল সরকার বলেন, বিচ্ছিন্ন দু/একটি ঘটনা ব্যতীত খুলনার সামগ্রিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুব ভালো। সম্প্রতি ওই দু’টি ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। একই সাথে আমার গোয়েন্দা নজরদারীও বৃদ্ধি করা হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এআইএন