খুলনার জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নের নামে চরম মিথ্যাচার করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন খুলনা বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ভোটারাধিকার ফেরতের মাধ্যমে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু গ্রহনযোগ্য অংশগ্রহণমুলক আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের জনদাবিকে পাশ কাটিয়ে বক্তৃতার বেশিরভাগ সময়জুড়ে মহান স্বাধীনতার ঘোষক বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীরউত্তম, বিএনপি চেয়ারপারসন তিনবারের সাবেক সফল প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আগামীর রাষ্ট্রনায়ক জনাব তারেক রহমান তথা জিয়া পরিবারকে ঘিরে চরম আক্রমনাত্মক ভাষায় মিথ্যাচার করেছে শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার (১৩ নভেম্বর) রাতে গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে জিয়াপরিবার ও উন্নয়নের নামে ঘৃণ্য মিথ্যাচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন খুলনা বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ।
বিবৃতিতে বিএনপি নেতারা বলেছেন, নগ্ন ভাষায় গণতন্ত্র ফিরিয়ে ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার যোদ্ধাদের সম্পর্কে অত্যন্ত নিচু ভাষায় তার দলীয় নেতাকর্মীদের সামনে উস্কানিমুলক বক্তব্য দিয়ে দেশকে চরম অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিয়েছে শেখ হাসিনা। আ’লীগের নেতাকর্মীরা পুলিশ পাহারায় অগ্নিসন্ত্রাস করে সেই দায় বিরোধী দল-মতের নেতাকর্মীদের উপর চাপিয়ে গায়েবী মামলা দায়ের করছে। অথচ জনগনের ভোটাধিকার হরণকারী শেখ হাসিনা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে স্বদেশপ্রেমী যোদ্ধাদের হাত পুড়িয়ে দেবার সন্ত্রাসী হুমকি দিয়ে চরম উস্কানী দিয়েছে। তিনি ভুলে গেছেন, দেশের মানুষ আজ দুইভাগে বিভক্ত; একদিকে লুটেরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা-অন্যদিকে ভোটাধিকার ফিরিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে আন্দোলনরত দেশবাসী। খুলনাবাসী বিএনপি’র আহবানে অবরোধকে সমার্থন দিয়ে দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ লুটপাটের মাফিয়া সরকারকে নিরব লালকার্ড প্রদর্শন করেছে। সে কারণে খুলনার বাইরে থেকেও ভাড়া করে লোক এনে সার্কিট হাউজ ময়দান ভরতে হয়েছে।
খুলনা বিএনপি নেতৃবৃন্দ বলেন, খুলনার রাষ্ট্রায়াত্ব পাটসমূহ ও দাদাম্যাচ ফ্যাক্টরি বন্ধ করে শিল্পনগরী খুলনাকে অন্ধকার যুগে ঠেলে দিয়ে অর্ধলক্ষাধিক শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বেকার করেছে। ঘরে-ঘরে চাকরি দেবার প্রতিশ্র“তি দিয়ে ঘরেঘরে মামলা দিয়েছে। শেখ হাসিনার প্রতিশ্র“ত ১০ টাকা কেজির চাল এখন সেঞ্চুরির পথে। অতীতের কোনো প্রতিশ্র“তি বাস্তবায়ন করতে না পারার গ্লানী মাথায় নিয়ে খুলনার পবিত্র মাটিতে আজ আবার মিথ্যার ফুলঝুরি ছড়িয়েছে শেখ হাসিনা।
খুলনাবাসী জানেন, ১৯৯৬ সালের ১ ফেব্র“য়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাগেরহাট রামপালের ফয়লায় পীর খানজাহান আলী (রহঃ) বিমান বন্দরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। ১৯৯১ সালের ২৫ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। খুলনা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে ২০০৩ সালে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করে বিএনপি সরকার। ১৯৯৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর ভিত্তিপ্রস্তর এবং ২০০৫ সালের ২১ মে রূপসা নদীর উপরে খানজাহান আলী (রহঃ) সেতুর উদ্বোধন করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। শহীদ জিয়া মহাবিদ্যালয়, খুলনা গার্হস্থ্য ও অর্থনীতি কলেজ প্রতিষ্ঠা, সবুরননেছা মহিলা কলেজ, খুলনা কলেজিয়েট গালস্র্ স্কুল এন্ড কলেজ এবং ইসলামাবাদ কলেজিয়েট স্কুল প্রতিষ্ঠা, খুলনার শিববাড়ী মোড়ে দৃষ্টি নন্দন জিয়া হল ও বিশাল আকৃতির বায়তুন নূর জামে মসজিদ কমপ্লেক্স ও সুদৃশ্য নগর ভবন নির্মাণসহ খুলনার অসংখ্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন বিএনপি নেতৃত্বাধীন বেগম খালেদার সরকারই করেছিলেন। বাংলাদেশ ক্রীড়া প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান খুলনাতে স্থাপন করে বিএনপি। ১৯৭৯ সালের শিরোমনি শিল্প এলাকায় স্থাপন হয় বিএনপি সরকারের আমলেই।
পক্ষান্তরে ভোটডাকাতির মাধ্যমে দিনের ভোট রাতে করে সারাদেশের ন্যায় খুলনাবাসীকেও ভোটাধিকার বঞ্চিত করেছে ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগ। জনগনের ভোটাধিকার লুণ্ঠন করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি লুটেরা আওয়ামী লীগ; খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল, দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি বন্ধ করে লাখো শ্রমিককে পথে বসিয়ে দিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। খুলনা তথা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের সাথে প্রতারণা করে খুলনা বিমান বন্দর এবং পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহ প্রকল্প দু’টি বাতিল করেছে আওয়ামী সরকার। উপকূলে বেঁড়িবাঁধ সংস্কারের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে লুটেরা সরকারের এমপি-মন্ত্রীরা।
বিএনপি নেতৃবৃন্দ আরও বলেছেন, খুলনা তথা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ খুব ভালো করেই জানেন- দেশ ও জনগনের উন্নয়নে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকারের অবদান। অন্যদিকে, আওয়ামী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লুফে নেয়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্য-দ্রব্যের সীমাহীন অগ্নিমুল্য, বিদ্যুৎ-তেল-গ্যাস, ব্যাংক-বীমা ও উন্নয়নের মেগা প্রকল্প দেখিয়ে সিরিজ লুটপাটে সিদ্ধহস্ত বর্তমান সরকার। সে কারণেই অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে খুলনা সিটি ও সংসদীয় আসনগুলোতে জনগনের প্রত্যক্ষ ভোটে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরাই বিজয়ী হয়েছে। সৎ সাহস থাকলে পদত্যাগের পর বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দিয়ে শেখ হাসিনাকে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন খুলনা বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ।
বিবৃতিদাতারা হলেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক আলহাজ্ব রকিবুল ইসলাম বকুল, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, খুলনা মহানগর বিএনপি’র আহবায়ক এ্যাড. শফিকুল আলম মনা, জেলা বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক শেখ আবু হোসেন বাবু, নগর বিএনপি’র সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন ও জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব এসএম মনিরুল হাসান বাপ্পী প্রমুখ।
আওয়ামী সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং বেগম খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সকল রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তির একদফা দাবি জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ।- খবর বিজ্ঞপ্তির
খুলনা গেজেট/কেডি