খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২২শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে পর্যটকদের ওপর হামলায় ২৬ জন নিহত
  খুলনার ফুলতলা উপজেলায় সুমন মোল্লা নামের একজনকে গুলি করে হত্যা
  সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথি পুড়ে যাওয়ার তথ্য সঠিক নয় : ডিএমপি
  মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের আপিল শুনানি ৬ মে পুনর্নির্ধারণ
যুক্তিতর্ক শেষে আসামিদের জেলহাজতে প্রেরণ

খুলনা পাবলিক কলেজের ছাত্র রাজিন হত্যার রায় ২৩ মে

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনা পাবলিক কলেজের ছাত্র ফাহমিদ তানভীর রাজিন হত্যা মামলার রায় আগামী ২৩ মে ঘোষণা করা হবে। আজ মঙ্গলবার (১৭) মামলার যুক্তিতর্ক শেষে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আব্দুল সালাম খান আলোচিত এ হত্যা মামলার দিন ধার্য করেন।

২০১৮ সালের ২০ জানুয়ারি খুলনা পাবলিক কলেজের ৩১ তম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান ছিল। সকলে ছিলেন আনন্দে মাতোয়ারা। রাতে কনসার্টের আয়োজন করা হয়। প্রথমদিন গেট বন্ধ থাকলেও পরের দিন সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ওই দিন রাত নয়টার দিকে একটি দু:সংবাদে সকলের আনন্দ মাটি হয়ে যায়। সে রাতে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নির্মমভাবে খুন হয় পাবলিক কলেজের সপ্তম শেণির ছাত্র ফাহমিদ তানভীর রাজিন (১৩)। এ হত্যকান্ডটি খুলনার একটি আলোচিত ঘটনা। আজ মঙ্গলবার (১৭ মে) এ মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। আগামি ২৩ মে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আব্দুল সালাম খান আলোচিত এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করবেন।

এজাহার সূত্রে জানা গেছে, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ স্কুলের একজন ছাত্রীকে বয়রা এলাকার কিছু বখাটে ছেলে প্রায়ই উত্তক্ত করত। ঘটনাটি জানতে পেরে রাজিন প্রতিবাদ করে। এ কারণে তাকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য বখাটেরা পরিকল্পনা করতে থাকে। পরিকল্পনা অনুযায়ি ২০ জানুয়ারি রাতে রাজিনকে ছুরি মেরে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার একদিন পরে নিহতের পিতা ৬ জন আসামির নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১০ জনের নামে থানায় মামলা দায়ের করেন।

এরপর পুলিশ এজাহারে উল্লেখিত আসামিদের গ্রেপ্তার করে। তাদের কয়েকজন হত্যাকান্ডের বিবরণ জানিয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি তামিমের স্বীকারোক্তি মোতাবেক রূপসা উপজেলার আইচগাতি থেকে গ্রেপ্তার করা মো: মঞ্জুরুল ইসলাম সাব্বির হাওলাদারকে। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় হত্যাকন্ডে ব্যবহৃত ছুরি।

চার্জশিটে বর্ণিত সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৬ টার দিকে রাজিন পাবলিক কলেজের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। মুজগুন্নী এলাকার মো: ফারুখ হোসেনের ছেলে মো: ফাহিম ইসলামের সাথে ইভটিজিং এর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিরোধ ছিল রাজিনের। ৩১ তম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে সবার জন্য পাবলিক কলেজের ক্যাম্পাস উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ওই রাতে ফাহিম তার বন্ধুদের নিয়ে অনুষ্ঠানে যায় এবং রাজিনকে হত্যা করে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খালিশপুর থানার এসআই মো: মিজানুর রহমান একই বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযুক্তরা হলো, মো: মঞ্জুরুল ইসলাম ওরফে সাব্বির হাওলাদার (১৬), বিএম মাজিব হাসান রয়েল (১২), মো: শাহরিয়ার তুর্য্য (১৬), মো: রিয়ান শেখ রেফাত (১২), মো: ফাহিম ইসলাম মনি (১৪), মো: সানি ইসলাম আপন (১৩) মো: জিসান খান (১৬), তারিন হাসান রিজভী (১৩), মো: শাকিব খান শিমুল (১৭), অন্তর কুমার দাস (১৫), মো: হাকিম (১৭), মো: আসিফ প্রান্ত আলিফ, শেখ তামিম (১৬), মো: সাকরান সালেহ ওরফে মিতুল(১২), মোস্তাফিজুর রহমান নাঈম (১৪)। সকলের জামিন বাতিল করে আদালত আজ মঙ্গলবার তাদের জেলহাজতে প্রেরণ করেছেন।

যেভাবে হত্যা করা হয় রাজিনকে

চার্জশিট থেকে জানা গেছে, রাজিনের এক সহপাঠিনীকে প্রায়ই উত্তক্ত করত মুজগুন্নী এলাকার বখাটে ছেলে মো: ফাহিম ইসলাম। এর প্রতিবাদ করায় রাজিনের উপর ক্ষুব্ধ হয় ফাহিম। তাকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করতে থাকে সে। একপর্যায়ে ফাহিম তার বন্ধু বিএম মাজিব হাসান রয়েলের সাথে যোগাযোগ করে। রয়েল আবার মো: মঞ্জুরুল ইসলাম সাব্বিরকে জানায়। অনুষ্ঠানের দিন বিকেলে একবার তার ওপর চড়াও হয় তারা। পরে এলাকার এক বড় ভাইয়ের হস্তক্ষেপে মিমাংসা হয়। রাতে অনুষ্ঠানে বসাকে কেন্দ্র করে রাজিনের সাথে আসামি তামিমের হাতাহাতি হয়। পরে তাকে মঞ্চের পিছনে নিয়ে গিয়ে উল্লিখিত আসামিরা চড় থাপ্পর মারতে থাকে। একপর্যায়ে রয়েল, তুর্য্য, রেফাত ও ফাহিম হাত ধরা মাত্র মো: মঞ্জুরুল ইসলাম ওরফে সাব্বির হাওলাদার কোমর থেকে ছুরি বের করে রাজিনের পেটে ঢুকিয়ে দিলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে আসামিরা পালিয়ে যায়। এরপর রাজিনকে উদ্ধার করে খুমেক হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত রাজিনের মা বলেন, বয়রা এলাকার ডেঞ্জার বয়েজ, গোল্ডেন বয়েজ ও চিপসী বয়েজ নামে কয়েকটি কিশোর গ্যাং রয়েছে। এ গ্যাং এ ২৫ জন করে সদস্য রয়েছে। এ সব গ্রুপের সদস্যদের হাতে নিহত হয়েছে তার সন্তান। তিনি এ হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার চান। তিনি বলেন, আমার মতো আর কোন মায়ের কোল যেন খালি না হয়।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!