জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমনের ৪৬তম শাহাদাত বার্ষির্কী ও জাতীয় শোক দিবস যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সাথে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে পালন করা হয়েছে।
১৫ আগস্ট রোববার সূর্যোদয়ের সাথে সাথে খুকৃবি ক্যাম্পাস ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস সমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। ১৫ আগস্টে নিহত বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারসহ সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় সকাল ৮টায় দৌলতপুর দেয়ানাস্থ দেয়ানা মোহাম্মাদীয়া মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিয়ে কোরআন খতম সম্পন্ন করা হয় এবং সকাল ৯টায় দৌলতপুরস্থ বনিক পাড়া সার্বজনীন পূজা মন্দিরে প্রার্থনা করা হয়।
স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণপূর্বক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ শহীদুর রহমান খানের নেতৃত্বে সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শোক র্যালির পর বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, শিক্ষক সমিতি, নীল দল, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও পৃথক পৃথক ভাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন।
পরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টে নিহত বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল সদস্যসহ অন্যান্য শহীদ সদস্য, জাতীয় চার নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষা শহীদসহ বিভিন্ন আন্দোলনে আত্মত্যাগকারী সকল শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
বেলা ১২টায় খুকৃবি অস্থায়ী ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধুর স্মরণে দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ শহীদুর রহমান খান। প্রধান অতিথি তার বক্তৃতায় বলেন, জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল বাঙ্গালী জাতিকে জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রজ্ঞায়, শক্তি-সাহসে পূর্ণাঙ্গ জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করার। এরই প্রয়াসে নিজের আরাম-আয়েশ, সুযোগ-সুবিধার কথা না ভেবে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন দেশ ও জাতির কল্যাণে। সোনার বাংলা বিনির্মাণে বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য ছিল কৃষি ও শিল্পের বিপ্লব, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচনে সকল প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন। এরই ধারাবহিকতায় কৃষি ব্যবস্থায় গতিময়তা আনয়নের লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারী তিনি কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা প্রদান করেন।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একদল এ দেশীয় কুলাঙ্গাররা, পথভ্রষ্ট বিশ্বাসঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করে। এই দেশের অগ্রগতি-উন্নয়নসহ বাঙালী জাতীর ইতিহাসকে মুছে ফেলে পাকিস্তানী ভাবধারায় দেশকে বাঙালী জাতীয়তাবাদের উল্টো দিকে ঠেলে দেয়ার পায়তারা করেছিলো। কিন্তু যেকোন হত্যার মাধ্যমে মানুষকে দৈহিকভাবে বিদায় দেয়া যায়। কিন্তু তাঁর আজন্ম লালিত স্বপ্ন ও আদর্শকে বিদায় দেয়া যায় না।
ভাইস চ্যান্সেলর আরও উল্লেখ করেন যে, স্বাধীনতা অর্জনের সুবর্ণ জয়ন্তীর ও জাতির পিতার জন্ম শতবাষির্কীতে দেশ, গণতন্ত্র ও সরকারবিরোধী সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের চলমান উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এই মাহেন্দ্রক্ষণে সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করার উদাত্ত আহবান জানান।
আলোচনা সভায় আরও বক্তৃতা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক সারোয়ার আকরাম আজিজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ডাঃ খন্দকার মাজহারুল আনোয়ার, খুকৃবি শিক্ষক সমিতির আহবায়ক এবং এনিম্যাল নিউট্রিশন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোঃ তসলিম হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের আহবায়ক এবং মাইক্রো বায়োলজি অ্যান্ড পাবলিক হেলথ্ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আশিকুল আলম, নীল দলের সদস্য সচিব এবং ফার্ম পাওয়ার অ্যান্ড মেশিনারী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোঃ নজরুল ইসলাম, একোয়াকালচার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোঃ আসাদুজ্জামান, এগ্রোনমি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ইশরাত জাহান আইরিন, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক ইশরাত খান, বিশ্ববিদ্যালয়ের এনিম্যাল নিউট্রিশন বিভাগের প্রভাষক ডাঃ শাহাবুদ্দিন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাহিরুল হক শিলং, কর্মকর্তাদের মধ্যে ভাইস চ্যান্সেলরের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল ইসলাম, প্রটোকল অফিসার শেখ রাশেদুজ্জামান, কর্মচারীদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার অপারেটর উজ্জল দাস।
বঙ্গবন্ধুর স্মরণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠান সঞ্চালনের সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন শিক্ষক সমিতির সদস্য সচিব এবং ফিজিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. এম এ হান্নান।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই কোরআন তেলাওয়াত ও গীতা পাঠের পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টে নিহত বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল সদস্যসহ অন্যান্য শহীদ সদস্য, মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, ভাষা শহীদসহ বিভিন্ন আন্দোলনে আত্মত্যাগকারী সকল শহীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
আলোচনা সভা শেষে খুকৃবি শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে এলাকার কৃষকদের মাঝে গাছের চারা বিতরণ করা হয়। এছাড়া দুপুর দেড়টায় দৌলতপুর দেয়ানাস্থ দেয়ানা মোহাম্মাদীয়া মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিয়ের এতিমদের মাঝে খাদ্য বিতরণ করা হয়।
খুলনা গেজেট/ টি আই