খুলনায় ‘নদী নেবে’ শিরোনামে সংবাদ আলোকচিত্রী কাকলী প্রধানের ১০০ নদীর উন্মুক্ত আলোকচিত্র প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। শুক্রবার (১০ মার্চ) বিকাল সাড়ে ৩টায় খুলনার রূপসা সেতুর নিচে তিন দিনব্যাপী এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়।
প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নদীর প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে দেশের আর প্রাণ থাকবে না। নৌপথ খননের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ৮টি ড্রেজার সংগ্রহ করেছিলেন, এখন দেশে প্রায় ৮০ টি ড্রেজার যুক্ত হওয়ার পথে। নদীর প্রবাহ ধরে রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই উদ্যোগ নিয়েছেন। যারা নদী দখল করেছে তাদের তালিকা করা হয়েছে, এখন তা যাচাই বাছাই চলছে। দখলদারদের হাতে নদী থাকবে না, উদ্ধার হবেই। নদীকে রক্ষায় নদী কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিশনকে প্রকল্প দেওয়া হয়েছে। নদী আমাদের জীবন, নদী আমাদের জীবিকা। সভ্যতা তৈরি হয়েছে নদীকে ঘিরে। আমরা নদীমাতৃক দেশকে রক্ষা করবো, এই হচ্ছে রূপসা পাড়ে আমাদের অঙ্গীকার।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার-নদী দখলদারদের হাতে থাকবে না। তাঁর নির্দেশনায় ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খননের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। নৌপথ দখল ও দুষণমুক্ত করে নাব্যতা ফিরিয়ে এনে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। নৌপথ ও নদী রক্ষার জন্য যারা কাজ করছেন তাদের পাশে বর্তমান সরকার রয়েছে। কাকলী প্রধান নদী নিয়ে যে আয়োজন করেছে এটা সকল জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ুক। তাহলেই দেশের নদী রক্ষা পাবে। নদীকে নিয়ে সবাইকে ফটো সাংবাদিক কাকলী প্রধান হওয়ার আহবান জানান।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকলে দেশকে আমরা প্রবহমান নদীর দেশে রুপান্তরিত করবো। গণমাধ্যমের সহযোগিতায় আমরা নদী উদ্ধার করতে পেরেছি এই জন্য গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পুরো দেশে পরছে। উত্তরাঞ্চল মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে। পানির স্তর কমে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব কমাতে হলে নদী বাঁচাতে হবে।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক এলাকায় নোনা পানি ঢুকে গিয়ে চাষাবাদের অনুপোযোগী হয়েছে। এর বাইরেও প্রভাবশালীরা আমাদের জমির মধ্যে নোনা পানি ঢোকাচ্ছে। তবে আমরা থেমে নেই।
তিনি বলেন, মৃত শিল্পনগরী খুলনা আবার জেগে উঠেছে৷ আগামী ৫ বছর পর মৃত খুলনাকে আবার প্রাণ সঞ্চারিত দেখতে পাবো। মোংলা বন্দর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এটাকে জাগরিত করার কেউ ব্যবস্থা নেয়নি। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে। খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত রেললাইন যাবে কেউ ভাবেনি। শেখ হাসিনা শুধু ভাবেননি, তিনি ব্যবস্থা নিয়েছেন। এখানে একটা জোন মাল্ট্রিমর্ডান কানেক্টিভিটি। এখানে বিমানবন্দর, রেললাইন, সড়ক, এখানে নৌপথ। বাংলাদেশের কোথাও এই ধরনের কানিকটিভিটি নেই।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা, সংবাদআলোকচিত্রী কাকলী প্রধান, অনুষ্ঠান সমন্বয়ক মাসুম মাহমুদ।
তিনদিনব্যাপী এ প্রতিযোগিতা চলবে ১২ মার্চ পর্যন্ত। প্রতিটি ছবির দৈর্ঘ্য ১৫ ফুট, উচ্চতা ১০ফুট।
সংবাদ আলোকচিত্রী কাকলী প্রধান এবং শিশু সংগঠন ‘ইকরিমিকরি’ সাধারণ মানুষের কাছে নদীর বিপন্নতা ও শিশুদের কাছে নদীর রূপ, প্রকৃতি তুলে ধরার জন্য কাজ করছে। এ লক্ষ্যে ১০০ নদীর আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা, বরিশাল, খুলনা ও টেকনাফে। আলোকচিত্র প্রদর্শনী ২৪-২৬ ফেব্রুয়ারি টেকনাফে অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তি প্রদর্শনী বরিশালে কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে ড্রেজার বেইজে ১৬-১৮ মার্চ এবং ঢাকার শ্যামপুর ইকোপার্কে ২০-২২ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। আলোকচিত্র প্রদর্শনীগুলোর জন্য সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
খুলনা গেজেট/কেডি