খুলনার বাজারে ভোজ্য তেলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। দু’একটি দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সন্ধান পাওয়া গেলেও তাও সরকার নির্ধারিত দরের থেকে বেশী দামে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। রাত পার হলেই ঈদ। প্রয়োজন মতো তেল না পাওয়ায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা।
গত দু’দিন আগেও মহানগরীতে প্রতিকেজি সয়াবিন তেল খুচরা দোকানে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ঈদের আগের দিন সেই তেল ২১০ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ী। বাজার থেকে হঠাৎ এক লিটারের সয়াবিন তেল উধাও হয়ে গেছে। যদিও কোথাও পাওয়া যায় তাও ১৮০ টাকা। আর পাঁচ লিটারের বোতল ক্ষেত্র বিশেষ ৯৪০ থেকে ১১০০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে অনেকেই অভিযোগ করেছেন খোলা তেলের দাম বেশী হওয়ায় নগরীর অনেক ব্যবসায়ী বোতল ভেঙ্গে তা খোলা তেল হিসেবে বিক্রি করছেন।
নগরীর বড় বাজারের তেল ব্যবসায়ী শেখ মো: শাহ আলম সরদার বলেন, বর্তমানে সয়াবিন তেল পাইকারী হিসেবে ২০৫ টাকায় বিক্রি করছেন। গত দু’দিন আগেও তা ১৯২ টাকায় বিক্রি করেছেন। তেলের দাম বৃদ্ধির জন্য তিনি সরাসরি তেল মিল মালিকদের দায়ী করেছেন। মিলাররা বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছেন।
একই বাজারের অপর ব্যবসায়ী উদয় শংকর বলেন, তাদের প্রতিষ্ঠান সেকেন্ড পার্টির কাছ থেকে তেল ক্রয় করে। বাংলাদেশী টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়েছে। বেড়েছে ভ্যাট, ট্যাক্স, জাহাজ ও পরিবহন ভাড়া। রয়েছে মিল মালিকদের লাভের অংশ। সবমিলিয়ে তেলের দাম বাড়তি। আজ সোমবার সকালে তার প্রতিষ্ঠানের সব তেল শেষ হয়ে গেছে। এক ট্রাক তেলের দাম দেওয়া হয়েছে। এখনও দর নির্ধারণ করা হয়নি। আসলে দর নির্ধারণ করা হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, দোকানে কোন বোতলজাত সয়াবিন তেল নেই। এক সপ্তাহের বেশী সময় ধরে এ অবস্থা চলছে। প্রতিনিধিরা শুধু সংকটের কথা বলেন। তারা কোন অর্ডার নিচ্ছেন না। তিনি আরও বলেন, খোলা তেলের দাম বেশী হওয়ায় বোতলজাত সয়াবিন তেলের মুখ কেটে ড্রামে ঢুকাচ্ছেন এ বাজারের অনেক ব্যবসায়ী। যে কারণে রাতারাতি খুলনা থেকে বোতলের তেল উধাও হয়ে যাচ্ছে। তিনি ব্যবসায়ীদের হীন মানসিকতাকে দায়ী করছেন।
নগরীর সান্ধ্য বাজারের কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা গেছে, তাদের কাছে এক লিটার সয়াবিন তেলের কোন বোতল নেই। তবে সেলফে সাজানো রয়েছে পাঁচ লিটারের কয়েকটি বোতল। বোতলের গায়ে ৭৬০ টাকা লেখা থাকলেও বিক্রেতারা ১০০০ থেকে ১১০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।
সোমবার বিকেলে কালিবাড়ি বাজারে দুর্লভ পাঁচ লিটারের একটি বোতলসহ কুদ্দুস নামে এক ব্যক্তির দেখা মেলে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, শনি ও রোববার নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে তেলে কোন সন্ধান মেলাতে পারেনি। অনেক কষ্টে বড় বাজারের একটি দোকানে গিয়ে পাওয়া যায় সয়াবিন তেলের বোতল। ৭৬০ টাকার পাঁচ লিটারের বোতল ৯৪০ টাকায় কিনতে হয়েছে। দেশের ব্যবসায়ীরা রীতিমতো সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একের পর এক দাম বাড়িয়ে যাচ্ছেন। তবে এভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাড়তে থাকলে তাদের মতো মধ্যবিত্ত মারা যাবে বলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ২০ মার্চ ভোজ্য তেলের মূল্য নির্ধারণ করে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে। সে সময় সরকার এক লিটার সয়াবিন তেলের বোতল ১৬০ টাকা, পাঁচ লিটারের বোতল ৭৬০ টাকা ও প্রতিকেজি খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৩৬ টাকা নির্ধারণ করে দেয়।
খুলনা গেজেট/ টি আই