ছোটখাট বিষয় নিয়ে লেখা আমার অভ্যাস নয়, আবার সময়ও নেই। তবে ভালো কোন জিনিষ তা ছোট হলেও ছোট বা নগণ্য নয়। ভালো জিনিষের প্রশংসা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব; ইবাদতও বটে। নিজের কিছু অনুভূতি অক্ষরের বুননে পাঠকের কাছে শেয়ার করাই এই লেখার উদ্দেশ্য।
গত রোববার ছিল নতুন বছরের প্রথম কার্যদিবস। এই প্রথম দিনেই বের হয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চমৎকার ক্যালেন্ডার। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী সকলেই অত্যন্ত খুশী এই ক্যালেন্ডার হাতে পেয়ে। এই খুশীর অন্যতম কারণ হলো, একেবারে প্রথম দিনেই পাওয়া ও তার গেটআপ বা সৌন্দর্য। গেল বছরগুলোতে বছরের প্রথম দিকেই ক্যালেন্ডার পাওয়া যেত, তবে একেবারে প্রথম দিনেই নয়। শিল্পীর সূক্ষ চোখ দিয়ে হয়ত আমরা মাপতে পারবো না। তবে একজন সাধারণ দর্শক হিসেবে বলতে পারি, এবারের ক্যালেন্ডারের সজ্জা, বিন্যাস ও উপস্থাপনা অত্যন্ত দারুণ হয়েছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের যার সাথে দেখা হয়েছে সকলেই এই ক্যালেন্ডারের প্রশংসা করেছেন।
ক্যালেন্ডারের বাংলা অর্থ হলো বর্ষপঞ্জি। অর্থাৎ সারা বছরের দিন, মাসের একটি হিসাব। শিল্পী বা ডিজাইনার নন, একজন সাধারণ মানুষ একটি বর্ষপঞ্জিকে কয়েকটি দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করে থাকেন। প্রথমেই দেখেন, দৃষ্টিনন্দন কিনা, অর্থাৎ নজরকাড়া কিনা। এরপর দেখেন, তার কালার বিন্যাস। তারপর দেখেন, সেটি মার্জিত কিনা, অথবা কালারগুলো কিটকিটে কিনা। সব ঠিকঠাক থাকলে চিন্তা করেন, সেটি ঘরে টাঙ্গাতে পারবেন কিনা। সব দিক থেকেই এবারের বর্ষপঞ্জি চমৎকার !
ওয়াল ক্যালেন্ডার সাধারণত সবাই দেয়ালেই টাঙ্গায়ে থাকেন, আর টেবিল ক্যালেন্ডার রাখেন টেবিলের গ্লাসের নিচে। এটা বাস্তব সত্য যে, আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ মুসলমান এবং ধর্মপরায়ন। এই কারণে তারা চিন্তা করেন, ঘরে ক্যালেন্ডারটি টাঙ্গালে নামাজ-কালাম ঠিক মতো আদায় করা যাবে কিনা। তাছাড়া হাদিসের ওই বাণীও তাদের সামনে ভেসে ওঠে, ‘যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকে সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না’। মুসল্লি কাঁচা হোক বা পাকা হোক, কেউ এই ঝুকি নিতে রাজি হননা যে, তার ঘরে রহমতের ফেরেশতা না আসুক। আর যদি দেয়ালেই টাঙ্গানো না যায় তাহলে সেই দেয়াল ক্যালেন্ডার তার আসল সৌন্দের্যের জায়গাটাই হারিয়ে ফেলে। অনেকেই মনে করেন, বর্ষপঞ্জি একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রচার-প্রসারকে বাড়িয়ে দেয়। এটি যতবেশী মানুষ কিনবে ততই তার মর্যাদা জনগণের মনিকোঠায় স্থান করে নিবে।
ক্যালেন্ডারের ছবি নির্বাচন আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এবারের ক্যালেন্ডোরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়নের যে অগ্রগতি হচ্ছে তা অত্যন্ত কৌশলীভাবে তুলে ধরা হয়েছে। নির্মাণাধীন দৃষ্টিনন্দন শিক্ষক-শিক্ষার্থী মিলনায়তন বা টিএসসি, সুলতানা কামাল জিমনেশিয়াম এবং সর্বোপরি ১০ তলা বিশিষ্ট জয়বাংলা একাডেমিক ভবন বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের প্রতিফলন ঘটিয়েছে। নির্মাণাধীন টিএসসি’র ছবি দেখলে মনে হবে, এটা যেন উন্নত বিশ্বের কোন এক টিএসসি। জিমনেশিয়ামটিতেও রয়েছে বিদেশী ডিজাইনের আভা। ১০ তলা বিশিষ্ট জয়বাংলা একাডেমিক ভবনটিতেও ফুঁটে উঠেছে স্থাপত্যের ছোঁয়া।
এক কথায়, এবারের ক্যালেন্ডার এতই সুন্দর হয়েছে যে, একজন শিক্ষক তো বলেই ফেললেন, এবার আমি আগের চেয়ে তিন-চার গুণ ক্যালেন্ডার কিনে বন্ধুদের মাঝে বিতরণ করবো। আর একজন শিক্ষক মন্তব্য করলেন, এবারের ক্যালেন্ডার মসজিদ, মন্দির সবজায়গায় টাঙ্গানো যাবে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবারের ক্যালেন্ডারের ডিজাইন করেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রিন্ট-মেকিং ডিসিপ্লিনের ছাত্র মোঃ তহিদুল আলম রিফাত। তাকে এবং এই ক্যালেন্ডারের প্রকাশনার সাথে জড়িত সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই চমৎকার একটি বর্ষপঞ্জি উপহার দেবার জন্য।
(লেখক : মৎস্য-বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়)