খুলনা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে ডুমুরিয়ার মিকসিমিল বাজার সংলগ্ন খরসংঘ কালার বটতলা সার্বজনীন দুর্গামন্দির। মন্দিরের প্যান্ডেলের মধ্যে প্রবেশ করলেই দেখা মিলবে সারিবদ্ধভাবে রাখা দেবদেবীর বিভিন্ন প্রতিমা। মন্দিরের ১৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মূল দুর্গা প্রতিমার সঙ্গে এমন ১৪৭টি প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, মন্দিরটিতে দেবী দুর্গার ১০ রূপের বর্ণনা রয়েছে। আছে কালী, ঊর্ধ্বতারা, ত্রিপুরা, ভূবনস্বরী, ভৈরবী, ছিন্নমস্তা, ধোমাবতী, বগলামুখি, মাতঙ্গী ও কমলা দেবী। এরপর অগ্রসর হলেই চোখে পড়বে শিবপার্বতীর শুভ পরিণয়ের অগ্নিসাক্ষীর দৃশ্য, হনুমান কর্তৃক জয়মনিকালী উদ্ধার ও ধ্রুবের হরিদর্শন। পাশেই রামায়ন অবলম্বনে অশুভ শক্তিকে বিনাশ করতে শ্রীরামচন্দ্রে সেই ঐতিহাসিক তাড়কা রাক্ষসী বধের দৃশ্য। এসব প্রতিমার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে রামায়ন, মহাভারত, গীতা ও পুরাণসহ বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের পৌরাণিক এসব কাহিনী।
সরেজমিনে দেখা যায়, শাহপুর-চুকনগর সড়কের পাশেই তৈরি করা হয়েছে বিশাল আকৃতির গেট। মন্দিরে ঢোকা ও বের হওয়ার পথ আলাদা। বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ ভিড় করেছেন মন্দির প্রাঙ্গণে। করা হয়েছে বর্ণিল আলোকসজ্জা, আনা হয়েছে সাউন্ড সিস্টেম। মন্দিরের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করছেন ৬ জন আনসার সদস্য। ডুমুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ও আশপাশের উপজেলা থেকে লোকজন প্রতিমাগুলো দেখতে আসছেন। প্রতিদিন দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন এসব দেবদেবীর প্রতিমা দেখার জন্য।
দর্শনার্থীরা বলছেন, এক মন্দিরে একসঙ্গে এতোগুলো প্রতিমা দেখতে পাচ্ছি, খুব ভালো লাগছে। ঘুরে ঘুরে দেখছি।
মন্দির কমিটির কোষাধ্যক্ষ সুব্রত সরকার বলেন, প্রতিমাগুলো তৈরিতে ব্যয় হয়েছে আড়াই লাখ টাকা। ৪ জন ভাস্কর ৩ মাস কাজ করে এগুলো তৈরি করেছেন। শুধু খুলনা নয়, বিভাগের আর কোনো মন্দিরে এত বেশি সংখ্যক প্রতিমা নেই।
এদিকে খুলনা জেলা ও নগরীতে এবার ৯১৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হচ্ছে। গত বছর হয়েছিল ১ হাজার ৪৪টিতে।
এ বিষয়ে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিমান সাহা বলেন, বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা রয়েছে। অনেক মন্দির কমিটি আর্থিক সংকটে রয়েছে। এছাড়া দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে কারও কারও মধ্যে ভীতি কাজ করছে। এসব কারণে গতবারের তুলনায় এবার কিছুটা কম সংখ্যক মন্দিরে পূজা হচ্ছে।
শারদীয় দুর্গোৎসবে শান্তি-শৃঙ্খলা ও উৎসবের আমেজ বজায় রাখতে সেনাবাহিনী মাঠে রয়েছে। সেই সঙ্গে পূজা চলাকালীন গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সজাগ অবস্থায় রয়েছে।
খুলনার পুলিশ সুপার টিএম মোশাররফ হোসেন বলেন, খুলনার ৯ উপজেলায় এবার ৭৪০টি পূজামণ্ডপে দুর্গা উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এসব পূজামণ্ডপকে তিন ভাগে ভাগ করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এর মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ পূজামণ্ডপ রয়েছে ১৫৭টি। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ ২৪৬টি এবং সাধারণ পূজামণ্ডপ ৩৩৭টি।
তিনি আরও বলেন, এবারের দুর্গা উৎসবে খুলনা জেলা পুলিশের তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ৯৬৫ জন পুলিশ সদস্য কাজ করছেন। সংখ্যা আরও বাড়বে। নিরাপত্তায় ডিবির টিম, থানা পুলিশ, সাইবার মনিটরিং আছে। এছাড়া সাদা পোশাকে এবং যৌথবাহিনীর সঙ্গেও নিরাপত্তায় কাজ করা হচ্ছে।
খুলনা গেজেট/এমএম